সিরাজাম মুনিরা ঝুমানা
ইসলাম আল্লাহর মনোনীত স্বভাবজাত এবং ন্যায়নীতির ভারসাম্যপূর্ণ মধ্যমপন্থী দ্বীন। দুনিয়া ও আখেরাতে সব কল্যাণ ও মঙ্গলের আবেষ্টনকারী এবং একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থার নাম ইসলাম। মানবজাতির সব সদস্যই ইসলামের দৃষ্টিতে সাম্য ও সম্মান পাওয়ার অধিকার রাখে, যা বর্ণ ও গোত্রের বিভাজনমালিন্য থেকে মুক্ত। ইসলাম উদারতার ধর্ম, যার মূল ভিত্তি কুরআন ও সুন্নাহ। যেখানে জবরদস্তি ও অসহিষ্ণুতার কোনো স্থান নেই। সভ্যতা ও ভৌগোলিক অবস্থানের বিচারে ইসলাম এসেছে পশ্চাৎপদ আরব সমাজে। রাসূল সা: সেই আরবকেই পরিণত করেছেন উন্নত জাতিতে। মানব ইতিহাসে তিনিই প্রথম এমন একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা পেশ করেছেন, যা আত্মিক ও বৈষয়িক উভয় দিক থেকে মানুষের সঙ্কটমুক্তির দায়িত্ব নিয়েছে। তিনি বিভিন্ন গোত্রের মানুষকে পরস্পরের ভাইয়ের মতো থাকার এবং বিভিন্ন মতাদর্শকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার শিা দিয়েছেন। মহানবী সা:-এর জীবনাদর্শ হলো এই মহান দ্বীনের বাস্তব প্রয়োগ। আমরা সবাই রাসূলের উম্মত। তিনি আমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন বন্ধুত্ব, সহিষ্ণুতা, মানুষকে সম্মাননা, নিরাপদ সহাবস্থান, পপাতমুক্ততা ও শান্তির বাণী।
সহিষ্ণুতা : সহিষ্ণুতা শব্দটি ব্যাপক অর্থ বহন করে। আভিধানিক অর্থে সহ্যকরণ, ধৈর্যধারণ, বরদাশতকরণ, প্রতীা ইত্যাদি বোঝায়। ইংরেজি ‘বহফঁৎব’ আর আরবি ‘সবর’ শব্দদ্বয় সহিষ্ণুতা শব্দের সমার্থক। সহিষ্ণুতা নিঃসন্দেহে মানবিক গুণাবলির মধ্যে শ্রেষ্ঠতম এবং সামাজিক মূল্যবোধ নির্মাণের তাৎপর্যপূর্ণ বুনিয়াদ।
পরমত : পৃথিবীতে ব্যক্তিভেদে মানুষের চিন্তাচেতনায় বৈচিত্র্য রয়েছে। পারস্পরিক বিষয় ভাবনাকে নিজস্ব দৃষ্টিকোণে ব্যাখ্যা দেয়াকে ব্যক্তির মত বলে গণ্য করা হয়। মতের মিল না হলেই মতবিরোধ দেখা দেয়। অপরের কথা, বক্তব্য, মতামত, পরামর্শ ও জীবনাচার যতই বিরক্তিকর ও আপত্তিকর হোক না কেন তা সহ্য করার মতো ধৈর্য যদি মানুষের মধ্যে না থাকে, তাহলে সমাজে নৈরাজ্য, উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে বাধ্য। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যদি বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে আধিপত্যবাদ, স্বৈরাচার সমাজ ও রাষ্ট্রে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
ইসলামের আলোকে পরমতসহিষ্ণুতা : ধর্মবিশ্বাস ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হচ্ছে নাগরিক অধিকার। কারণ সহনশীলতার অভাবে মতপ্রকাশ বাধাগ্রস্ত হলে সুষ্ঠু সমাজ বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। বিবেকের স্বাধীনতা না থাকলে ব্যক্তি হয়ে পড়ে নির্জীব। চূড়ান্ত ও স্থায়ী শান্তির ধর্ম ইসলাম। তাই পরমতসহিষ্ণুতার দিকটি এতে যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে।
