ঢাকা: আগামী ২৯ ডিসেম্বর ঢাকা অভিমুখে অভিযাত্রার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। নির্বাচন প্রতিহত করতে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়াতে সারা দেশ থেকে সব শ্রেণীপেশার মানুষকে লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে এ অভিযাত্রায় অংশ নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন খালেদা।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘এ অভিযাত্রার নাম দেয়া হয়েছে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ বা ‘গণতন্ত্রের জন্য অভিযাত্রা’। .রাজধানীমুখী এ অভিযাত্রার স্লোগান হবে ‘নির্বাচনকে না, আর গণতন্ত্রকে হ্যাঁ’।’
এ অভিযাত্রায় সরকারকে বাধা না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘গণতন্ত্রের জন্য জনগণের এ অভিযাত্রায় বাধা দেবেন না।’ এসময় পুলিশ প্রশাসনকে এ অভিযাত্রায় সহযোগিতা করতে এবং ঢাকায় হোটেল রেস্তোঁরা খোলা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনের শেষ অংশে চলমান আন্দোলনে চার দফা করণীয় ও নীতি-কৌশল তুলে ধরেন খালেদা জিয়া।
এরমধ্যে প্রথম দফা হলো- ভোটাধিকার হরণকারী ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী সরকারের বিরুদ্ধে প্রাণক্ষয়ী লড়াইয়ে যারা শরিক আছেন এবং হচ্ছেন তাদের মধ্যে সমন্বয়, সমঝোতা ও ঐক্য গড়ে তুলুন।
দ্বিতীয়, বিভক্তি ও বিভাজনের বিষাক্ত রাজনীতির চিরঅবসান ঘটানোর জন্য জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়কে মূল্য দিন। জাতীয় ক্ষেত্রে বিতর্কিত বিষয়সমূহ অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে আলাপ আলোচনা এবং গণভোটের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক পন্থায় মীমাংসার রাজনৈতিক সংকল্পকে জোরদার করুন। সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষ যা চায় না দেশের সংবিধানে তা থাকতে পারে না।
তৃতীয়, ভোটকেন্দ্রভিত্তিক সংগ্রাম কমিটিগুলোর পাশাপাশি দেশ ও গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনরত সকল পক্ষকে নিয়ে অবিলম্বে জেলা, উপজেলা ও শহরে ‘সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষা সংগ্রাম কমিটি’ গঠন করে পাঁচ জানুয়ারি নির্বাচনী তামাশা প্রতিহত করুন। প্রতিটি জেলার প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখুন এবং জনগণের জান, মাল ও জীবীকার নিরাপত্তা বিধানের ক্ষেত্রে স্ব স্ব নাগরিক দায়িত্ব পালন করুন।
চতুর্থ, গণতন্ত্রের এই সংগ্রামে সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বী, সম্প্রদায় ও জাতিগোষ্ঠির মানুষদের যুক্ত করার পাশাপাশি তাদের জান-মালের নিরাপত্তা লংঘণের সরকারি ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখুন, সজাগ থাকুন। কোন প্রকার সাম্প্রদায়িকতাকে বরদাশত করবেন না।
এই আন্দোলনকে আরো বিস্তৃত, ব্যাপক ও পরবর্তী ধাপে উন্নীত করার লক্ষ্যে আগামী ২৯ ডিসেম্বর রোববার সারা দেশ থেকে দলমত, শ্রেণী-পেশা, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সক্ষম নাগরিকদেরকে রাজধানী ঢাকা অভিমুখে অভিযাত্রা করার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, ‘এই অভিযাত্রা হবে নির্বাচনী প্রহসনকে ‘না’ বলতে, গণতন্ত্রকে ‘হ্যাঁ’ বলতে। এই অভিযাত্রা হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অর্থবহ নির্বাচনের দাবিতে। এই অভিযাত্রা হবে শান্তি, গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকারের পক্ষে। এই অভিযাত্রা হবে ঐতিহাসিক। আমরা এই অভিযাত্রার নাম দিয়েছি: ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’, গণতন্ত্রের অভিযাত্রা।’
তিনি আহ্বান জানান, ‘বিজয়ের মাসে লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা হাতে সকলেই ঢাকায় আসুন। ঢাকায় এসে সকলে পল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মিলিত হবেন। আমার আহ্বান এই অভিযাত্রায় ব্যবসায়ীরা আসুন, সিভিল সমাজ আসুন, ছাত্র-যুবকেরাও দলে দলে যোগ দাও।
মা-বোনেরা আসুন, কৃষক-শ্রমিক ভাই-বোনেরা আসুন, কর্মজীবী-পেশাজীবীরা আসুন, আলেমরা আসুন, সব ধর্মের নাগরিকেরা আসুন, পাহাড়ের মানুষেরাও আসুন। যে যেভাবে পারেন, বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে, অন্যান্য যানবাহনে করে ঢাকায় আসুন। রাজধানী অভিমুখী জনস্রোতে শামিল হোন।’
একই সঙ্গে যারা রাজধানীবাসীর প্রতি তিনি বলেন, ‘আপনারাও সেদিন পথে নামুন। যারা গণতন্ত্র চান, ভোটাধিকার রক্ষা করতে চান, যারা শান্তি চান, যারা গত পাঁচ বছরে নানাভাবে নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, শেয়ারবাজারে ফতুর হয়েছেন সকলেই পথে নামুন।’
এসময় জনতার এ অভিযাত্রায় কোনো বাধা না দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘যানবাহন, হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ করবেন না। নির্যাতন, গ্রেপ্তার, হয়রানির অপচেষ্টা করবেন না। প্রজাতন্ত্রের সংবিধান নাগরিকদের শান্তিপূর্ণভাবে সমবেত হওয়ার অধিকার দিয়েছে। সেই সংবিধান রক্ষার শপথ আপনারা নিয়েছেন। কাজেই সংবিধান ও শপথ লঙ্ঘন করবেন না।’
সরকারকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে বাধা এলে জনগণ তা মোকাবিলা করবে। পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচি দেয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকবে না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বলছি, দেশবাসীর এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি সফল করতে প্রয়োজনীয় সহায়তা আপনারা দেবেন।’