আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে নতুন কৌশলে এগোনোর পরিকল্পনা নিয়েছে ২০ দলীয় জোট। মিছিল-সমাবেশের মাধ্যমে ঢাকাসহ সারাদেশে শো-ডাউনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
গত ৫ জানুয়ারি নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি না পেয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ চলছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ইস্যুতে চলছে হরতাল।
অপরদিকে সরকারের তরফ থেকে প্রতিনিয়ত বলা হচ্ছে বিরোধীদলের আন্দোলনের প্রতি জনসমর্থন নেই। এটা কোন গণআন্দোলন নয়।
এরই আলোকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে বলেছেন, বিএনপি সমাবেশ করতে চাইলে তাদেরকে অনুমতি দেওয়া হবে। সমাবেশের অনুমতি দিয়ে বিএনপি জোটকে আন্দোলন থেকে সরানোর জন্য সরকার কৌশলে চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।
২০ দলের একটি সূত্র জানায়, তারা সরকারের কোন ফাঁদে পা দেবে না। সভা-সমাবেশের জন্য অবরোধ প্রত্যাহার করা হবে না। অনুমতি না পেলে সে ক্ষেত্রে কোন কিছুর তোয়াক্কা করা হবে না বলে জানান তিনি।
তারা মনে করছেন, আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকার গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সংলাপের উদ্যোগ নিতে বাধ্য হবে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট চলমান আন্দোলন সফলতার দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছে। তাদের মতে বিএনপির শীর্ষ নেতাকে ‘বিচ্ছিন্ন’, সিনিয়র নেতাদের কারাবন্দী, হামলা-মামলা, গুম, খুন, ক্রসফায়ার, ট্রাক-বাসের চাপায় মেরে ফেলার হুমকির মধ্যেও আন্দোলন ৪৫ দিন পেরিয়ে গেছে। সারাদেশ থেকে এখন ঢাকা বিচ্ছিন্ন। এতদিন রাজপথে টিকে থাকাটাই প্রথম সফলতা বলে মনে করছে জোটের নেতারা।
এছাড়াও তাদের দাবির প্রতি সুশীল সমাজ ও বহিঃর্বিশ্বের সমর্থন সফলতার আরেক দিক বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের এ আন্দোলন শুরুর মূল লক্ষ্য ছিলো, নতুন নির্বাচনের জন্য সরকারের কাছ থেকে ‘সংলাপ’ আদায় করা। দেশ-বিদেশে দাবির যৌক্তিকতা ও অপরিহার্যতা পেয়েছে বলেও ২০ দলের নেতারা মনে করছেন।
জোট নেতারা দাবি করেন, বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে আলোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে কূটনৈতিক মহলে। এতো কিছুর পরও সরকার সংলাপের পথে যাচ্ছে না। এই আন্দোলনে জনসমর্থন নেই বলে বিভিন্ন মহলে নানা রকমের অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করছে সরকার। আন্দোলনে গণজোয়ার আনতে ২০ দলীয় জোট রাজপথে শো-ডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। গণজোয়ারের মুখে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটবে বলে মনে করছেন ২০ দলের নেতারা।
লাগাতার কর্মসূচিতে প্রতিদিনই হত্যা, গ্রেফতার-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা। তাই ২১ ফেব্রুয়ারির পরই চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার উপযুক্ত সময় বলে মনে করছে ২০ দলের নেতারা।
সভা-সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণাসহ চলমান আন্দোলন এবং রাজনীতির সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে যেকোন সময় সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া ইউংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান শীর্ষ নিউজকে বলেন, খুব শিগগিরই ২০ দলের ডাকা চলমান আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হবে। চলমান আন্দোলনকে আরো বেগবান ও চূড়ান্ত রূপ দিতে এর সাথে মিছিল, সমাবেশ, শো-ডাউনসহ ঘেরাও কর্মসূচিও আসতে পারে।
তিনি আরো বলেন, এসব কর্মসূচি ঘোষণা করতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন অথবা বিবৃতিও দিতে পারেন।
এদিকে সর্বোচ্চ প্রতিকূল পরিস্থিতি আসলেও সেটা মোকাবেলার ছক তৃণমূল নেতাদের হাতে আগেই দিয়েছেন শীর্ষ নেতারা। সেই নির্দেশনা অনুযায়ীই তৃণমূল নেতাকর্মীরা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে সফল করতে হরতাল-অবরোধের মধ্যেও আরো যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জীবন বাজি যা তা বাস্তবায়ন করবে বলে ২০ দলের নেতারা মনে করছেন।