ক. সমাজে প্রত্যেক নাগরিকের ধর্মবিশ্বাস ও নিজস্ব চিন্তাধারা পোষণ ও লালনের অধিকার ইসলাম দিয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘ধর্মের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই।’ (সূরা বাকারা : ২৬৫)। মানবজাতির প্রতি মহানবী সা:-এর দায়িত্ব সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘আপনি তো জবরদস্তিকারক নন, বরং উপদেশদাতা মাত্র।’ (সূরা গাশিয়াহ : ২১-২২)।
খ. ধর্মবিশ্বাসের স্বাধীনতার ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশ জবরদস্তি না করার মধ্যে কেবল সীমাবদ্ধ নয়, বরং কারো অনুভূতি যাতে আঘাতপ্রাপ্ত না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মূর্তিপূজারিদের প্রতিমার উদ্দেশ্যে কোনো বিরূপ মন্তব্য করা যাবে না, এটা কুরআনেরই নির্দেশÑ ‘আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে তারা ডাকে তাদেরকে তোমরা গালি দিও না।’ (সূরা আনআম : ১০৮)। তেমনিভাবে অশালীন মন্তব্য করা থেকেও বিরত থাকতে বলেছে কুরআনÑ ‘তোমরা উত্তম পন্থা ব্যতীত ইহুদি-খ্রিষ্টানদের সাথে তর্কে লিপ্ত হয়ো না।’ (সূরা আনকাবুত : ৪৬)।
গ. ‘মুুসলিমগণ পরস্পর ভাই ভাই। অতএব তোমরা অপর কোনো পুরুষকে উপহাস করো না, কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী অপো ভালো হতে পারে। আর কোনো নারী অপর কোনো নারীকে উপহাস করো না, কারণ যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারিনী অপো উত্তম হতে পারে। আর তোমরা অপরকে মন্দ নামে ডেকো না।’ (সূরা হুজরাত : ১০-১১)।
ঘ. একদা রাসূল সা:-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল শ্রেষ্ঠ মানুষ কে? তিনি বলেছিলেন, ‘প্রত্যেক শুদ্ধ হৃদয়, আল্লাহভীরু, পরিচ্ছন্ন, সত্যভাষী ও সহিষ্ণু ব্যক্তি।’
ঙ. মতপ্রকাশের স্বাধীনতার েেত্র ইসলাম সব সময় সহিষ্ণু মনোভাব প্রদর্শন করেছে। ‘পরমত আর মতপার্থক্য সব সময়ই থাকবে।’ (সূরা হুদ : ১১৮)। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত রাসূল সা: বলেছেন, ‘স্থান, কাল, পাত্র বিবেচনা না করে যে ব্যক্তি কাঠিন্য আরোপ করে সে ধ্বংস হবে।’ (মুসলিম)।
চ. জবরদস্তিমূলক প্রচারণা এবং জোর করে ধর্মবিশেষকে চাপিয়ে দেয়ার পদ্ধতিকে ইসলাম অনুমোদন করে না। এমনকি স্বয়ং রাসূল সা:-কে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আপনি (মুহাম্মদ) জোরজবরদস্তিমূলক প্রচারণা থেকে মানুষকে সতর্ক করুন। আপনার হৃদয় যদি পাষাণ হতো আর ভাষা যদি কর্কশ হতো, তাহলে লোকেরা আপনাকে ছেড়ে দূরে চলে যেত।’ (সূরা আল ইমরান : ১৫৯)।
