[ads1]জামায়াতে ইসলামীকে ছেড়ে দিলেই বিএনপির সঙ্গে সরকারি জোটের সমঝোতা বা জাতীয় ঐক্য হয়ে যাবে—এমনটা ভাবছে না আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা মনে করছেন, বিএনপি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে জোট ভারী এবং রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে জঙ্গিবাদ দমনের চেয়ে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য চাপ প্রয়োগই তাদের মূল লক্ষ্য। এই অবস্থায় সরকারও জঙ্গিবাদ নির্মূলে জোট ভারী করার চেষ্টা করছে। এরই অংশ হিসেবে বিএনপির জোটের বাইরে থাকা বাকি সব দলের লোকজনকে নিয়ে সারা দেশে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আটজন নেতার সঙ্গে কথা বলে দলটির এই চিন্তা ও উদ্যোগের কথা জানা গেছে। তাঁরা বলেন, জামায়াত ছাড়লেই বিএনপির সব বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে, এমনটা নয়। তখন প্রশ্ন আসবে, তাহলে বিএনপি কি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ও বর্তমান সরকারকে মেনে নিচ্ছে? আর সরকারকে মেনে নিলে সংবিধান অনুযায়ী ২০১৯ সালে নির্বাচন হবে, এটাও মেনে নিতে হবে। একই সঙ্গে ২০১৩-২০১৫ সালে জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের বিষয়েও বিএনপিকে ভুল স্বীকার করতে হবে। এসব রাজনৈতিক হিসাব চুকে যাওয়ার পর বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভূমিকা কী হবে, সেটাও সামনে চলে আসবে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, তারা মনে করে, বিএনপিতে জামায়াত ছাড়ার আওয়াজ উঠেছে জঙ্গিবাদের বদনাম ঘোচানোর জন্য। তবে জামায়াতকে পুরোপুরি ছাড়বে না। দেশে-বিদেশে জঙ্গিবিরোধী যে মনোভাব তৈরি হয়েছে, তা থেকে বিএনপি রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চায়। এ জন্য জাতীয় ঐক্যের উদ্যোগের নামে সরকারবিরোধী বিভিন্ন দলকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গিবিরোধী একটি জাতীয় সম্মেলন করার পরিকল্পনা করছে। তাতে হয়তো জামায়াতকে ডাকবে না, তবে সম্মেলনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে নামানোর বিষয়টিও আলোচনায় আসবে। এই অবস্থায় বিএনপির আহ্বানে সাড়া দিয়ে দলটিকে রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের সুযোগ দিতে রাজি নয় সরকার ও আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি তাদের কাছাকাছি মনোভাবের লোকজনের সঙ্গে ঐক্য করছে, করুক। আওয়ামী লীগও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের নিয়ে ঐক্য করে এগিয়ে চলেছে। শান্তির জন্য কাজ করতে চাইলে যে কেউ যেকোনো ভুবনে দাঁড়িয়ে করতে পারে। তিনি বলেন, বিএনপির ঐক্যের ডাক বা জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে, আওয়ামী লীগের অবস্থা এতটা খারাপ হয়ে যায়নি। আওয়ামী লীগ নিজের লক্ষ্যপূরণে কাজ করছে, বিএনপির নয়।
জামায়াত ত্যাগের বিষয়ে বিএনপির ভেতরে যে আলোচনা উঠেছে, সে প্রসঙ্গে মতিয়া চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়া সরাসরি বলেছেন, ছাত্রদল ও শিবির একই মায়ের সন্তান। ছেলেকে কীভাবে ছাড়ে, এটা এখন দেখার বিষয়।
সরকারের অপর একজন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, জঙ্গিবাদ নির্মূলের দায়িত্ব সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট ও সমমনারা মাঠে আছে। এর বাইরে বিএনপিসহ অন্য দলগুলোকে পাশে পেলে ভালো। কিন্তু জঙ্গিবাদবিরোধী কনভেনশনে সরকারের পতন বা নির্বাচন দাবি করে বসলে রাজনৈতিক সমঝোতার ধারণা সেখানেই শেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, বিএনপি তাদের জোট ভারী করার চেষ্টা করছে। জামায়াতকে বাদ দিয়ে জোট ভারী করতে পারলে দেশে-বিদেশে দৃষ্টি আকর্ষণ করার সুযোগ পাবে। আওয়ামী লীগও নিজেদের জোট ভারী করার চেষ্টায় আছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাড়া, মহল্লা ও গ্রামপর্যায়ে যে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি করার কথা বলেছেন, তাতে গণতান্ত্রিক সব দলের নেতা-কর্মীদের রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। ১৪ দলের জঙ্গিবিরোধী সমাবেশে নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাশনালিষ্ট অ্যালায়েন্সকে (বিএনএ) রাখা হয়েছে।[ads1]
ওই মন্ত্রী আরও বলেন, জঙ্গিবাদবিরোধী বিষয় সামনে নিয়ে বিএনপি যে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে, তা কিছুটা হলেও আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। কারণ, আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতারা এর আগে বিভিন্ন সময়ে বলেছিলেন, জামায়াতকে ত্যাগ করলে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। এই অবস্থায় জামায়াতকে বাদ দিয়ে ড. কামাল হোসেনসহ জ্যেষ্ঠ রাজনীতিকদের নিয়ে একটা জাতীয় কনভেনশন করতে পারলে রাজনৈতিকভাবে তারা সুবিধাজনক অবস্থায় চলে যাবে। আর এই সম্মেলন সফল হলে মাঠে কর্মসূচি নিয়েও নামতে পারে বিএনপি।
বিএনপির জাতীয় ঐক্যের আহ্বানের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় ঐক্যের আগে রাজনৈতিক ঐক্য দরকার। কিন্তু বিএনপি স্বাভাবিক কর্ম-সম্পর্কই নষ্ট করে ফেলেছে। তাদের সঙ্গে ঐক্য হয় কীভাবে? আর জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তো দেশে ঐক্য আছেই।
বিএনপি যদি জামায়াতকে ত্যাগ করে, তখন আওয়ামী লীগের অবস্থান কী হবে, জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেখি, ওরা জামায়াতকে ত্যাগ করে কি না। তারা তো জামায়াতের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে মিশে আছে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর দুজন সদস্যের সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা দলটির লক্ষ্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে একটি ধারণা দেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন, দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, বিরোধী দলগুলোকে কোণঠাসা করা, জাতীয় পার্টিকে ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দল বানানো—আওয়ামী লীগ এ সবই করছে ক্ষমতায় থাকার জন্য। তাই আওয়ামী লীগ বিএনপির জাতীয় ঐক্যের ডাকে সাড়া দিয়ে রাজনৈতিক পরাজয় মেনে নেবে না। এরই মধ্যে দলের নেতা ও সাংসদদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিদেশি দূতাবাস এবং বিদেশিদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন ও যোগাযোগ বৃদ্ধির তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
আজ শনিবার আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। দলীয় সূত্রগুলো জানায়, এই বৈঠকে বিএনপির ঐক্যের ডাকের বিষয়ে দলীয় অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি দলের নেতা ও সাংসদদের নিজ নিজ এলাকায় সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠন এবং জঙ্গিবিরোধী জনমত গঠনের নির্দেশ দেওয়া হতে পারে।[ads2]
সূত্র ঃ potom Alo