প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের পর বর্তমান সরকার ও সংসদের কোনো বৈধতা নেই মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এখন অবৈধ সরকারের নিজেদেরে মধ্যে সবচেয়ে বড় দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গেছে। প্রধান বিচারপতির মঙ্গলবারের বক্তব্যের জের ধরে তিনি বলেন, সরকারের নিজেদেরে মধ্যে সবচেয়ে বড় দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গেছে।
ইতোমধ্যে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, প্রধান বিচারপতি যে বক্তব্য দিয়েছেন সেই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এই সরকার বৈধতা নেই, পার্লামেন্টেরও বৈধতা নেই। আজ বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহবায়ক মির্জা আব্বাস, স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবীব উন নবী খান সোহেলসহ সব রাজবন্দিদের মুক্তি দাবিতে আজ এই সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর বিএনপি। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কারণ তিনি (প্রধান বিচারপতি) খুব পরিষ্কার করে বলেছেন যে রায়ের বদৌলতে, যে রায়ের ওপর ভিত্তি করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ করা হয়েছিল। সেই রায়টি সংবিধান সম্মত নয়।
সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে। তাই তাদেরকেও সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে জবাবদিহি করতে হবে। বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, আজকে দেখুন নিজেদের মধ্যে কোন্দল শুরু হয়ে গেছে, আমাদেরকে কিছু করতে হচ্ছে না। অবৈধ ও অনৈতিকভাবে ক্ষমতায় থাকার কারণে এ কোন্দল শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের ২১তম প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব গ্রহণের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বাণীতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, কোনো কোনো বিচারপতি রায় লিখতে অস্বাভাবিক বিলম্ব করেন। আবার কেউ কেউ অবসর গ্রহণের দীর্ঘদিন পর পর্যন্ত রায় লেখা অব্যাহত রাখেন, যা আইন ও সংবিধানপরিপন্থী। ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক কাজী আবুল বাশারের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আবুল খায়ের ভূইয়া, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা বজলুল বাসিত আঞ্জু, আব্দুল কাদের, মকবুল হোসেন টিপু, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুনির হোসেন, যুবদল নেতা রফিকুল ইসলাম মজনু, ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ এম এ মালেক, ঢাকা মহানগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, ছাত্রদলের সহ সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ ও ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা ইউনুস মৃধা। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের নির্যাতনের সমালোচনা করে বলেন, গোটা দেশ আজকে কারাগারে পরিণত করা হয়েছে।
পুরো দেশেটাই একটা কারাগার। সব মানুষ হয়তো কারাগারে, নয়তো অবরুদ্ধ অবস্থায় আছে। অবৈধ, জনবিচ্ছিন্ন এ সরকার জোর করে ক্ষমতায় দখল করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চায়। গত দুই বছরে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম, হত্যা করা হয়েছে। তাদের আত্মত্যাগ ভুলে যাইনি। চেীধুরী আলমকে ভুলে যাইনি। এই ত্যাগ ও রক্তের ধারা গণতন্ত্রের জন্য। এসময় মির্জা ফখরুল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, এম কে আনোয়ার, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, মাহমুদুর রহমান, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসান সহ সব রাজবন্দীর মুক্তি এবং হাবিবুন নবী খান সোহেলসহ সব রাজনৈতিক নেতাদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদেরকে পরিবর্তন করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তা না হলে মির্জা আব্বাসের মুক্তি মিলবে না। সোহেলের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার হবে না। তাই সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভুলে মহানগর বিএনপির ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। সরকারকে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে বাধ্য করতে হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জনগণের অধিকার আদায়ে ঐক্য গড়ে তুলতে নেতাকর্মীদের আহবান জানান মির্জা ফখরুল। জিয়াউর রহমানের মাজার সরানো প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, শহীদ জিয়া শুধু বিএনপির সম্পদ নয়, তার মৃত্যুর সময় লাখ লাখ মানুষ তার জানাজায় শরিক হয়েছিলেন। তারা বিএনপির কর্মী ছিল না। তার কবরে হাত দিতে গেলে লাখ লাখ মানুষ প্রতিবাদে ফেটে পড়বে। তাই সরকারের উচিৎ বুঝে-শুনে হাত দেয়া। তিনি বলেন, এ মাজার কারো কোনো ক্ষতি করছে না। সংসদের কার্যপ্রণালিতে কোনো বাধা প্রদান করে না। সংসদের কোনো সৌন্দর্য হানি করছে না। যেখানে পার্ক আছে সেটা পার্ক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
এটাই তাদের সহ্য হচ্ছে না। এ সরকারের পরিবর্তন ছাড়া আমরা কেউ কারাগারের বাইরে থাকতে পারবো না, শুনেছি যারা জামিনে আছেন তাদের জামিনও কেটে দেয়া হবে বলে অভিযোগ করেন তিনি। ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, প্রধান বিচারপতিকে আজকে এটা প্রতিষ্ঠা করতে হবে যে পঞ্চদশ সংশোধনী করা হয়েছিল সম্পুর্ণ অবৈধভাবে করা হয়েছিল। তিনি বলেন, আমরা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাস করতে চাই। বিএনপির অন্যতম নেতা সালাহ উদ্দিনকে ৬২ দিন গুম করে রেখে ভারতে ফেলে দিয়ে আসছেন সরকারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করে দলের যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, এখন দাউদ মার্চেন্টের সাথে তার বিনিময় করবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রেস ব্রিফিং করে করে একজন স্বজ্জন ও দেশের পরিচিত একজন রাজনীতিবিদ যিনি মন্ত্রী ছিলেন এমন একজন ব্যক্তির সাথে জঙ্গির বিনিময় করবেন তা জনগণকে বিশ্বাস করতে হবে? এ ধরনের ন্যাক্কারজনক, হীনতা জনগণ কোনো দিন মেনে নিতে পারে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন রিজভী। বিএনপি ভাঙা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি কাঁচের প্লেট বা চিনা মাটির বাটি নয় যে, ফেলে দিলেই ভেঙে যাবে। বিএনপি হচ্ছে হিমালয়ের সমান। এর ওপর দিয়ে বহু পাথর গড়াবে কিন্তু টলবে না।