ছ. বিশ্বাস এবং মনোজাগতিক প্রক্রিয়ার কারণে ইসলামে ধর্মীয় মতভেদ ও বিতর্ককে একটি বন্ধুত্ব ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পরিচালিত করার তাগিদ রয়েছে এবং এগুলোর ফলাফলকে সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর হাতে ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (সূরা নিসা : ৫৯)। আল্লাহ আরো বলেন, ‘পরমত থাকলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকেই ফিরিয়ে দিতে হবে। মতপার্থক্য দূরীকরণ কিতাব নাজিলের অন্যতম উদ্দেশ্য।’ (সূরা আল বাকারা : ২১৩)।
পরমতসহিষ্ণুতার ত্রে : পরমতসহিষ্ণুতার ত্রেগুলো রাসূল সা: প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রে প্রয়োগ করা হয়েছে।
১. অতীতের রাজতান্ত্রিক শাসনের পরিবর্তে একটি জনগণের রাষ্ট্র ও সরকারকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে ইসলাম। তাই এখানে পারস্পরিক মতামত প্রদানেও পরমতসহিষ্ণুতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আল্লাহ মুমিনদের পরামর্শ করে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন (সূরা আল ইমরান : ১৫৯)।
২. ধর্মের ব্যাপারে জবরদস্তি মুনাফেকির জন্ম দেয়। আল কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘দ্বীনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই।’ (সূরা বাকারা : ২৬৫)। ‘সকল ভিন্নমতের ফয়সালা হবে আখেরাতে।’ (সূরা আল গশিয়া : ১৭, আল ইমরান : ৫৫)।
৩. নৈতিকতার ব্যাপারে যেহেতু ব্যক্তির বিবেকের অভ্যন্তরীণ একটি প্রক্রিয়া ক্রিয়াশীল থাকে, সেহেতু নৈতিক উৎকর্ষ জোর করে আরোপ করা সম্ভব নয়। কারণ রাসূল সা: বলেছেন, অকপটতাই ধর্ম। এ েেত্রও পরমতসহিষ্ণুতার প্রয়োগ ল করা যায়। আল্লাহ বলেন, ‘ভালো আর মন্দ কখনো সমান হতে পারে না। অতএব, মন্দকাজের মোকাবেলা করো উত্তম উপায়ে। দেখতে পাবে তোমার শত্র“ও বন্ধু হয়ে যাবে।’ (সূরা হা-মিম আস সিজদা : ৩৪)।
৪. ধর্ম ত্যাগ করার মতো গুরুতর অপরাধবোধের জন্যও জাগতিক শাস্তির বিধান মঞ্জুর করে না আল কুরআন। তাই রাসূল সা: তার ইসলামী রাষ্ট্রে পরমতসহিষ্ণুতার এই ধারাটি চালু রেখেছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘অপরের ভিন্নমত থাকলে সেই মতপার্থক্যের ফয়সালা আল্লাহর হাতে।’ (সূরা জুমার : ৪৬)।
৫. মুসলিম ও অমুসলিম উভয়েরই বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক মর্যাদা ও বিবেকের স্বাধীনতা রা করার বিধান দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহ হজরত জিব্রাইল আ:কে ওহির মাধ্যমে আদেশ দেনÑ ‘হে আমার প্রিয় বন্ধু, তোমার ব্যবহারকে উত্তম বানাও, এমনকি কাছের ব্যক্তির সাথেও। তাহলে তুমি আমার প্রিয় বান্দাদের মাঝে প্রবেশ করতে পারবে।’ (তিরমিজি)।
