বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন, অনৈক্য ও বিবাদ যেভাবে বাড়ছে ঠিক সেভাবেই বাড়ছে প্রতিপক্ষ দলগুলোকে আক্রমণের ভাষার তীক্ষ্ণতাও। বাড়ছে প্রধানমন্ত্রীর লাগামহীন কথাবার্তা ও কটুবাক্য। দেশের আইন প্রণয়নের সর্বোচ্চ স্থান সংসদ এখন খিস্তি খেউড়ের আখরায় পরিণত হয়েছে। সংসদে কখনো প্রতিপক্ষকে কটুবাক্যে আঘাত করা হয় আবার কখনও গান বাজনায় মেতে উঠে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ। নাগরিকরা বলছেন, সন্তানদের সাথে বসে এখন আর টিভিতে সংসদ অধিবেশন দেখা যায় না। পলিটিক্যাল ডিসকোর্স না করে রাজনীতিবিদরা অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করছে। সেই গালাগালিতে বাদ যায় না মৃত মানুষরা, বাদ যায় না শাড়ি, লিপিস্টিকের মতো জড় পদার্থরাও।
একসময় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নেতাদের মধ্যে যে বিতর্ক হতো সে বিতর্কের ভাষা ছিল সভ্যদের ভাষা। বিতর্কের মধ্যদিয়ে নেতাদের আভিজাত্যতা, ব্যক্তিত্ববোধ ও রুচিবোধ ফুটে উঠতো। আজকাল সেরকম বিতর্ক টকশোতে পর্যন্ত কল্পনা করা যায় না। রাজপথে বা সংসদেতো নাই। ইদানিং টকশোতেই সরাসরি ঝগড়া, মারামারি ও হাতাহাতির ঘটনা অহরহই ঘটতে দেখা গেছে। ইদানিং সাংবাদিকরাও শেখ হাসিনার সামনে প্রশ্ন রাখতে ভয় পান। কেন না হাসিনা কখন কি মন্তব্য করবেন কেউ ভাবতে পারে না। প্রশ্নকর্তাকে অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় শেখ হাসিনার মুখে নোংরা ও কুরুচিপূর্ণ কথা শুনে। এইত কয়েকদিন আগে শেখ হাসিনা সাবেক প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন তার জবাবে সময়ের সাথে অনুষ্টানে একজন দর্শক বলেন, হাসিনার মুখের ভাষা নিষিদ্ধ পল্লীর মহিলার চেয়েও জঘন্য।
রাজনীতিবিদদের কাম্য ভাষা কেমন হওয়া উচিত জানতে চাওয়া হলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ছাত্র সাইফুদ্দিন মানিক জানায়, রাজনীতিবিদরা জনগণের জন্য কথা বলবে, পলিটিক্যাল ডিসকোর্স হবে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের বিষয় নিয়ে। পারসোনাল এ্যাটাক আমরা আশা করি না।
বেশ কিছুদিন ধরে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে একাধিক অনুষ্টানে বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকটি দীর্ঘ বক্তব্য রেখেছেন। সেসব তিনি ইতিহাসের অসংখ্য তথ্য ও দলিল তুলে ধরে প্রমাণ করেন যে, শেখ মুজিব বাংলাদেশের প্রথম অবৈধ প্রধানমন্ত্রী এবং জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও স্বাধীনতার ঘোষক। পাশাপাশি তিনি শেখ হাসিনার ৫ জানুয়ারির পরের সরকারকে অবৈধ সরকার আখ্যা দিয়ে ৭৫ সালের দু:শাসন ও বর্তমান দু:শাসনের চিত্র তুলে ধরেছেন।
