বিএনপির সমাবেশ ঠেকাতে মরিয়া সরকার, গুলি করে হত্যা করলেও মানুষ আসবে সমাবেশে

0

আগামী ২২ অক্টোবরের সমাবেশকে ঘিরে খুলনায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রশাসন, পুলিশ ও র‌্যাবকে ব্যবহার করে খুলনা বিভাগে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর ব্যাপক জুলুম-নির্যাতন, বাড়ী দখলসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তারা করেনি।

কিন্তু, সাম্প্রতিক সময়ে পরিস্থিতি অনুকূলে আসার পরিপ্রেক্ষিতে খুলনার এই সমাবেশকে ঘিরে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে স্থানীয় বিএনপি।

এদিকে সমাবেশ বানচাল করতে বরাবরের মতোই ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা পুলিশকে ব্যবহার করে খুলনায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে।

এছাড়া, প্রশাসনের চাপে বিএনপির সমাবেশে লোকসমাগম ঠেকাতে খুলনাতেও দুই দিন বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে ফ্যাসিবাদী সরকার। সরকারের চাপেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাস মালিক সমিতি। খুলনা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লব বলেছেন, আগামী ২১শে ও ২২শে অক্টোবর খুলনা থেকে সকল বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাস মালিক সমিতি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শ্রমিক ইউনিয়ন এর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে।

নেতা-কর্মীদের বাড়ীতে তল্লাশি:

বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, সমাবেশ বানচাল করতে খুলনায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।

তিনি বলেছেন, বিএনপির কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করতে দুই দিনের পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রচার মাইকে হামলা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬টি মাইক ভাঙচুর করা হয়েছে। দুইটি মাইক লুটে নেওয়া হয়েছে। প্রচারণার কাজে অংশ নেওয়া কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। দলীয় নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। নদী পথে ট্রলার বন্ধ করে জনসমাগম বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু কোনো বাধাই বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ বন্ধ করতে পারবে না।

বৃহস্পতিবার (২০শে অক্টোবর) দুপুরে খুলনা মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন শামসুজ্জামান দুদু। বিভাগীয় সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্বে রয়েছেন বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা।

তিনি বলেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে শনিবার খুলনায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। নেতাকর্মীরা যতোই আঘাতপ্রাপ্ত হোক, জন উৎসাহ কোনক্রমেই ঠেকানো যাবে না। খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং পাঁচ সহকর্মী হত্যার বিচার আদায় করেই আমরা ঘরে ফিরব।

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিএনপির বিভাগীয় গণ সমাবেশ কর্মসূচি দুই মাসের। সরকারের ব্যর্থতায় নিত্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক বেড়েছে। দেশবাসী নিরাপত্তাহীন। গণতন্ত্র নির্বাসিত। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে সমাবেশ ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।

আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, এই বাহিনী কোনো দলের না, বাংলাদেশের। নিজের স্বার্থে, দলের স্বার্থে তাদেরকে ব্যবহার করা হচ্ছে। অতীতে কোনো আইজিপিকে অবসরে যাওয়ার পর পুলিশ সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে হয়নি।

তিনি বলেন, ‘এই দিনই শেষ দিন না। আরও দিন আছে।’

গুলি করে হত্যা করলেও সমাবেশে মানুষ আসবে:

এদিকে, বিএনপির সমাবেশে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা প্রসঙ্গে দলটির মহাসচিব গণমাধ্যমকে বলেন, আগামী ২২ অক্টোবর খুলনার সমাবেশকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। বাস মালিক সমিতি ঘোষণা দিয়েছে, তারা ২ দিন বাস বন্ধ রাখবে। এটা একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। বাস আর ট্রাকেই তো আমাদের লোকজন আসবেন। সেখানে বাস বন্ধ করা হয়েছে সরকারের ইন্ধনেই।

ইদানীং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং দলটির নেতারা যেভাবে কথাবার্তা বলছেন, সেটা গণতন্ত্রের পক্ষে না। তারা যে রকমের হুমকি দিচ্ছেন, তা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে বড় রকমের প্রতিবন্ধকতা।

আমরা সাংবিধানিক অধিকারের জন্যই সমাবেশ করছি। এখন পর্যন্ত আপনারা দেখছেন যে আমরা কতটা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছি। ময়মনসিংহে আমাদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। আশা করব তারা এই ধরনের কার্যক্রম থেকে সরে আসবে এবং আমাদের সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ দেবে।

