সরকারের জিরো টলারেন্স, বিএনপি জোটকে দমন, পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, অনমনীয় অবস্থানের কারণে বিএনপি তার সিদ্ধান্তেও কিছুটা পরিবর্তন আনছে। এই জন্য নানা পরিকল্পনা করার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রস্তাবাবনাও তৈরি করছে। এরমধ্যে শেষ পর্যন্তও জাতিসংঘ আলোচনা করে সরকারকে যে প্রস্তাবে রাজি করাতে পারে বিএনপি সেটাই মত দিবে। আর সেই রকম প্রস্তাব বান কি মুন ও তারানকোর কাছেও বিএনপির তরফ থেকে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে একাধিক প্রস্তাবেও তারা তারানকোকে বলেছেন। বিএনপির জাতিসংঘের কাছে অনুরোধ একটাই তাহলো যেভাবে ও যে ফর্মুলায় নির্বাচন হবে তা হতে হবে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সংকটের সমাধান হবে না বলেও মনে করছে বিএনপি। এই তথ্য মিলেছে বিএনপির সূত্রে।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, সরকার, বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে কোন ধরনের সংলাপে বসতে রাজি নয়। এমনকি শেখ হাসিনা তার দল ও জোটে কাউকে বিএনপির কোন নেতার সঙ্গে আলোচনাও করতে দিবে না। ২০১৯ সালের আগে কোন নির্বাচনও করবে না সরকার। এই জন্য বিএনপির আন্দোলন সারা বছর জুড়ে চললেও সরকার কোন প্রকার ছাড় দিবে না বিএনপির জন্য। উল্টো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন বেগম খালেদা জিয়াকে শাস্তি পেতেই হবে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, তার ব্যাপারে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সব মিলিয়ে বিএনপি আন্দোলনে ভাল অবস্থানে থাকলেও তাদের কোন বিষয়ে সরকারের ইতিবাচক মনোভাব না থাকায় তারা সরকার ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় সংলাপ, সমঝোতা ও নির্বাচনে আশা ছেড়েই দিয়েছে। এই জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান আন্দোলনে সফল হতে যতদিন সরকার রাজি না হবে ততোদিন তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। বিএনপির নেতা, কর্মীরা গ্রেপ্তার হতে থাকলেও পিছ পা হবে না, কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া ছাড়াও আন্দোলন চালিয়ে যাবে। সমঝোতা না হওয়া পর্যন্তও আন্দোলনের মাঠ ছাড়বে না।
অন্যদিকে জাতিসংঘের মাধ্যমে নির্বাচনের চেষ্টাও চালিয়ে যাবে। কুটনীতিকদেরও সহায়তা নিবে। তাদের মূল লক্ষ্য যত দ্রুততম সম্ভব একটা নির্বাচন। সেটা জুনের মধ্যেই। আর এই জন্য তারা নিদর্লীয় সরকারের বিকল্প ভাবতে শুরু করেছে। বিএনপির সিনিয়র একজন নেতা বলেন, বিএনপির প্রথম চাওয়া হচ্ছে সরকার কোন সমঝোতা না করলেও অন্তত জাতীয় সরকারের ইসুওতে তারা একমত হবে। তারা জাতীয় সরকার হলে সেখানে শেখ হাসিনা বিএনপি জোটকে গুরম্নত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় দিলে সেই ভাবেও আলোচনা করে সমঝোতার পথ তৈরি হতে পারে। তবে সেটা আলোচনা হবে জাতিসংঘের মাধ্যমে। জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি জাতিসংঘের মাধ্যমে সমঝোতা করে এরপর নির্বাচনে যাবে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি জাতীয় সরকারের প্রধান অন্য কাউকে করতে রাজি না হন ও তাহলে তার নিজের অধীনে নির্বাচন দেন সেইক্ষেত্রে শেখ হাসিনাকে রেখেই তারা নির্বাচনে যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে বিএনপির দাবি শেখ হাসিনা সরকার প্রধান থাকলেও নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসাবে কেবল রম্নটিন কাজ করতে পারবেন। ওই সরকারের কোন ক্ষমতা থাকবে না। তারা নির্বাচনে কোন হস্তাক্ষেপ করতে পারবেন না। প্রসাশনের উপরও নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবেন না।
বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা বলেন, এখন আমাদের মূল লক্ষ্য সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু, অবাধ, জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের নির্বাচন। এই নির্বাচন করার জন্য সরকার রাজি হলেই পরবর্তী কার্যক্রম এগুবে। তিনি জানান, শেখ হাসিনাকে রেখেও নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু সেই ক্ষেত্রে পুরো নির্বাচন হবে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে। জাতিসংঘ নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে পুরো নিরপেক্ষ নিদর্লীয় করবে। সেটা পুনর্গঠন করবে। পাশাপাশি নির্বাচন করার জন্য লেভেল পেয়িং ফিল্ড করবে। এই জন্য জাতিসংঘকে সবাই সহযোগিতা করতে হবে। সেটা হলে সবার মতামত নিয়েই লেভেল পেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করবে জাতিসংঘ। এই জন্য পরামর্শ দিবে প্রয়োজনীয় সব ধরনের রদবদলের। সেই রদবদল হতে হবে নিরপেক্ষভাবেই। সূত্র জানায়, বিএনপি এখন এই ভাবেই চেষ্টা করছে। বিএনপি জানে যে একটি গ্রহণযোগ্য, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হলেই ক্ষমতাসীন হতে পারে তারা। এই কারণে এখন তারা আর কোন বিষয় নিয়ে ভাবছে না।