মহাজোটের নেতারা ও বুদ্ধিজীবীরা শেখ মুজিবকে নিয়ে তারেক রহমানের বক্তব্যগুলোকে ঔদ্ধ্যত্বপূর্ণ, ও শিষ্টাচার বহির্ভূত বলে দাবি করেছে । বিভিন্ন পত্র- পত্রিকায়ও এই বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। প্রচলিত ইতিহাসের বিপরীতে নতুনভাবে ইতিহাস তুলে ধরাটাকে ভাল চোখে দেখেনি আওয়ামী ভাবাপন্ন বিশ্লেষকরা। বিভিন্ন গণমাধ্যম তারেক রহমানের বক্তব্যের বিরোধীতাও করেছেন। এমনকি তারেক রহমানের প্রতিটি বক্তব্যের পর আওয়ামীলীগ ও বামদলুগলোর নেতারা শিষ্টাচার বহির্ভূত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ `বেয়াদব‘ ও `তুই‘ সম্বোধন করে জিয়াউর রহমান ও তারেক রহমানকে কটুক্তি করেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিমও তারেক রহমানকে `বেয়াদব‘ বলে আখ্যায়িত করেছে। বামনেতা মাঈনুদ্দিন খান বাদল. জাতীয় পার্টির নেতা ফিরোজ রশিদ, আওয়ামী নেত্রী মতিয়া চৌধুরী, শেখ সেলিমসহ অসংখ্য নেতারা সংসদে এবং সংসদের বাইরে যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে সেটাকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো ও চায়ের টেবিলে পর্যন্ত মানুষ অমার্যিত ভাষা প্রয়োগ হিসেবে মনে করেছে।
তারেক রহমানের ইতিহাস নিয়ে বক্তব্য রাখার এক বছরের উপরে চলছে আজ কিন্তু অদ্যাবধি আওয়ামিলীগ বা তাদের মহাজোটের বামদলগুলোর কেউ প্রমান করতে সক্ষম হয়নি যে তারেক রহমানের বক্তব্য সঠিক ছিলনা। বরঞ্চ আজ প্রমানিত হয়ে গেছে তারেক রহমান ইতিহাসের আলোকে যে সত্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তা সম্পূর্ণ সত্য ও নির্ভুল। প্রশ্ন উঠতে পারে স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর এমন ঐতিহাসিক ভুল সংশোধন করার দায়িত্ব তারেক রহমান নিলেন কেন। এর উত্তরে আমি বলব জনাব সিরাজুল আলম খান সাহেব একটি অত্যন্ত গুরত্ব এবং তাত্পর্যপূর্ণ কথা বলেছেন, তিনি বলেছেন যেকোন দেশের সঠিক ইতিহাস শুরু হয় (বা শুরু হওয়া ভাল) সাধীনতার ৪০-৫০ বছর পরে। আর তারেক রহমান এই কাজটি শুরু করেছেন বলে সিরাজুল আলম খান তারেক রহমানের প্রশংসা করেছেন।
বাবা শেখ মুজিবকে ‘রাজাকার’ আর নিজেকে ‘রংহেডেড’ বলায় তারেক রহমানের উপর চরম ক্ষেপেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেখে নেয়ার হুমকিও দেন। নাগরিক সমাজ বলছে, হাসিনার বক্তব্য শূনে মনে হয়েছে তিনি আবার ‘রংহেডেড’ আচরণ করছেন।
বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্যে করে হাসিনা বলেছেন, তারেক রহমানের জিভ সামলা। তা না হলে সমুচিৎ জবাব দেওয়া হবে। তারেক রহমানকে ‘অশিক্ষিত জানোয়ার’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, লেখাপড়া শেখেনি, জানোয়ারের মতো কথা বলে। জানোয়ারের শিক্ষা কিভাবে দিতে হয়, তা জানা আছে।
