প্রধানমন্ত্রীর কঠোর অবস্থান মানুষ পুড়িয়ে মারার বিচার হবেই –

0

032625Pic-13আন্দোলনের নামে সহিংসতায় যুক্ত বিএনপির নেতাকর্মীদের বিচারে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিএনপির অভিযোগ, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে। এ কিসের মামলা? এটা তো অন্য কোনো কারণে না। যারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, যারা হুকুমদাতা, যারা অর্থ প্রদান করেছে, সবার বিচার বাংলার মাটিতে হবে। মামলা মামলা করে চিৎকার করলে হবে না। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুনি খুনিই। খুনিদের বিচার বাংলার মাটিতে হবেই। তাদের কেউ রক্ষা করতে পারবে না। সেটাই আমাদের কথা।

তারা মানুষ হত্যা করেছে, এতিমের টাকা মেরে খেয়েছে, বিদেশে টাকা পাচার করেছে, জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে। তাদের বিচার হবে না? এটা হতে পারে না।’

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পুনর্বাসন করেছিলেন জিয়াউর রহমান। তাঁর ধারাবাহিকতায় যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়ে সম্মান দিয়েছেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। যুদ্ধাপরাধীর গাড়িতে লাখো শহীদের রক্তে ভেজা পতাকা তুলে দিয়েছিলেন। আজকে যখন সেই যু্দ্ধাপরাধীর বিচার হয়েছে, ফাঁসি কার্যকর হয়েছে তখন দেশবাসীর কাছে খালেদা জিয়া কী জবাব দেবেন? যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনের দায়দায়িত্ব খালেদা জিয়াকে নিতে হবে। বাংলার মাটিতে এর বিচারও হবে।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর জিয়া-এরশাদ যাঁরাই ক্ষমতায় এসেছেন, তাঁদের সরকার অবৈধ। এটা হাইকোর্টের রায়। রায়ে বলা হয়েছে, জিয়াউর রহমান ও এরশাদের ক্ষমতা দখল অবৈধ ও অসাংবিধানিক। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দাবি করতে পারেন না। এটা দেশবাসীকেও ভুলে গেলে চলবে না। বিশেষ করে যাঁরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিশ্বাস করেন, উচ্চ আদালতের রায়কে সম্মান করেন। অবৈধভাবে যাঁরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে দল গঠন করেন তাঁদের দলও অবৈধ। আজকে দুঃখ লাগে কাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়, যে দলটির জন্মই অবৈধভাবে। আগে ক্ষমতা দখল, পরে দল গঠন। সেই দলের নেতারা আমাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞা শেখান। তাঁরা গণতন্ত্র সঠিকভাবে বানান করতে পারবেন কি না সেটাই সন্দেহ।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘২১ বছর বাংলাদেশকে উল্টো দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার পর দেশের উন্নয়ন শুরু হয়। জাতির পিতা হত্যার বিচার শুরু করি। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর রায় কার্যকর করি, যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু করি। দেশকে অভিশাপমুক্ত করার চেষ্টা করি। যতই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি ততই দেশ অভিশাপমুক্ত হচ্ছে। লাখো শহীদের অর্জন ব্যর্থ হতে পারে না। এটি আমাদের জীবনপণ, লাল-সবুজ পতাকা সবার ঊর্ধ্বে থাকবে। রক্ত দিয়ে হলেও এর মর্যাদা রক্ষা করব আমরা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা মনে করলে হবে না, আজকের অর্থনৈতিক উন্নতি আমরা খুব সহজে আনতে পেরেছি। পদে পদে বাধা, ষড়যন্ত্র হয়েছে। অনেক বন্ধুর পথ অতিক্রম করেই আমাদের এই জায়গায় পৌঁছতে হয়েছে। আমরা জানি, এই দেশকে নিয়ে অনেক খেলা, অনেক কথা। কিন্তু আমরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে দেশ চালাই। কারণ এই দেশ আমরা স্বাধীন করেছি। এই দেশকে উন্নত করা, সমৃদ্ধ করা আমাদের কর্তব্য। ২১ বছর নষ্ট হয়ে গেছে। আর একটা দিন, একটা ঘণ্টাও নষ্ট করতে চাই না। বাংলাদেশের উন্নয়ন লক্ষ্যযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে চাই। সেভাবে চিন্তা করেই সংগঠন করতে হবে। যাঁরা আওয়ামী লীগে ও সহযোগী সংগঠনে আছেন, সেভাবেই চিন্তা করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হবে। বাঙালি সব রকম অসাধ্যই সাধন করতে পারে। বঙ্গবন্ধু সে সময়ই বলেছিলেন, বাংলাদেশের মতো একটি উর্বর দেশ, যেখানে বীজ ফেললেই গাছ হয়, সে দেশে কেন মানুষ না খেয়ে থাকবে। তবে দেশে কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা থাকেন বাংলাদেশে, স্বপ্ন দেখেন পাকিস্তানের। তাঁদের বুকে পেয়ারে পাকিস্তান। কিন্তু সাবধান করে দিতে চাই, বাংলাদেশ নিয়ে অনেক খেলাধুলা হয়েছে। আর না, কাউকে বাংলাদেশের জনগণকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা আমরা বৃথা যেতে দেব না। সেভাবেই আমরা কাজ করব।’ প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে এ দেশের স্বাধীনতায় অবদানের জন্য ভারত ও রাশিয়াকে ধন্যবাদ দেন।

বিকেল ৩টায় আলোচনা সভা শুরুর কথা থাকলেও দুপুর ১টার মধ্যেই নেতাকর্মীরা সভাস্থলে মিছিল নিয়ে এসে জমায়েত হয়। দুপুর ২টার পর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের সভাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেলে গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখনো রাজধানীর বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ড থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল খামারবাড়ীর দিকে আসতে দেখা যায়। ভেতরে ঢুকতে না পেরে অনেক নেতাকর্মী মিলনায়তনের আশপাশের এলাকায় দাঁড়িয়ে বক্তব্য শোনে।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। বক্তব্য দেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, উপপ্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রমুখ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More