পরমতসহিষ্ণুতায় প্রিয়নবী সা: : আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রাসূল সা:কে উত্তম চরিত্রের সর্বোচ্চ চূড়ায় অধিষ্ঠিত করেছেন। সব দিক থেকে তাঁকে করেছেন শ্রেষ্ঠ। তাঁর নান্দনিক গুণাবলির মধ্যে সহিষ্ণুতা অন্যতম। সহিষ্ণুতা ও ােভ সংবরণে রাসূল সা: ছিলেন অনন্য। পরমতের প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধ ও সহিষ্ণুতা তার চরিত্রকে আরো উজ্জ্বল করেছে। মহানবী সা: নিজের জীবনে পরের মতামত ও বিশ্বাসের প্রতি সহানুভূতিপ্রবণ ছিলেন, ইতিহাসে তার অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে।
১. ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মক্কা থেকে উত্তরে ২৯৬ মাইল দূরে অবস্থিত তখনকার ইয়াসরিবে হিজরত করলেন। সেখানে তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন মদিনা রাষ্ট্র। সেই রাষ্ট্রের জন্য প্রণীত মদিনা সনদে পরমতসহিষ্ণুতার অনুরণন দেখা যায়। এতে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে একই জনগোষ্ঠীর শক্ত বুনিয়াদ রচিত হয়।
২. ৬২৮ খ্রিষ্টাব্দে মক্কা থেকে ৯ মাইল দূরে হুদায়বিয়ায় যে শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয় তার সূচনায় হজরত আলী রা: লিখেছিলেনÑ ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’। কিন্তু তা দেখে কুরাইশ মুশরিক প্রতিনিধি সুহায়ল বললÑ আমরা রহমানকে চিনি না, এ স্থলে লেখা হোক ‘বিসমিকা আল্লাহুম্মা’। তখন রাসূল সা: হজরত আলী রা:কে বলেছিলেন, ঠিক আছে। ওভাবেই লিখ। এরপর হজরত আলী রা: রাসূলুল্লাহ লিখলে সুহায়ল আপত্তি জানিয়ে বললÑ আমরা রাসূলুল্লাহ মানি না। রাসূলুল্লাহর স্থলে লিখুন মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ। এরপর প্রিয়নবী সা: বললেন, তোমরা মানো আর নাই মানো আমিই আল্লাহর রাসূল। এরপর তিনি হজরত আলী রা:কে বললেন, রাসূলুল্লাহ শব্দটি কেটে দাও। হজরত আলী রা: বললেন, আমি আমার কলম দিয়ে রাসূলুল্লাহ শব্দ কাটতে পারব না। তখন রাসূল সা: বললেন, ঠিক আছে, আমি নিজ হাতেই তা কেটে দিচ্ছি। এই বলে তিনি কলম দিয়ে রাসূলুল্লাহ শব্দ কেটে দিলেন। শুধু শান্তি প্রতিষ্ঠার খাতিরে তিনি সব কিছু মেনে নিলেন। পরমতসহিষ্ণুতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন রাসূল সা:। এই সন্ধিকে আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্ট বিজয় হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
৩. ওহুদের যুদ্ধে মহানবী সা:-এর মত ছিল মদিনা শহরের অভ্যন্তরে অবস্থান করে শত্র“র সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া। কিন্তু হজরত হামজা রা: এবং অপোকৃত যুবক সাহাবিগণ শহরের বাইরে কোনো উন্মুক্ত প্রান্তরে গিয়ে যুদ্ধ করার প্েয মতামত ব্যক্ত করেন। রাসূলুল্লাহ সা: তাদের মতামত গ্রহণ করে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন।
