সরকারে থাকা না থাকা নিয়ে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদ ও সরকারের মন্ত্রীসভা থেকে সরে আসার বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চেয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ। আজ রোববার এ তথ্য জানিয়ে পার্টির নতুন কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, মন্ত্রীসভা ছাড়ার বিষয়ে এরশাদ এবং রওশন একমত হয়েছেন। মন্ত্রীসভা ছাড়ার বিষয়টি জনগণের চাহিদা। প্রকৃত বিরোধী দলের ভূমিকা পালনের স্বার্থে আমাদের জনগণের চাহিদার আলোকে কাজ করতে হবে। সরকারের বিপক্ষ হয়ে জনগণের পক্ষে কথা বলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী সময় দিলে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা ছাড়া এ ধরণের ‘স্পর্শকাতর’ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়া সমীচীন হবে না। এদিকে বিরোধী দলীয় নেতা এবং জাতীয় পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদের দেয়া আজ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত বিবৃতির বিরোধীতা করে পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ বলেছেন, তার নেয়া সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনার কোনো সুযোগ নেই। গঠনতান্ত্রিকভাবেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে ফলে জাতীয় পার্টিতে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। দলের মধ্যে কোনো বিবোধ বা অনৈক্য নেই। পার্টি আগামীতে সাংগঠনিকভাবে আরো শক্তিশালী হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে পার্টিকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হবো। আপনি সংসদীয় দলের নেতৃত্বে আছেন, আমি পার্টির নেতৃত্বে আছি। আমাদের উভয়ের মিলিত প্রচেষ্টায় জাতীয় পার্টি আগামী দিনে এগিয়ে যাবে। গতকাল রওশনকে লেখা এক পত্রে এরশাদ এসব কথা বলেছেন। অপরদিকে আজ চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে জিএম কাদের বলেন, মন্ত্রীসভা ছাড়ার বিষয়টি জনগণের চাহিদা। প্রকৃত বিরোধী দলের ভূমিকা পালনের স্বার্থে আমাদের জনগণের চাহিদার আলোকে কাজ করতে হবে। সরকারের বিপক্ষ হয়ে জনগণের পক্ষে কথা বলতে হবে। তবে আলোচনা ছাড়া কোনও সিদ্ধান্ত নেয়া সমীচীন হবেনা। পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পদ নিয়ে রওশনের বিরোধীতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি যেহেতু পার্টির সিনিয়র নেতা। পার্টিতে তার অনেক বেশি ত্যাগও আছে। তাই উনার (রওশন) বক্তব্যে আমি পজেটিভলি দেখছি। উনি যেকোনো মতামত দিতেই পারেন। এটা গণতান্ত্রিক চর্চা। এজন্য আমি দলের চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেছি প্রেসিডিয়াম, এমপি ও পার্টির অন্যান্য ফোরামে একটা যৌথসভার মাধ্যমে এটা নিয়ে আলোচনা করা। যদি সেখানে সিংহভাগ লোক আমাকে না চান, তাহলে আমি এ পদে থাকবো না। এ সময় তার কো-চেয়ারম্যান হওয়ার বিষয়ে রওশনের সম্মতি ছিল জানিয়ে জিএম কাদের বলেন, তিনি নিজেই বলেছেন এ ধরনের একটা পদে তোমাকে আনা প্রয়োজন। এটা কিন্তু তিনি এখনও অস্বীকার করেননি। রওশনকে লেখা পত্রে এরশাদ বলেছেন, প্রিয় সহকর্মী-আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণ করবেন। ২৩ জানুয়ারি শনিবার মিডিয়ায় পাঠানো আপনার একটি বিবৃতির প্রতি আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। সেখানে আপনি দু’টি বিষয়ের উপর আলোকপাত করেছেন। প্রথমত: সম্প্রতি পার্টিতে জি.এম. কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব প্রদান এবং মহাসচিব পদে রদবদলের বিষয়টি পুনঃবিবেচনার আহবান জানিয়েছেন। দ্বিতীয়ত: বিগত মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু যে, আপনাকে ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যন’ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন- তা আপনি নাকচ করেছেন। দ্বিতীয় বিষয়ের ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’ বিভ্রান্তি দূর করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। প্রথম প্রসঙ্গের বিষয়টি আপনাকে স্পষ্ট করতে চাই। জি.এম. কাদেরকে পার্টির কো-চেয়ারম্যান করার ব্যাপারে আপনারও সম্মতি ছিল। কো-চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির কোনো গঠনতান্ত্রিক পদ নয়। পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে সংগঠনের প্র