মির্জা ফখরুল আরও বলেছেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা সরকারের তৈরি করা শত প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে সমাবেশ করছে। এর সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সমাবেশ করতে গিয়ে জীবন দিয়ে আমাদের মূল্য দিতে হচ্ছে। কোনো কারণ ছাড়া গুলি করে আমাদের নেতা-কর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে। আমরা আশা করছি পারবো। খুলনায় বড় সমাবেশ করার ব্যাপারে আমাদের সংগঠকরা আশাবাদী, নেতা-কর্মীরা প্রস্তুত।

তিনি বলেন, বাস বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যাতে আমরা সমাবেশ করতে না পারি, আমাদের লোকজন যাতে সমাবেশে আসতে না পারে। পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই, সরকারের এসব অপকৌশল কোনো কাজে আসবে না। ময়মনসিংহেও বাস-ট্রাক সব বন্ধ করে দিয়েছিল। সেখানেও নৌকায়, হেঁটে, অটোরিকশায়, সাইকেলে, রিকশায় মানুষ এসেছে। খুলনায়ও আসবে।

এই সমাবেশগুলো করে আমরা ইতোমধ্যেই জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও সমর্থন অর্জন করেছি। জনগণের মধ্যে সাহস বাড়ছে। আওয়ামী লীগ যে ভয়-ভীতি তৈরি করে রেখেছে, সেখান থেকে মানুষ বেরিয়ে আসছে। প্রতিবাদ করার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।

এই সমাবেশ থেকে গণতন্ত্রে বিশ্বাসীদের মনে আশা সৃষ্টি করা যাচ্ছে যে, এই অগণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে একটি অর্থবহ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার চেষ্টা করছি।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের এই ভয় দেখানোর ভয়ে এখন আর আমাদের নেতাকর্মীরা ভীত না। তারা সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়ে ভয়ের ঊর্ধ্বে উঠে গেছে। গুলি করে হত্যা করলেও সমাবেশে মানুষ আসবে।

অভিমান ভুলে ফিরেছেন মঞ্জু:

এদিকে, ১১ মাস পর দলের কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র মনিরুজ্জামান মনিসহ পাঁচ থানা ও নগর বিএনপির সাবেক নেতারা।

বৃহস্পতিবার খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ২২শে অক্টোবর বিএনপির খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেন তারা। পরে সমাবেশ সফল করতে নগরীতে লিফলেট বিতরণ করেন। মঞ্জু-মনি ও সাবেক নেতারা দলের কর্মসূচিতে ফেরায় কর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে।

গত বছরের ৯ই ডিসেম্বর খুলনা মহানগর বিএনপির ৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হলে বাদ পড়েন মঞ্জু ও তাঁর অনুসারীরা। দলের এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৫শে ডিসেম্বর তাঁকে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে অব্যাহতির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে খুলনা মহানগর বিএনপির সহসভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক, ৫ থানার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং ওয়ার্ড কমিটির পাঁচ শতাধিক নেতা পদত্যাগ করেন। গত ১১ মাস ধরে দলের কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় ছিলেন তাঁরা।

বাচাল কাদের:

খুলনার সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে বাস ধর্মঘটের প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বরাবরের মতোই মিথ্যাচার করে বলেছেন, সেখানে সরকার বা আওয়ামী লীগ কোনো হস্তক্ষেপ করেনি, করবেও না। ধর্মঘট ডেকেছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা, তারা যদি তাদের পরিবহন ও শ্রমিকদের নিরাপত্তার অভাব বোধ করে তাহলে সরকার বা আওয়ামী লীগের কী করার আছে।

বৃহস্পতিবার (২০শে অক্টোবর) রাজধানীর সেতু ভবনে ব্রিফিংকালে কাদের বলেন, সরকার কিংবা আওয়ামী লীগ কখনো বিএনপির সমাবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি, করবেও না।

প্রসঙ্গত: জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিভাগীয় (দলের সাংগঠনিক বিভাগ) পর্যায়ে গত ৮ই অক্টোবর থেকে সমাবেশ করছে বিএনপি।

এরই মধ্যে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে অনেক বাধা উপেক্ষা করে জনসভা করেছে বিএনপি। সরকারের বাধা উপেক্ষা করে সেসব জনসভায় অংশ নিয়েছেন বিএনপির হাজার-হাজার নেতা-কর্মীসহ সাধারণ জনগণ।

উৎসঃ   আমার দেশ
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More