প্রথম তিন পর্বের মতো উপজেলা পরিষদের চতুর্থ পর্বের নির্বাচনেও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী নিয়ে মাঠপর্যায়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে অস্বস্তি রয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় জামায়াতের প্রার্থীর কারণে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের মধ্যেও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এর মধ্যে তিনটি উপজেলায় সমঝোতা হলেও ১২টিতে ১৯-দলীয় জোটের প্রধান দুই শরিকের প্রার্থীরা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন।
আগামীকাল রোববার চতুর্থ ধাপে ৯২টি উপজেলায় নির্বাচন হবে। এর মধ্যে ১৫টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের প্রার্থী রয়েছে। এ ছাড়া পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫৩ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১২ জনকে সমর্থন দিয়েছে দলটি। এর মধ্যে কেবল তিনটি উপজেলায় স্থানীয়ভাবে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সমঝোতা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। এই তিনটি উপজেলা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি ও পিরোজপুরের জিয়ানগরে বিএনপি চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দেয়নি।
নাইক্ষ্যংছড়ি ও পাঁচবিবিতে বর্তমান চেয়ারম্যানরা জামায়াত-সমর্থিত। আর জিয়ানগরে জামায়াত প্রার্থী করেছে মাসুদ সাঈদীকে।
তিনি একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে। বাকি যে ১২টি উপজেলায় জামায়াত প্রার্থী দিয়েছে সেগুলো হচ্ছে পাবনার ঈশ্বরদী, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর, যশোরের কেশবপুর, সাতক্ষীরার কলারোয়া, পটুয়াখালীর দুমকী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, ফেনীর সোনাগাজী, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, বাঁশখালী, সাতিকানিয়া, কক্সবাজারের রামু ও কুতুবদিয়া। এসব এলাকায় বিএনপি মনে করে তাদের দলীয় অবস্থান অনেক ভালো। তাই তারা জামায়াতকে ছাড় দিতে রাজি হয়নি। একইভাবে অনড় জামায়াতও।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, জামায়াতের প্রার্থিতা নিয়ে কোনো কোনো জায়গায় বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে যশোরের অধিকাংশ উপজেলায় জামায়াত প্রার্থী দিয়ে বিএনপির প্রার্থীদের বিপাকে ফেলেছে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।
আগামীকাল অনুষ্ঠেয় কেশবপুর উপজেলায়ও জামায়াতের প্রার্থী আছে। সেখানে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী বদরুজ্জামান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের আত্মীয়।
একইভাবে কক্সবাজার জেলায়ও বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের তেমন সমঝোতা হয়নি। এর ফলে কক্সবাজারের আট উপজেলার সাতটিতেই দুই দল আলাদা প্রার্থী দিয়েছে। এ জেলার যে তিনটি উপজেলা নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে পেকুয়ায় জামায়াত প্রার্থী দেয়নি। কেবল সেটিতে বিএনপি জিতেছে। বাকি দুটিতে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীরা জিতেছেন। আগামীকাল রামু ও কুতুবদিয়ায় ভোট গ্রহণ হবে। এ দুই উপজেলায়ও উভয় দলের প্রার্থী আছে।
জানতে চাইলে কক্সবাজারে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির নির্বাচনী সমন্বয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানান বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখানে জামায়াতের ভোটের ওপর নির্ভর করি না। সুষ্ঠু নির্বাচন হলেই বিএনপির প্রার্থীরা জিতবেন। তাই জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে কোনো চেষ্টা বা চাপ নেই।’
এদিকে বিএনপির স্থানীয় নেতারা অভিযোগ করেন, কুতুবদিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী মন্জুর আলমকে জেতানোর জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবহার করছেন। ওই কর্মকর্তা মন্জুর আলমের আপন ভাতিজা। ওই কর্মকর্তা ভোটের দিন কুতুবদিয়ায় পর্যটন এলাকা পরিদর্শন করার কথা রয়েছে।
এদিকে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা না হওয়া বা এনিয়ে মাঠপর্যায়ে বিএনপির অসন্তোষের অভিযোগের বিষয়ে জামায়াতের নেতারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ।
অবশ্য এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের শুরু থেকেই প্রার্থিতা নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে স্থানীয়ভাবে টানাপোড়েন চলে আসছে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বের নির্বাচনে যথাক্রমে ২৬, ২৮ ও ২৪টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দেয় জামায়াত। তৃতীয় পর্বে এসে এ টানাপোড়েন অনেক বেড়ে যায়। ১৫ মার্চ তৃতীয় পর্বে যে ৮১টি উপজেলার ভোট গ্রহণ হয়, তাতে ২২ উপজেলায় বিএনপির প্রার্থীর সঙ্গে জামায়াতের প্রার্থীও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।