রফিক মুয়াজ্জিন : ভারতের সারদা গ্রুপ বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন মৌলবাদী সংগঠনকে অর্থ জুগিয়েছে। সারদা গ্রুপের চেয়ারম্যান সুদীপ্ত সেন ভারতের এক প্রভাবশালী নেতার (বর্তমানে রাজ্যসভার সদস্য) মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য ওই সংগঠনগুলোকে বড় অঙ্কের অর্থ দিয়েছেন বলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে খুবই গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
রোববার ‘সারদা মানি ফুয়েলড ফায়ার এগেইনেস্ট আওয়ামী লীগ গভর্নমেন্ট’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিট ফান্ডের দায়ে অভিযুক্ত সারদা গ্রুপের প্রধান সুদীপ্ত সেন যে শুধু ভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলোকেই অর্থ দেন তা নয়, তিনি জামায়াতে ইসলামীসহ বাংলাদেশের ইসলামী মৌলবাদী দলগুলোকেও অর্থ দিয়েছেন বলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কাছে প্রমান রয়েছে।
খবরে আরো বলা হয়েছে, ভারতীয় তদন্ত সংস্থা সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) এবং এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি) এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে। ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে তথ্য পেয়েছে সিবিআই ।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার ওই এমপির সঙ্গে স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়াসহ (এসআইএমআই) বিভিন্ন ইসলামপন্থি দলের যোগাযোগ রয়েছে। তবে ওই এমপির নাম প্রকাশ করেনি সিবিআই ও ইডির কর্মকর্তারা। সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয় ওই এমপি হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল থেকে নির্বাচিত আহমেদ হাসান ওরফে ইমরান।
সারদা গ্রুপের চিট ফান্ড স্কিমের জন্য সংগ্রহ করা অর্থ পশ্চিমবঙ্গের সল্টলেকে গ্রুপের দপ্তরগুলোতে জমা করা হতো বলে জানতে পেরেছে সিবিআই ও ইডি। সেখান থেকে শত শত কোটি রুপি বাংলাদেশ সীমান্তের বিভিন্ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। ব্যাগে ভরে সারদা গ্রুপের অ্যাম্বুলেন্সে করে এ অর্থ পরিবহন করা হয়েছে।
সেখানে কলকাতার এক ব্যক্তির মালিকানাধীন ফরেন কারেন্সি কনভার্টার সেন্টারে গোপনে বাংলাদেশি ও ইউরোপীয় মুদ্রা সংগ্রহ করা হয়। সশস্ত্র চরমপন্থিরা রাতের আঁধারে এসব টাকা ও ইউরোপীয় মুদ্রা বাংলাদেশে নিয়ে আসে।
গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, সারদা গ্রুপ এর আগেও ভারতীয় নাগরিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হাজার হাজার কোটি রুপি এভাবেই বাংলাদেশে ভারতবিরোধী জঙ্গি দলগুলোকে দিয়েছে। এসব অর্থের বেশিরভাগ পেয়েছে জামায়াতে ইসলামী। সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছেন, আহমেদ হাসানের সঙ্গে ইসলামী মৌলবাদী দলগুলোর কয়েক দশক ধরে যোগাযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আজিত দোভাল এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরকে জানানো হয়েছে।
সিবিআইর সাবেক বিশেষ পরিচালক ধানেশ চন্দ্র নাথ জানান, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার দলের নেতা আহমেদ হাসানের কার্যক্রম সম্পর্কে জানেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০০১ সালে স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়াকে নিষিদ্ধ করার সময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন।
আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে যুক্ত হন আহমেদ হাসান। সংগঠনের পশ্চিমবঙ্গ শাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাকে। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামী হিন্দ-এর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পেয়েছিলেন তিনি। আবুধাবিভিত্তিক ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) সঙ্গে স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্টের যোগাযোগ ছিল। আইডিবির পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন আহমেদ হাসান। আহমেদ হাসানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের ছেলে আবদল্লাহিল মামুন আল আযমী। তার মাধ্যমে অনেক লেনদেন হয়েছে বলে সন্দেহ করছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
তথ্যসূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।