২০ দলের টার্নিং পয়েন্ট ফেব্রুয়ারি, যা করার এ মাসেই

0

Bnp_1চলতি ফেব্রুয়ারি মাসকে রাজনীতির জন্য টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। সব দলের অংশগ্রহণে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আদায়ে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারের পাশাপাশি চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে গতি আনার পরিকল্পনা এ জোটের।

বিএনপি ও ২০ দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য জানা গেছে।

২০ দলীয় জোট নেতারা বলছেন, ৬ জানুয়ারি থেকে থেকে শুরু হওয়া টানা অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচির দেড় মাসে মূলত ঢাকা থেকে সারাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। গত বছরের ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ ‘ভোটারবিহীন নির্বাচন’ করার কারণেই দেশে এ রাজনৈতিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই এ সঙ্কট থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারে বলে মনে করেন তারা।

দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাসহ দেশী-বিদেশী অন্যান্য সংস্থাও উদ্বিগ্ন। তারা সবাই চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজছেন। ইতোমধ্যে সুশীল সমাজ ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা সঙ্কট নিরসনে দুই প্রধান জোট বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মধ্যে সংলাপের দাবি করে আসছেন।

বাংলাদেশের চলমান রাজনীতির গতি প্রকৃতির উপর নজর রাখার পাশাপাশি সঙ্কট সমাধানে উভয় জোটকে (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোট) সমঝোতায় বসার তাগিদ দিচ্ছে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলো। এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরে এসেছে। সামনে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোও ঢাকা সফরে আসছেন। এসবকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট তাদের কূটনৈতিক সফলতা হিসেবে দেখছে।

২০ দলের একাধিক নেতা জানান, চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের বাকি দিনগুলোকে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে ধরে তারা কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারের পাশাপাশি চলমমান আন্দোলনকে আরও গতিশীল করতে চায়। তা না হলে পরিস্থিতি সরকারের অনুকূলে চলে যাবে। এ জন্য জোটের মাঠের নেতাকর্মীদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে সব ধরনের সহিংসতা থেকে দূরে থাকার নির্দেশনা রয়েছে কেন্দ্রের।

এ ব্যাপারে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মে. জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘২০ দলের নেতাকর্মীরা হাজারো মামলার চাপ মাথায় নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য আমি তাদের ধৈর্যের প্রশংসা করি এবং আরও ধৈর্য আশা করি। আন্দোলনের মাঝপথে এসে পিছু হঠার কোনো সুযোগ নেই। এতে ২০ দলের নেতাকর্মীদের সরকার ধাওয়া শুরু করবে। জুলুম নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিবে।

সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, চলতি মাস জোটের জন্য টার্নিং পয়েন্ট। স্নায়ুগতভাবে সরকার দুর্বল হয়ে আসছে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ হবে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে চলা স্নায়ুযুদ্ধের শক্তি পরীক্ষার শেষ পর্যায়। সরকারের শক্তি আমাদের চেয়ে অনেক গুণ বেশি হলেও মনোবলের দিক থেকে তারা পিছিয়ে রয়েছে।

চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে আন্তর্জাতিক মহলও গুরুত্ব সহকারে এগিয়ে আসছে উল্লেখ করে জোটের অন্যতম এ শীর্ষ নেতা বলেন, ইইউ প্রতিনিধি দল ঢাকায় সফরে এসেছেন। তারা জোট নেত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আমেরিকার রাষ্ট্রদূত সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘চাইলে আপনাদের পাশে দাঁড়াতে পারি’ এটি একটি মাইলফলক বক্তব্য। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন দুই নেত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়াকে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো ফোন দিয়েছেন। তিনি আবার ঢাকা সফরেও আসছেন। তার মানে বহির্বিশ্বও চাচ্ছে বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান হোক।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী জাতিসংঘ মহাসচিবের দুই নেত্রীকে চিঠি, বিএনপি চেয়ারপারসনকে তারানকোর ফোন এবং তারানকো-নিশা দেশাইয়ের মধ্যে বাংলাদেশের চলমান সঙ্কট নিয়ে বৈঠককে আশাব্যঞ্জক হিসেবেই দেখছেন। এটিকে কূটনৈতিক সফলতাও মনে করেন তিনি। দ্য রিপোর্টকে এ বিষয়ে তিনি বলেন, সব মিলিয়ে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান আন্তর্জাতিক মহলও চায়। তা না হলে তো তারা আসতেন না।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে এ সঙ্কট তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগ বলেছিল ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি যেমন নির্বাচন করেছিল তেমনি এটি (৫ জানুয়ারি-২০১৪) সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার নিয়মরক্ষার নির্বাচন। এক বছরের মধ্যে সব দলের অংশগ্রহণে মধ্যবর্তী নির্বাচন দেবে। কিন্তু তারা তা না করে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গুম, হত্যা ও নির্যাতন শুরু করল। বিএনপি এখন সর্বাত্মক আন্দোলনে চলে গেছে। সারাদেশে প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মী জেলে।

তিনি বলেন, চলমান আন্দোলন বিএনপি চালিয়ে যাবে। কারণ বিএনপির আর কোনো উপায় নেই। আন্দোলন বন্ধ করলে বিএনপির রাজনীতি শেষ হয়ে যাবে।

রুহুল আলম চৌধুরী বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দিয়ে ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) বলেছিলেন, ‘ডিসেম্বরে আন্দোলন শুরু হবে, মার্চে গিয়ে এর যৌক্তিক পরিণতি হবে।’ আন্দোলনের রূপরেখা করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি নিজে সরাসরি সবকিছুর তদারকি করছেন-নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। তাই আন্দোলনের যৌক্তিক পরিণতি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হবে নাকি এক মাসের মধ্যে হবে তা তিনিই বলতে পারবেন।

এ বিষয়ে ২০ দলীয় জোটের আরেক শরিক এলডিপির সভাপতি কর্নেল অলি আহমেদ (অব.) বীরবিক্রম দ্য রিপোর্টকে বলেন, ২০ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অঘোষিতভাবে অবরূদ্ধ রাখা হয়েছে। তিনি কার্যালয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ভেতরে খাবার পর্যন্ত পাঠাতে দেওয়া হচ্ছে না। সর্বতভাবে বিরোধী দলের রাজনীতি ধ্বংসের পরিকল্পনায় এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। কিন্তু বিরোধী দলের ধ্বংস করে কখনও গণতন্ত্র সুসংহত বা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয় না।

সরকার বলছে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হবে না-এ ক্ষেত্রে বিএনপি জোটের ভূমিকা কি?— জানতে চাইলে অলি আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ ও রাজনীতি দুর্নীতিগ্রস্ত-কলুষিত। লোভ এবং মোহে অন্ধ। আমরা আল্লাহর কৃতদাস। আল্লাহ নিশ্চয় তার বান্দাদের মুক্তির জন্য ব্যবস্থা নেবেন-এটাই দৃঢ় বিশ্বাস।’

এদিকে ২০ দলের শরিক জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান বুধবার রাতে এক বিবৃতিতে সরকারের ‘গণহত্যা, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও দেশব্যাপী নৈরাজ্য’-এর বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর করার আহ্বান জানিয়েছেন। ‍

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সরকার দেশের জনগণ ও গণতান্ত্রিক বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার জন্য নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More