বিএনপি ছাড়া জামায়াত জিরো!

0

Khaleda with jamayatবিএনপি নীতিনিধার্রকরা মনে করেন, জোটে থাকা ছোট দলগুলো বড় দলের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল থাকে। এটা কেবল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে নয়, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকদলগুলোর ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য। তবে বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করেন বর্তমান অবস্থায় বিএনপি ছাড়া জামায়াতের একা চলা অসম্ভব। তবে বিএনপি ছাড়া জামায়াত জিরো এমনটা মনে করেন না বিএনপির সিনিয়র নেতারা।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান বলেন, বিএনপি সর্ব বৃহৎ রাজনৈতিক দল। জামায়াত ইসলাম ছোট একটি রাজনৈতিক দল। যেটা বিএনপি আওয়ামী লীগ এবং এক সময়ের জাতীয় পার্টিরও নিচে। বিএনপি বিশাল একটি রাজনৈতিক দল যার ধারের কাছেও জামায়াত নেই। জামায়াত এখন বিএনপির ওপর নির্ভর করছে। আওয়ামী লীগের ওপর যেমন তার সকল মিত্রদলগুলো নির্ভর করে ঠিক একই ভাবে বিএনপির ওপর জামায়াতসহ সকল শরীকদলগুলো নির্ভর করে।

তবে জামায়াত নতুন করে আবার সংঘটিত হবে সেটা জামায়াতের বিষয়। যেহেতু বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের এখনো জোট আছে সেহেতু জামায়াত আমাদের সঙ্গে রয়েছে। কারণ এটা নির্বাচনী জোট। তারা বিএনপির সঙ্গে চিরকাল থাকবে এটাও ঠিক না। তবে ভবিষ্যতের ওপর সব কিছুই নির্ভর করছে।

বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, জামায়াত বিএনপির সঙ্গে চারদলীয় জোট গঠন করার পর থেকে তারা বিএনপির ওপর নানা দিক দিয়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালায়। জামায়াতের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে এমন ধারণা সৃষ্টি করা হয় যে জামায়াত ছাড়া বিএনপি একেবারেই অচল। বিএনপির সঙ্গে সরকার ও জোটে থেকে কৌশলে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায় তারা। এনিয়ে বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতাসহ মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষও সৃষ্টি হয়। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ জামায়াত প্রসঙ্গে তাদের নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশও করেন। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান জামায়াতকে ২০ দলীয় জোটে রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্নও তোলেন। তবে বিষয়টি একেবারেই রাজনৈতিক এবং দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের তাই এরবাইরে কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি ।

তবে দলটির নেতাকর্মীরা মনে করেন জামায়াতের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে সেখানে বিএনপি ছাড়া জামায়াত একেবারেই জিরো। এদিকে জামায়াতকে যে বিএনপি আর আগের মত গুরুত্ব দিচ্ছে না তার প্রমাণ মেলে ৩০ ডিসেম্বর পৌর নির্বাচনে জামায়াতের মেয়র প্রার্থীর দাবি প্রত্যাখ্যান করে ২৩৪ পৌরসভায় দুটি বাদে সবগুলোতে বিএনপি তাদের দলীয় প্রার্থী দেয়।

রাজনৈতিকভাবে জামায়াত বিএনপির সঙ্গে জোটে থাকলেও দলটি এখন অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। পাশাপাশি জোটগতভাবে বিএনপিও জামায়াতকে নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দেশে পরির্বতিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের র্শীষ নেতাদের একের পর এক মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ার পর জামায়াতের সাংগঠনিক মনোবল একরকম ভেঙে পড়েছে। ইতিমধ্যে নিবার্চন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে দিয়েছে। ফলে দলীয়ভাবে নিবার্চন করার ক্ষমতাও হারিয়েছে দলটি। আগামী মার্চের দিকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী জামায়াতের ওপর এরআগে এতো বড় দু:সময় আর আসেনি। কৌশলী জামায়াত এবার রাজনৈতিক কূটচালে পুরোপুরি ধরাশায়ী হওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত জামায়াত পচাঁত্তরের রাজনৈতিক পট পরির্বতনে প্রায়ত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়ে জামায়াত ইসলামী মূল্যবোধের আওয়াজ তুলে দেশের রাজনীতিতে আবির্ভূত হয়। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে জামায়াত দেশের রাজনীতিতে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করে। রাজনীতির পাশাপাশি দলটি অর্থনৈতিকভাবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়। এক দিকে রাজনীতি অন্যদিকে অর্থনীতি এই দুই এজেন্ডা নিয়ে সাফল্য পায় জামায়াত। নিজেদের প্রতিষ্ঠানে দলীয় কর্মীদের চাকরির ব্যবস্থা করে ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে নিজেদের জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা অব্যাহত রাখে।

দলটি ১৯৯১ সালে বিএনপিকে সরকার গঠনে সর্মথন দিয়ে মূলত রাজনীতিতে তাদের অবস্থার জানান দেয়। জামায়াতের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠনের পর বিএনপির ওপর তারা নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালায়। কিন্তু ওইসময় সফল না হওয়ায় বিএনপির থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় জামায়াত। এপর তত্ত্বাবধ্য়াক সরকারের দাবিতে বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুগোপৎ আন্দোলন করে। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করারপর জামায়াত তাদের কাছ থেকে তেমন সুযোগ করে উঠতে পারেনি। ফলে ভেতরে ভেতরে বিএনপির সঙ্গে সর্ম্পকন্নোয়ন করে এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপির সঙ্গে চার দলীয় জোট গঠন করে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয় তারা। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট ক্ষমতাসীন হওয়ারপর জামায়াত রাজনীতিতে সফল হয়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক জোট করে তারা সরকারের মন্ত্রীত্বও নেয়।আস

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More