হাসিনার এসব বক্তব্যতে আদালত দ্বারা ঘোষিত তার ‘রংহেডেড’ চরিত্রের বহি:প্রকাশ অথবা হাব্রিস সিনড্রমে আক্রান্ত বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন নাগরিক সমাজ। ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক বলেছেন, শেখ হাসিনার ক্ষিপ্ততা আর গালাগালিই প্রমাণ করে যে তারেক সত্য ইতিহাস তুলে ধরেছেন। তা নাহলে হাসিনা এতো ক্ষেপবেন কেন? হাসিনা যদি স্বাভাবিক মস্তিষ্কের হতেন তাহলে নিশ্চয় তারেকের বক্তব্যকে এড়িয়ে যেতেন অথবা তারেকের বক্তব্যের ভূল ত্রুটি তুলে ধরতেন। উল্টো হাসিনা দেখে নেয়ার হুমকি দিটেন না। যেটা কোন প্রধানমন্ত্রীর ভাষা হতে পারে না।
সাবেক আওয়ামীলীগ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের নীতিনির্ধারক এ বিষয়ে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর এতোটা ক্ষিপ্ততা মানায় না। তারেকের বক্তব্যের সাথে একমত না হলেও স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে তিনি তথ্য, প্রমাণ যুক্তি সহকারে তুলে ধরেছেন তার দাবির পক্ষে। তারেকের এ দাবি তথ্য, প্রমাণ দিয়েই খন্ডন করা উচিৎ। সেটা না করে অশ্লীল গালাগালি অন্তত প্রধানমন্ত্রীর মুখে মানায় না। কেন জানি তার (হাসিনার) কথায় মনে হচ্ছে বাস্তবে তার পায়ের তলায় মাটি নেই। যে কারণে তিনি আস্ফালন করছেন ইতিহাসের ব্যর্থ শাসকদের মতো।
তবে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অমার্যিত ও কুরুচিপূর্ণ প্রতিক্রিয়ার মধ্যদিয়ে কারও সমালোচনা মোটেও বিবেকপ্রসূত হতে পারে না। তারেক রহমানের দাবির সাথে একমত না হলে তাকে গালাগাল দিতে হবে এটা কোন রাজনৈতিক শিষ্টাচার নয়। বরঞ্চ, তারেক রহমানের দাবি যাই হোক তিনি খুবই ধীরস্থির, মার্যিত ও তথ্যভিত্তিক বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্য ভিন্নমতের মানুষের কাছেও সমাদৃত হয়েছে।
তারেক রহমান ইতিহাসের একটি দিক তুলে ধরেছেন। যে দিকটি নিয়ে ৭১ সাল থেকেই বিতর্ক রয়েছে। তারেক রহমান যদি কোন মিথ্যা ইতিহাস তুলে ধরেন তাহলে আওয়ামীলীগের উচিত তথ্য ও প্রমাণ দিয়ে সেই বক্তব্যকে মিথ্যা প্রমাণ করা। অথচ তা না করে আওয়ামীলীগের নেতারা অমার্যিত ভাষায় গালাগাল করলেও তিনি পাল্টা কোন গালি দেননি বরঞ্চ আরও বর্ণাঢ্য দালিলিক প্রমাণ হাজির করে জাতির সামনে উপস্থাপন করছেন তার দাবির পক্ষের যুক্তিগুলো। আওয়ামীলীগের কাছে প্রশ্ন রাখছেন এবং চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ছেন তার কথাকে মিথ্যা প্রমাণ করতে। আওয়ামীলীগের উচিত প্রশ্নগুলো দালিলিক উত্তর দিয়ে ইতিহাসের দায় এড়ানো।
তারেক রহমান ইতিহাসের তিনটি সত্য বিষয়কে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে এসেছেন। যা লন্ডনে নির্মিত একটি ডকুফিল্মটিতে তারেক রহমানের দাবিগুলোর সত্যতা প্রামাণিকভাবে প্রমাণ করা হয়েছে। ডকুমেন্টারিতে দেশি বিদেশি কয়েকশ পত্র- পত্রিকা, গ্রন্থ ও সাক্ষাতকারকে ভিজুয়ালি তুলে ধরা হয়েছে। যেসব গ্রন্থকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে তার অধিকাংশই আওয়ামীলীগের বা তাদের মনোভাবাপন্ন লেখকদের