ঢাকা: জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে যে কোনো সহিংস কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে শিবিরের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে জামায়াত। একই সঙ্গে জামায়াতের পক্ষ থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ মেনে চলতে বলা হয়েছে।
জামায়াত-শিবিরের দায়িত্বশীল পর্যায়ের কয়েকটি সূত্র থেকে এ খবর পাওয়া গেছে।
জামায়াতের একাধিক সূত্র বলছে, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মতো ‘জনপ্রিয়’ একজন নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ব্যাপারে সরকার নিশ্চয়ই চিন্তা-ভাবনা করবে। সাঈদীর রায়ে পরিবর্তন আসছে এমন আভাসও পেয়েছে দলটি। তাই, আপাতত কোনো কঠোর কর্মসূচিতে যেতে চাচ্ছে না জামায়াত। জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের দুই সদস্যের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে গত দুই সপ্তাহ দুটি বিক্ষোভ কর্মসূচি দেয় জামায়াত। আর এসব কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে যাতে করে কোনো ধরনের সহিংসতা না হয়, সেজন্য শিবির নেতাকর্মীদের কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
চলতি সপ্তাহ রাজধানী মহাখালীর ওয়্যারলেস গেটে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েও সেখানে থেকে পিছু হটে শিবির কর্মীরা। মতিউর রহমান নিজামী ও সাঈদীর মুক্তির দাবিতে সারাদেশে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে শুধু নাটোরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় দলটির নেতাকর্মীরা।
এ ছাড়া সারাদেশে মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবেই কর্মসূচি শেষ হয়।
বিষয়টি স্বীকার করে শিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের এক সদস্য বাংলানিউজকে বলেন, জামায়াতের শীর্ষ পর্যায় থেকে এ ধরনের নির্দেশনা আছে।
এদিকে, শিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও কার্যকরী পরিষদের সদস্য আবু সালেহ মো. ইয়াহহিয়া বলেন, শিবির কখনোই সহিংসতায় জড়ায়নি বরং পুলিশ ও সরকারি দলের লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসীরা শিবির কর্মীদের ওপর হামলা করেছে।
তিনি বলেন, পুলিশ ও ছাত্রলীগের হাতে যে শিবির কর্মীরা মারা গেছে, উল্টো শিবিরের বিরুদ্ধে মামলায় তাদের জেলে পাঠানো হয়েছে।
শিবির সূত্র বলছে, জামায়াতের এ নির্দেশ পাওয়ার পর দেশের সব মহানগর, জেলা, উপজেলা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শাখাগুলোতে লিখিতভাবে এ নির্দেশ পাঠানো হয়েছে।
গত বছর দলের শীর্ষনেতাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী রায় ও নিবন্ধন ইস্যুতে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও গাড়ি ভাঙচুরসহ সহিংস ছিল দলটির ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ শিবির।
শিবির নেতারা বলছেন, জামায়াতের এ নির্দেশ পালন করতে গিয়ে মাঠের কর্মীরা মার খেতে হচ্ছে। তবে কেন এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তার সুনির্দিষ্ট কারণ বলতে পারছেন না শিবির নেতারা।
জামায়াত নেতাদের দাবি, সাঈদীর রায়ে কোনো পরিবর্তন আসছে এটার উদাহরণ হলো শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চকে বিভক্ত করে দেওয়া। সাঈদীর রায়ের পর বড় ধরনের কোনো আন্দোলন যাতে আর না করতে পারে, তার জন্য গণজাগরণ মঞ্চকে সরকারের নির্দেশনায় বিভক্ত করা হয়েছে এমন দাবিও জামায়াত নেতাদের।
গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে সারাদেশ প্রায় অচল হয়ে যায়। সারাদেশে পুলিশসহ নিহত হয় প্রায় ১৭৩ জন। জামায়াতের দাবি, তার রায়কে কেন্দ্র করে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা সামাল দিতে সরকারকে হিমশিম খেতে হয়েছে। এখন তার রায় কার্যকর করতে গেলে কী ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়, সেটি সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছে।
সব মিলিয়ে সরকার সাঈদীর ব্যাপারে একটু নমনীয়, এটা বুঝতে পেরেই শিবির নেতাদের এ নির্দেশ দিলো জামায়াত। সরকারের সর্বশেষ মনোভাব না দেখা পর্যন্ত কঠিন কোনো কর্মসূচি না দেওয়ার পক্ষেও একমত জামায়াতের অধিকাংশ নেতাই।
অন্যদিকে, কারাগারে আটক ও সাজাপ্রাপ্ত শীর্ষ নেতারা বিভিন্নভাবে দলের প্রতি এ নির্দেশ দিচ্ছে, ‘‘আমাদের যাই হোক’ তাদের বক্তব্য শীর্ষ কয়েক জন নেতার জন্য পুরো দল যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
জামায়াত নেতাদের ধারণা, সারাদেশে সাঈদীর যে ইমেজ রয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে যাবে। এখানে শিবির বা জামায়াতকে আলাদাভাবে কিছু করতে হবে না।
উভয় পক্ষের দীর্ঘ শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ১৬ এপ্রিল দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায় যে কোনো দিন ঘোষণা করবেন আপিল বিভাগ।