জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণে মুমূর্ষু বাকশালের আর্তনাদ শুনতে পেয়েছে ২০ দলীয় জোট শরিক জাগপা। তবে এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি শরিকের প্রধান দল বিএনপি। বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে বলে জানিয়েছে দলটি। সরকারের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেন, ‘একটি রাষ্ট্রের বৈধ নাগরিক হিসেবে একটি অবৈধ সরকারের দুই বছরের হিসাব-নিকাশ আমাকে শুনতে হচ্ছে। এটিই আমার রাজনৈতিক জীবনের বড় লজ্জার ঘটনা।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কিছু কথা বলেছেন। এটি উনি বলতেই পারেন। তবে মুক্তিযুদ্ধের যে জগত সেই জগতের কোথাও উনার পদচারণা ছিল না। তাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অন্যদের কটাক্ষ করার কোনো সুযোগ উনার নেই।’ জাগপা সভাপতি বলেন, ‘ষোল সালেরই খবর নেই। উনারা একুশ, একচল্লিশের কথা বলছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণে মুমূর্ষু বাকশালের আর্তনাদ শুনতে পেয়েছি।’ সরকারের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের শাসনামলেও অনেক উন্নয়ন হয়েছিল। সেইজন্য কি আমরা তাদের শাসনামলে ফিরে যেতে চাইব? দেশ স্বাধীন করেছি, আমাদের সরকার আমরা গড়ব। আমাদের দেশ আমাদের কথামতো চলবে। এসব উন্নয়নের কল্পকাহিনী হচ্ছে ঔপনিবেশিক শক্তির সরকারের প্রচারণা। এটি কোনো স্বাধীন দেশের সরকারের প্রচারণা হতে পারে না।’ প্রধানমন্ত্রীর ওই ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলামেইলকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের কপি এখনো হাতে পাইনি। হাতে পেলেই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলামেইলকে বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আগামীকাল (বুধবার) এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন। সুতরাং এ ব্যাপারে এখন আমি কিছু বলব না।’ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু তার প্রতিক্রিয়ায় বাংলামেইলকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে যদি তার বিশ্বাস থাকে তাহলে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধা কোথায়? ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে, এ দেশের জনগণের ওপর আওয়ামী লীগের কোনো আস্থা নেই। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সেটা আবারও প্রমাণ করেছে।’ সরকারের উন্নয়ন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে দুদু বলেন, ‘এতো বক্তৃতা-বিবৃতি না দিয়ে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। তাই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারই এখন সবচেয়ে জরুরি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হলে এমনিতেই উন্নয়ন হবে।’ বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার হায়দার আলী বাংলামেইলকে বলেন, ‘গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে জলাঞ্জলি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের কথা বলছেন। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন বলতে যেটা বুঝায় সেটা গত দুই বছরে হয়নি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারই সবচেয়ে জরুরি।’ বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বাংলামেইলকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য গতানুগতিক ও চর্বিত চর্বণ, জাতির জন্য নতুন কোনো দিক-নির্দেশনা নেই। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়ও কোনো নির্দেশনা নেই। সমগ্র জাতির আকাঙ্ক্ষিত অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন নিয়েও নেই কোনো প্রতিশ্রুতি। সুতরাং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ
জাতিকে হতাশ করেছে।’ বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান বাংলামেইলকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য গতানুগতিক। অতীতেও প্রধানমন্ত্রিদের বক্তব্যে শুধু উন্নয়নের কথাই তুলে ধরা হয়েছে। সদ্য অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচন অতীতের সকল নির্বাচনের চেয়ে সুষ্ঠু হয়েছে- মর্মে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে যে দাবি করেছেন তাতে প্রমাণিত হয়, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনসহ বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি।’ তবে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের অধিকাংশ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শোনেননি।
Prev Post
Next Post