গ্রন্থ। এছাড়াও, দেশি বিদেশি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য লেখক, সাংবাদিক ও ইতিহাসবিদদের রেফারেন্সও ব্যবহার করা হয়েছে। এই ডকুফিল্মটি নির্মাণ করা হয়েছে আওয়ামীলীগের মিথ্যাচারের জবাব দেয়ার জন্য আর জাতির সামনে তুলে ধরার জন্য যে, আওয়ামীলীগের অমার্যিত ও রুচিহীন প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে বিএনপি তথ্যভিত্তিক ও মার্যিত উত্তর দেয়। তারেক রহমান যেভাবে খিস্তি খেউড়ের বিপরীতে মার্যিত ভাষায় বক্তব্য রেখেছেন এবং রাখছেন তাতেই প্রমাণ হয় যে, ভবিষ্যত রাজনীতির জন্য তারেক রহমান একটি সম্ভাবনাময় আদর্শ। তারেক রহমানের জন্য দেশ নয় দেশের জন্য তারেক রহমানের প্রয়োজন। যারা তারেক রহমানের বক্তব্যকে কুরুচিপূর্ণ ও ঐদ্ধত্বপূর্ণ বলছে তাদের ভাষাই অসভ্যদের ভাষা। সংসদ ও রাজপথে রাজনীতিবিদ বিশেষ করে ক্ষমতাসীনদের অশ্রাব্য ভাষা শুনতে শুনতে মানুষ আজ রাজনীতিবিদদের উপর থেকে শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে ফেলেছিলাম। তারেক রহমানের তথ্যভিত্তিক ও মার্যিত ভাষা প্রয়োগ জনগনকে আশাবাদী করেছে। এছাড়াও, তিনি বাংলাদেশের ভবিষ্যত উন্নয়ন পরিকল্পনাকে জাতির সামনে তুলে ধরেছেন।
আওয়ামীলীগের উচিত ছিল নিকৃষ্ট জীবের মোট গালাগাল না করে পাল্টা তথ্য ও প্রমাণ তুলে ধরে তারেক রহমানের যুক্তি খন্ডন করা। সেক্ষেত্রে আওয়ামী নেতাদের বক্তব্যে দেশের মানুষ হতাশ হয়েছে। যেমন হতাশ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের উপঅধিনায়ক এ কে খন্দকার এর একটি বই লেখার প্রতিক্রিয়ায় মহাজোট নেতাদের বক্তব্যে।
তারেক রহমান শুধু ইতিহাসের তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরে জনগনকে আকৃষ্ট করেন নি, তার ভাষাপ্রয়োগ ও প্রতিপক্ষকে শ্লীল ভাষায় আঘাত করা শৈল্পিক দিকটি দেশের মানুষকে মুগ্ধ করেছে। তারেক রহমানের বক্তব্য নিয়ে সমানভাবে আলোচনা সমালোচনা চললেও গুরুত্বের দিক থেকে বক্তব্যগুলোর মূল্য রাজনীতিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। তারেক রহমানের বক্তব্যকে নেহাতই বক্তব্য মনে করছে না কোন পক্ষই। কারণ তার প্রতিটি বক্তব্য সবমহলে আলোড়ন সৃষ্টি করছে। রাজনীতিবিদদের বক্তব্য নেহাত বক্তব্য না হয়ে এরকম আলোড়ন সৃষ্টিকারী বক্তব্য হওয়া উচিত। তাতে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যদিয়ে সুস্থ রাজনৈতিক চর্চা ও সঠিক ইতিহাস বের হয়ে আসে। কেউ কেউ তারেক রহমানের বক্তব্যের ভূয়সী প্রশংসা করছেন আবার তার বিরুদ্ধে মামলা, লিগাল নোটিশও দেয়া হয়েছে। রাজনীতির মাঠে তারেক রহমানের বক্তব্য গণমাধ্যমের যখন হটকেকে পরিণত হয় ঠিক তখনই এই সরকার তারেক রহমানের বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচার করতে আদালতকে ব্যবহার করে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
সূত্রঃ নিউজবিডি৭