য়োজনে আমি কোন পদ সৃষ্টি বা কাউকে কোনো বিশেষ দায়িত্ব দিতে পারি। আমি গঠনতন্ত্রের বহির্ভূত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রে যা রয়েছে- সেটাই আমাদের পার্টির গঠণতন্ত্র। ৩৯ ধারাটি তারই অংশ। এই ধারাটি আমার সৃষ্টি করা নয়। গঠনতন্ত্র আমি নিজে প্রণয়ন করিনি। এটি একটি কমিটি প্রণীত এবং পার্টির জাতীয় কাউন্সিল অনুমোদিত। ৩৯ ধারা যদি সংশোধন বা বাতিল করতে হয় তা শুধু পরবর্তী কাউন্সিলেই হতে পারে। তার আগে গঠনতন্ত্রের কোনো ধারা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা হবে- গঠনতন্ত্রের অবমাননা, পার্টি শৃঙ্খলার পরিপন্থি’ এবং দলীয় গণতন্ত্রের প্রতি অবজ্ঞা। মহাসচিব পদে রদবদল প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, জিয়াউদ্দিন বাবলুকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। তিনি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে মিডিয়ার কাছে আপনাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন। এটা ছিল দলকে বিভক্ত করার একটি ঘৃন্য ষড়যন্ত্র। সে কারণে, বাবলুকে যে ধারামতে তাকে মহাসচিব করা হয়েছিল- সেই ৩৯ ধারাতেই অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আপনার নিশ্চয় জানা আছে, জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠার পরবর্তীতে যে ক’জন মহাসচিবের দায়িত্ব লাভ করেছেন- তারা প্রথমে এই ধারা মতেই নিয়োগ লাভ করেছেন। পরবর্তীতে কাউন্সিলের মাধ্যমে তারা মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথমে এই ধারার বিষয়বস্তু ৪৬ ধারার অন্তর্গত ছিল। সর্বশেষ কাউন্সিলে সংশোধনীর মাধ্যমে এটি ৩৯ ধারায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। যে, দু/একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য এখন ৩৯ ধারা নিয়ে বিতর্ক করছেন তারাও কিন্তু এই ৩৯ ধারা মোতাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন। বলা প্রয়োজন যে, অধিকাংশ প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং প্রথম মহাসচিব বাদে সকল- মহাসচিবই কোনো না কোনো সময়ে এই ধারা বলে দায়িত্ব লাভ করেছেন। তখন কিন্তু এই প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো প্রশ্ন আসেনি। তিনি বলেন, সংসদীয় কমিটি দলীয় নীতি-নির্ধারণের কোনো শাখা নয়। একমাত্র প্রেসিডিয়ামেরই পার্টির নীতি-নির্ধারণের এবং কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহন বা অনুমোদনের এখতিয়ার রয়েছে। সুতরাং দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা বাস্তবায়নের ব্যাপারে প্রেসিডিয়াম বাদে অন্য কোনো শাখার মতামত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা নেই। আপনি পার্টির একজন শীর্ষ নেতা এবং সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে পার্টির চেয়ারম্যানের কাছে কোনো বিষয়ে আবেদন, নিবেদন কিংবা বিবেচনার আহবান জানাতেই পারেন। সেটা আপনার সাংগঠনিক অধিকার। তবে পার্টির স্বার্থে বিবৃতিতে উল্লেখিত আপনার প্রস্তাবটি বিবেচনা করতে পারলাম না বলে দুঃখিত। আশা করি আপনিও পার্টির সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করবেন। আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, পার্টির মধ্যে কোনো বিভেদ বা অনৈক্য থাকবেনা। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে পার্টিকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হবো। আপনি সংসদীয় দলের নেতৃত্বে আছেন, আমি পার্টির নেতৃত্বে আছি। আমাদের উভয়ের মিলিত প্রচেষ্টায় জাতীয় পার্টি আগামী দিনে এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।