রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ হওয়া জরুরি, তবে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস, যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামী এবং ১৫ আগস্টসহ মৌলিক বিষয় সমূহে সিদ্ধান্তে আসতে হবে বিএনপিকে, তবেই সংলাপ হতে পারে বলে মতপ্রকাশ করেছেন রাজনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। আমাদেরসময় ডটকম-এর সঙ্গে আলাপকালে তারা এই মত ব্যক্ত করেন।
রাজনৈতিক ভাষ্যকার, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মে. জে. আব্দুর রশিদ (অব.) বলেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিএনপির সংশয় যতক্ষণ না পর্যন্ত দূর হবে, পূর্ণ আস্থা বা বিশ্বাস না আসবে কিংবা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে স্বীকৃতি না দেবেÑ ততক্ষণ পর্যন্ত সংলাপ কোনো কার্যকর ফল বয়ে আনবে না। কারণ মুক্তিযুদ্ধই হলো আমাদের মূল ভিত্তি। মূলভিত্তির মধ্যে না থেকে কোনো সংলাপকে এগিয়ে নেওয়া যায় না। বড় দুই দলের মধ্যে সংলাপে বড় একটি বাধা জামায়াতে ইসলাম। আর স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে সংলাপের কোনো অবকাশ আছে বলেও আমি মনে করি না।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে স্পষ্ট করতে হবে, তার মৌলিক ভিত্তিটা কী? যদি স্পষ্ট করতে পারে, তখনই রাষ্ট্রীয় স্বার্থে সংলাপ হতে পারে। ১৫ আগস্ট, ২১ আগস্ট কিংবা মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করলেই কেবল সংলাপ হতে পারে। তা না হলে এ ধরনের সংলাপকে কেবল কালক্ষেপণ বলা যেতে পারে।
উন্নত গণতান্ত্রিক দেশসমূহ দেশের প্রয়োজনে, সংকটে রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তির মধ্যেও সংলাপ হয়। তারা সংলাপে বসেন। কিন্তু কখনো দেশের মৌলিক ভিত্তিকে অস্বীকার করে কোনো সংলাপ কিংবা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন না। বিশ্বের প্রতিটি দেশেÑ বামপন্থী-ডানপন্থী-উদারপন্থী-মধ্যপন্থী থাকে, তারা দেশকে স্বীকার করেন। দেশপ্রেম আছে তাদের। ভারতের কংগ্রেস বা বিজিপিÑ দুটি দল দুই ধরনের আদর্শ নিয়ে কাজ করে। কিন্তু মৌলিক জায়গায় দ্বিমত নেই কারও। স্বাধীনতার প্রশ্নে দ্বিমত নেই, দেশের স্বার্থেও কোনো দ্বিমত নেই তাদের মধ্যে। কিন্তু আমাদের এখানে তা রয়েছে।
সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাহফুজ উল্লাহ বলেন, যেসব ইস্যু তুলে সংলাপ না করার কথা আওয়ামী লীগ বলছে, সেসব নেহাতই রাজনৈতিক কৌশল বা চাপ হিসেবে ব্যবহার করছে তারা। তবে যে রাজনৈতিক সংকট এখন দেশে রয়েছে, তা থেকে উদ্ধারের একমাত্র পথÑ দুটি বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংলাপ এবং সমঝোতা। কারণ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এ দুটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবেও সম্পর্কযুক্ত। তাই সংকট নিরসনে, সংলাপ ভিন্ন সংকটের কোনো উত্তরণ হবে বলে মনে হয় না।
সংলাপ এবং সংকট সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যে মন্তব্য করেছেন, তার সেই বক্তব্যটিকেই আমি বিবেচনায় নিতে চাই। তিনি শান্তিপূর্ণ রাজনীতির আহ্বান জানান। বলেন, নির্বাচনের কথা, গণতন্ত্রের কথা। সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি। তার এই কথায় আস্থা রাখতে চাই। সংলাপ বিষয়ে আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের বক্তব্য নিছক বক্তৃতাই মনে হয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দুই পক্ষই একটু একটু করে উপলব্ধি করতে শুরু করেছে, সংলাপে বসতে হবে। এই পরিস্থিতির মধ্যে কিংবা আগামী দিনে যদি কোনো সংলাপ হয়, সে সংলাপের সফলতা এবং ফল লাভের ক্ষেত্রে আমি আশাবাদী।
সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক কর্মকা-কে অগ্রসর করার জন্য প্রতিনিয়ত সংলাপ করা খুব জরুরি। প্রয়োজনে দিন তারিখ দিয়ে সংলাপ হওয়াটাও বাঞ্ছনীয়। তবে সংলাপ হতে হবে সর্বদলীয়। বারবার সংলাপ ব্যর্থ হয়Ñ জনগণের সমস্যাগুলো সংলাপের এজেন্ডায় থাকে না বলেই।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে যুদ্ধাপরাধীদের আদর্শে বিশ্বাসীরা। মুক্তিযুদ্ধ একটি মীমাংসিত বিষয়। আগুনের মতো সত্য। বাঙালির অস্থিত্ব, পরিচয়। এই পরিচয়ের বিষয়ে সকলের ঐক্যমত থাকতে হবে। সংলাপের এটিও একটি ভিত্তি হতে পারে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কী কী সংস্কার আনা যায়, তা সামনে নিয়ে আসতে হবে বলেও মনে করেন রুহিন হোসেন প্রিন্স।আস