ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুজনে বসে কূজনে কী কথা বলেন?’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া আন্দোলনে নতুন নতুন সূত্র খুঁজছেন। তিনি তার তাড়িয়ে দেয়া ব্যক্তিদের নিয়ে এখন বৈঠক করছেন। গতকাল দেখলাম তিনি লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে বদু কাকার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আমি জানি না বদু কাকা একগুচ্ছ রজনীগন্ধা নিয়ে গিয়েছিলেন কি না। কারণ যখন তাকে বিএনপি থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল তখন তিনি বলেছিলেন, আমি একগুচ্ছ রজনীগন্ধা নিয়ে বের হয়ে গেলাম। তখন খালেদা জিয়া এমন ভাব নিলেন যে, বি চৌধুরী রেললাইন দিয়ে ধাওয়া খেতে খেতে ছেলে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। আজ আবার দুজনে বসে কূজনে কী কথা বলেন?’
শুক্রবার ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আন্দোলন চলার পরও আওয়ামী লীগ দক্ষতার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করেছে। তাই আবার আমরা জয় পেয়েছি। কিন্তু এটা বিএনপি নেতার পছন্দ নয়। তাই তিনি আন্দোলনের নতুন সূত্র খুঁজে বেড়াচ্ছেন।’
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দারিদ্রমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ওয়াদা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধ দেশ হবে এটি। সারা বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। বাংলাদেশের আপামর জনতাকে বলবো সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশকে
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।’
শেখ হাসিনা বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘দেশের মধ্যে সাড়া না পেয়ে তিনি (খালেদা জিয়া) এখন ধরনা দিচ্ছেন বিদেশিদের কাছে। এমন কোনো অ্যাম্বাসি নেই যেখানে তার লোকজন যায় না, অনেক বড় বড় অ্যাম্বাসেডরদের সঙ্গে সপ্তাহে বা পনের দিন পরপর দেখা করেন। তাদের কাছে নালিশ করেন। নালিশ করে তিনি কী পেয়েছেন? বালিশ পেয়েছেন, ভাঙা জুতার বাড়ি খেয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষই তাদের জুতার বাড়ি দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কোথাও ধরনা দিতে যায় না। জনগণের ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে। আর জনগণের হাতে আমরা ক্ষমতা তুলে দিয়েছি। জনগণের ভোটের অধিকার সুরক্ষিত। আজকে যত জায়গাই ধরনা দিক না কেন, যত আশার বানী দিক না কেন বাংলাদেশর মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলতে দেবো না। বাংলাদেশের মানুষ আজ নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘দক্ষতার সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছি বলে আমাদের এতো অর্জন। ৫ বছর সুশাসনে বাংলাদেশ দুর্নীতির কালো তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন করতে পারে এ সম্মান অর্জন করতে পেরেছে। আমাদের এ সম্মান ধরে রাখতে হবে। বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
খালেদা জিয়ার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানিকগঞ্জে খালেদা জিয়া রক্ত আর লাশ চেয়েছেন। কত রক্ত পেলে তার পিপাসা মিটবে। আমার বাবা-মাকে হত্যা করেছে। মানুষকে পুড়িয়ে কাঠ কয়লা করেছে। বিভৎসভাবে মানুষকে হত্যা করেছে। এটাই নাকি তাদের আন্দোলন। বিএনপি নেত্রী নিজে ফেলু তাই অন্যের ছেলে-মেয়েরা ফেলু হোক এটাই তিনি চান। তাই আন্দোলনে তারা ৫৮৩টি স্কুল পুড়িয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মিলিটারি ডিকটেটর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাস একে একে মুছে ফেলতে চেয়েছেন। স্বাধীনতা চেতনাকে ভুলণ্ঠিত করে স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী বানালেন। সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করলেন। ২১ বছর আমরা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আসি। জনগণ প্রথম বুঝতে পারলো সরকার মানে জনগণের সেবা করা। কিন্তু আবার দুভার্গ্য নেমে আসে ২০০১ সালে। যারা আমাদের মা-বোনদের হত্যা করেছে খালেদা জিয়া সেই স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে পতাকা তুলে দিলেন।’
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘ওই জামায়াত আর বিএনপির চরিত্র উন্মোচিত হয়ে গেছে। যতই ছলাকলা করুক না কেন এসব খুনিদের মানুষ আর দেখতে চায় না।’
আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৩ সাল পর্যন্ত আমাদের রিজার্ভ ১৯ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়াতে যাচ্ছে।’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বাঙালি জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। জাতির পিতার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সামনে রেখে জনগণের জন্য কাজ শুরু করে। কিন্তু ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে বিএনপি জোট দেশকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। যুদ্ধাপরাধীদের হাতে তুলে দেয় জাতীয় পতাকা। তাদের অপকর্মের জন্যই ১/১১ এর অবস্থা সৃষ্টি হয়।’ ২০০১ সালে থেকে ২০০৬ বাংলাদেশের মানুষের জন্য কলঙ্কজনক অধ্যায় বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।