নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে আগাম ইফতার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। কেন্দ্র থেকে সরাসরি এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দলটির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো এ তথ্য জানিয়ে বলেন, মনভাঙ্গা নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে এ বছর আগাম ইফতার প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেন কেন্দ্রের নেতারা। সরাসরি জামায়াতের ব্যানারে এ ইফতার কর্মসূচি পালনের জন্য জেলা, উপজেলা, বিভাগীয় নেতাদের কঠোরভাবে নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশ পাওয়ার পর দায়িত্বশীল নেতারা ইতিমধ্যে দেশব্যাপী স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টার, গ্রন্থাগার মিলনায়তন, কলেজ, স্কুল, মাদ্রাসার হল, বিভিন্ন ব্যক্তির নামে স্থাপিত সেন্টারগুলো আগাম বুকিং করার চেষ্টা করছেন। এমন তথ্য জানান জামায়াতের কয়েকজন তৃণমূল নেতা।[ads1]
এদিকে জামায়াতের দায়িত্বশীল একজন ব্যক্তি জানান, তাদের টার্গেট হচ্ছে প্রথম রোজা থেকে ১৫ রোজার মধ্যে ইফতার আয়োজন শেষ করার। সেই লক্ষ্যে দলের নেতারা কাজ সম্পন্ন করতে মাঠে তৎপর রয়েছে। দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদের বরাত দিয়ে ঢাকা মহানগর জামায়াতের এক কর্মপরিষদ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমিরের নির্দেশে এই বছর সারাদেশে ইফতার কর্মসূচি পালন করা হবে জমজমাটভাবে। প্রাসঙ্গিকভাবে ইফতার পার্টিতে আলোচনা হবে কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটি গঠন নিয়ে। এছাড়া দলটির শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি কার্যকরে নেতাকর্মীদের মনোভাব, রাজপথে সরকারবিরোধী আন্দোলন নিষ্ক্রিয় কেন, কিভাবে সক্রিয় হবে, সংগঠনকে নিষিদ্ধের ব্যাপারে মতামত
চাওয়া হবে বেশ গোপনীয়ভাবে। সেসব বিষয়কে সামনে রেখে ইফতার পার্টি পালন করার জন্য ব্যস্ত রয়েছেন মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
অপরদিকে রাজধানী ঢাকাতে জামায়াত এবার বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের ব্যানারে একাধিক ইফতার আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে বলে জানিয়েছেন পুরান ঢাকার বংশাল রোডের জামায়াতের এক কর্মী। তিনি বলেন, সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছে, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, প্রপ্রার্টিজ কোম্পানী, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান, এতিমখানা, মসজিদ, মক্তব, পাড়ার ঐতিহ্যবাহী সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে ইফতার কর্মসূচি পালন করবে দলটির নেতারা। একইভাবে গ্রামে গ্রামে এ কর্মসূচি পালন করতে নির্দেশ দেয়া হয়। দলটির শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি ও বিচারাধীন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য না করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এমন তথ্য স্বীকার করে জামায়াতের বরিশাল জেলার একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, সময়মতো জামায়াত তার অবস্থান পরিষ্কার করবে। তিনি বলেন, আমি ঢাকাতে ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত হলেও মূল দায়িত্ব পালন ভোলা জেলায় করি।[ads2]
রোজার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও ইতিমধ্যে দলটির নেতারা ইফতার আয়োজনের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে জানিয়ে দলটির একাধিক কর্মীরা বলেন, ইফতারে যত টাকা ব্যয় হোক না কেন, সব টাকার ব্যবস্থা করবেন দায়িত্বশীল ও কর্মীরা। এ জন্য আগাম চাঁদা সংগ্রহ চলছে। তা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না জামায়াত নেতাদের। দলটির একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়ে বলেন, রাজধানী ঢাকাতে এবারই গত বছরের ন্যায় হোটেল ওয়েস্টিনে কূটনীতিকদের সাম্মানে, সোনাগাঁও এবং শেরাটন হোটেলে রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের সম্মানে ইফতার আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এছাড়া ঢাকা মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে ইফতার আয়োজনের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। এখন পর্যন্ত ইফতারের তারিখ ঠিক না হলেও ভেতরে ভেতরে কয়েকটি সম্ভাব্য তারিখ রেখে হল বুকিং নেন জামায়াত নেতারা। সরকারি কোন সংস্থা অথবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনোভাবে সমস্যা সৃষ্টি না করতে পারে সে জন্য গোপনীয়তা রক্ষা করে তারা হল বুকিং নিচ্ছে। ইফতারের সময় কাছাকাছি এলে তখন নির্দিষ্ট তারিখ জানাবে সংগঠনটির নেতারা।
গতবারের মতো এবারের ইফতার পার্টিতেও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হবে প্রধান অতিথি হিসেবে। এমন কথা জনিয়েছে ২০ দলীয় জোটের এক শীর্ষ নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই নেতা বলেন, এবারের জামায়াতের ইফতার পার্টিতে সরকার ডিস্টার্ব করবে না। কারণ কি জানতে চাওয়া হলে এই নেতা বলেন, কেননা জামায়াতের একে একে সব নেতা এখন কারাগারে আটক রয়েছেন বিভিন্ন নাশকতার মামলা। তিনি জানান, যারা বাইরে রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে তেমন মামলা নেই। তারাও কোনো সিরিয়াস নেতাও নেন। অন্যদিকে সারাদেশে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে জামায়াত নেতারা কয়েকটি ইউনিট যৌথভাবে একস্থানে ইফতার করার জন্য একটি নির্দেশনা দেয়া হয়।
কি কারণে এই নির্দেশনা জানতে চাওয়া হলে মতিঝিলের জামায়াতের এক নেতা বলেন, কোথাও যদি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী অথবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আমাদের ইফতার পার্টিতে নেতাকর্মীদের হয়রানি করার চেষ্টা করে তা প্রতিহত করার জন্য এ উদ্যোগ। এবারের ইফতার মাহফিলগুলোতে জামায়াতের সাবেক আমির ও যুদ্ধাপরাধের অফিযোগে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মরহুম গোলাম আযাম, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ফাঁসি কার্যকর হওয়া জামায়াতের আমির মতিউর নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লা এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি কারাগারে আটক দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর জন্য বিশেষ দোয়া করবে দলটির নেতাকর্মী। এ তথ্য জানান দলটির একাধিক নির্ভর সূত্র। এবারের ইফতার পার্টিতেও মামলার কারণে উপস্থিত থাকতে পারবে না জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ। অন্য নেতাদের দিয়ে অনুষ্ঠানের সভাপতিত্বে করার জন্য দলের একজন দায়িত্বশীল প্রবীণ নেতাকে এ দায়িত্ব দেয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত কাকে এ দায়িত্ব দেয়া হবে তা ঠিক করা হয়নি। জামায়াতের আয়োজিত ইফতার পার্টিতে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা অংশ নিবেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির কাজী জাফর একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির নেতারা ইফতার পার্টিতে আমন্ত্রিত হলেও জাপার পক্ষ থেকে সবাই অংশগ্রহণের চেষ্টা করবেন।[ads1]