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন করা হলে সেই ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর সদস্যর সহায়তা লাগবে, সেটা বিএনপি কেমন করে দেখছে, এই ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এডভোকেট আহমদ আজম খান বলেন, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচনের কথা আসলেই কেউ কেউ বলতে পারে বিদেশী সৈন্য মোতায়েন করার কথা। সেই বিদেশেী সৈন্য মোতায়ের বাইরে থেকে হোক সেটা বিএনপি চাইবে না। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছে। জাতিসংঘে তার অবদান ও তার কাজের গৌরব গাঁথা ইতিহাস রয়েছে। এই জন্য জাতিসংঘকে অনুরোধ করা হবে এখানে বাইরে থেকে সৈন্য আনার কোন দরকার হবে না। বরং জাতিসংঘ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তা নিতে পারে। তারাই নির্বাচনে কাজ করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এই পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন সেনাবাহিনীর সহায়তায় করা হয়েছে তার সবগুলোই সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। আসলে সেনাবাহিনীর সহায়তা ছাড়া একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্্ভব নয়। আমাদের দেশে নির্বাচনের সময়ে সেনাবাহিনী এর আগে সব সময় সহায়তা করে আসছে। প্রচলিত নিয়মও ছিল। সেই নিয়মেই তারা আগের মতো সহায়তা করতে পারবে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আর পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করবে জাতিসংঘ। এই জন্য তাদের কিছু লোকবল আসা দরকার হলে তারাও আসবে। সরকার এখন যেখানে ২০১৯ সালের আগে নির্বাচনের কোন পরিকল্পনাও করছে না, বিএনপির সঙ্গে কোন আলোচনাও করছে না সেখানে কেমন করে নির্বাচন হবে এই ব্যাপারে বিএনপির এখন সিনিয়র নেতা বলেন, সরকার নির্বাচন দিলেই ভাল হবে। জাতিসংঘর তত্ত্বাবধানে নির্বাচন করার পর যে জোট বিজয়ী হবে সেটা মেনে নিতে হবে।
সূত্র জানায়, বিএনপি মনে করছে, এই নির্বাচন করার আগেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে একটি চুক্তি হতে হবে। ওই চুক্তি অনুযায়ী এটা বলা থাকবে যে দলই নির্বাচিত হোক না কেন কোন ভাবেই নতুন নির্বাচিত সরকার বিরোধী দল, বিরোধী জোটের উপর কোন ধরনের নির্যাতন করতে পারবে না। দেশে বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ড, এনকাউন্টার বন্ধ করা হবে, রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা যাবে না। এছাড়াও জাতীয় কিছু বিষয় আছে সেই সব বিষয়ে ঐক্যমত হতে হবে। পাঁচ বছর পর পর নির্বাচন করা নিয়ে যে সংকট তৈরি হয় সেই সমস্যা কাটানোর জন্য নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়েও বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ঐক্যমত হতে হবে। এই চুক্তি বিএনপি ক্ষমতায় আসলেও মানতে হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেও মানতে হবে।
বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা বলেন, ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতিসংঘের মাধ্যমেই আলোচনা হয়েছিল। অবস্থার অগ্রগতিও হয়েছিল। পরে আবার সেটা বদলে গেলো। তা হলেও আমরা মনে করি এখনও সময় আছে জাতিসংঘর তারানকো যেখানে আলোচনা করে গিয়েছিলেন সেখানে থেকে আলোচনা করতে হবে। এরমধ্যে যদিও সরকার দশম নির্বাচন করে সরকার গঠন করেছে। সেটা তারা বাদ দিতে চাইবে না এই কারণেই সেই অংশটুকু বাদ দিয়ে এরপর থেকে কেমন করে নির্বাচন করা যাবে সেটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তিনি বলেন, কেবল দুই দলের সঙ্গেই আলোচনা করে জাতিসংঘ সিদ্ধান্তô নিতে না চাইলে সেই ক্ষেত্রে অন্যান্য দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও আলোচনায় থাকতে পারেন। সকলের সম্মিলিত মতামত নিয়েই সমস্যার সমাধান হতে পারে।
সরকারের একজন নীতিনির্ধারক মন্ত্রী বলেন, বিএনপি অনেক রকম পরিকল্পনা করতে পারে নিজেদের সুবিধার জন্য। কিন্তু আসলে এর কোনটি হবে না। বিদেশীদের মধ্যস্থতায় ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় কোন সমাধান আপাতত হবে না।