বিএনপির অনেক ত্রুটি রয়েছে স্বীকার করে গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বর্তমানে দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত দুঃসময় চলছে বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন।
তিনি বলেছেন, ”আমাদের অনেক ত্রুটি রয়েছে। অনেকদিন ধরে আমরা বিরোধী দলে আছি। আন্দোলনে হয়তো সেভাবে সফলতা অর্জন করতে পারিনি। তবে প্রতিটি আন্দোলনেও উত্থান-পতন থাকে। আশার কথা, জনগণ জেগে উঠছে। তাই এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য।” শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার হলে এক প্রতিবাদী আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ফখরুল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কলামিস্ট ফরহাদ মজহার, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাংবাদিক শফিক রেহমান, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ”সাংবাদিক সমাজ আজ বিভক্ত। এতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে সরকার। কারণ, সাংবাদিকরা বিভক্ত হওয়ায় আজ তারা সাংবাদিকদের স্বার্থেও কথা বলতে পারছেন না। এটি জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক।”
তিনি আরও বলেন, ”শুধু সাংবাদিক সমাজ নয়, এই সরকার গোটা জাতিকেই আজ বিভক্ত করে ফেলেছে। দেশ ও জাতির জন্য আজ অত্যন্ত দুঃসময়। মানুষের কোনো ধরনের অধিকার নেই। কথা বলা, লেখা ও ভোট দেওয়াসহ মানুষের সব অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এসব অধিকার ফিরে পেতে ও হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। তাই নিজেদের ছোট-খাট দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে দেশ ও জাতীয় স্বার্থে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বর্তমান সময়ে এটিই সবচেয়ে জরুরি।”
তিনি সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ সকল সাংবাদিক এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম কে আনোয়ারসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি দাবি করেন।
ফরহাদ মজহার বলেন, ”দেশ ও জাতির সামনে কখনো কখনো রাজনৈতিক রূপান্তরের ঐতিহাসিক মুহূর্ত হাজির হয়। সেই মুহূর্ত ব্যবহার করতে রাজনৈতিক দূরদর্শিতার প্রয়োজন হয়। কিন্তু বিএনপির সেই দূরদর্শিতা নেই। সেজন্য ৫ জানুয়ারি ওই রকম একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হাজির হলেও দলটি তা ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়। তাই সব দোষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর চাপালে হবে না।”
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ”বর্তমানে দেশে ফ্যাসিস্ট সরকার ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা বিদ্যমান। কিন্তু জনগণ এর বিরুদ্ধে। তারা গণতান্ত্রিক সরকার ও রাষ্ট্রব্যবস্থার পক্ষে। এজন্য আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
গণতন্ত্রকে ‘পরশমণি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে সভাপতির বক্তব্যে ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ”২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। দেশ ও জাতীয় স্বার্থে সেই হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতেই হবে। এ জন্য জাতীয় পর্যায়ে সচেতনভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়া অত্যন্ত জরুরি। অন্যথায় কোনোকিছু লাভ করা সম্ভব হবে না।”