৪. এক যুদ্ধ অভিযানের সময় রাসূল সা: মুসলমানদের হুকুম দিলেন, অমুক জায়গায় তোমরা শিবির স্থাপন করো। এক সাহাবি জানতে চাইলেন, এই হুকুম কি আল্লাহপ্রদত্ত ওহি, নাকি আপনার নিজস্ব অভিমত? রাসূল সা: জবাব দিলেন, আমার ব্যক্তিগত অভিমত। সাহাবি বললেন, অমুক জায়গা শিবির স্থাপনের জন্য উপযোগী নয়, এর পরিবর্তে অমুক অমুক জায়গায় শিবির স্থাপন বেশি উপযোগী। রাসূল সা: তখন তার কথা মেনে নিলেন।
উপসংহার : পাশ্চাত্য চিন্তাবিদেরা ব্যক্তির পাঁচটি অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। অপর দিকে ইসলাম মানুষকে ১৭টি অধিকার সুনিশ্চিত করেছে। ১৯৪৮ সালে জাতিসঙ্ঘ ঘোষণায় মানবাধিকারের ৩২টি উপধারা ও ৩০টি ধারা বিশ্বে শান্তির সমাজ এনে দিতে পারেনি। কিন্তু আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে রাসূল সা: যে রূপরেখা দিয়েছিলেন, সেটি সর্বযুগেই হয়ে থাকবে বাস্তসম্মত ও যথার্থ। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার েেত্র ইসলাম সব সময় সহিষ্ণু মনোভাব প্রদর্শন করেছে। কারণ সহনশীলতার অভাবে মতপ্রকাশ বাধাগ্রস্ত হলে সুষ্ঠু সমাজ বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। বিবেকের স্বাধীনতা না থাকলে ব্যক্তি হয়ে পড়ে নির্জীব। আল্লাহর রাসূল মানুষের এই সহজাত অধিকার নিশ্চিত করেছেন। যে জাতি যত বেশি সহনশীল সে জাতি তত বেশি সুখী, সমৃদ্ধশালী ও অগ্রসর। ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পরিক বন্ধন, আস্থা, বিশ্বাস, সৌহার্দ্য সৃষ্টির জন্য পরমতসহিষ্ণুতার গুণ অপরিহার্য পূর্বশর্ত। রাসূল সা:-এর জীবনে এই অনন্য গুণটি সুশোভিত হয়ে উঠেছে। তর্ক-বিতর্ক ও কথাবার্তার জবাব তিনি দিয়েছেন নম্র ভাষায়, ক্রোধের জবাব তিনি দিয়েছেন সহনশীলতায় এবং মূর্খতামূলক হট্টগোলের জবাব দিয়েছেন গাম্ভীর্যপূর্ণ কথাবার্তার মাধ্যমে। আল্লাহর রাসূলের শিা হচ্ছে পারস্পরিক একতা, ভ্রাতৃত্ব, সমতা, ন্যায় ও কল্যাণের যেখানে সঙ্কীর্ণতা সম্পূর্ণই অনুপস্থিত। চরম হতাশাজনক ও ভেঙে পড়া একটি পরিবেশে আবির্ভূত হয়ে তিনি সমাজকে আবার গড়ে তুলেছেন। জাহেলিয়াত ও মূর্খতার মাঝে একটি পরিষ্কার বিভাজন টেনে দিয়েছেন। পৃথিবীকে দিয়েছেন একটি নতুন সমাজব্যবস্থা, নতুন চিন্তা ও উপলব্ধি এবং উপমাতুল্য একটি চেতনাকাঠামো। পরমতসহিষ্ণুতার অনন্য শিাকে কাজে লাগিয়ে তিনি সমাজকে শুদ্ধ করেছেন যেই সমাজের বৈশিষ্ট্য হচ্ছেÑ ক) মানবজাতির ঐক্য, খ) কল্যাণের বিকাশ ও মন্দের রুদ্ধকরণ, গ) মানবচিন্তার ঐক্য, ঘ) মানবতার সম্মান, ঙ) সমতা, চ) রাসূলের আনুগত্য। বর্তমান এই ঘুণে ধরা সমাজে রাসূলের আনীত আদর্শ বাস্তবায়নই একমাত্র সমাধান। রাসূলের উম্মত হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো এই সিরাতে তাইয়্যেবার প্রসার ঘটানো। মানুষ যেন সত্যের আহ্বানকারী ও কল্যাণকর কাজের সঞ্চালক হয়ে ওঠে, সেজন্য উদ্যোগ নিতে হবে আমাদের সবাইকে। চেষ্টা করতে হবে মানুষকে সহিষ্ণুতায় অভ্যাস করাতে, ধৈর্য ও বরদাশতযোগ্যতা অর্জন করাতে।
Prev Post
Next Post