বাংলাদেশের কান্না; পদ্মার শেষ সুধাটুকুও পান করতে ব্যস্ত জেলেরা

0

6181_1চিরচেনা পদ্মার সাথে জীবনের অন্তহীন সম্পর্ক। পদ্মার নদীতটে নদী উদ্ভুত জীবন ও জীবিকাকে কেন্দ্র করেই বাঙালীর বেঁচে থাকা। পদ্মাপাড়ের মানুষদের কাছে নদী আরও কাছের। পদ্মা মানুষকে ছেড়ে যেতে চাইলেও মানুষ পদ্মাকে ছাড়তে চাচ্ছে না। পদ্মার উজানে ভারতের অংশে ফাঁরাক্কা নামক মরণ বাঁধই উত্তাল নদীটির মুমূর্ষু হওয়ার কারণ। জীবিকার তাগিদে এই পদ্মার শেষ সুধাটুকুও পান করতে এখনো ব্যস্ত নদীপাড়ে টিকে থাকা জেলেরা।

গোদাগাড়ীর পদ্মাপাড়ের দু’ধারে অন্তত ৩০ হাজার জেলে পরিবারের বাস। হাজার বছর ধরে বংশ পরম্পরায় বাপ-দাদার পেশাকে আঁকড়ে আছেন তারা। পদ্মা এখন পানি-মাছ শূন্য ধু ধু বালুচর। কর্মশূন্য হয়ে পড়েছে এসব জেলেরা। ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে অপমৃত্যু হয়েছে পদ্মা নামের এই নদীটির। বাধ্য হয়ে জেলেরা নৌকার বৈঠা আর জালের স্থানে হাতে তুলে নিয়েছেন কোঁদাল, কাস্তে আর লাঙল।

http://www.timenewsbd.com/contents/public/201403/1394121536.jpg

গত আশ্বিনের শুরু থেকেই পদ্মায় পানি নেই। নদীর বুকে জেগে উঠেছে মাইলের পর মাইল বালুচর। কোথাও কোথাও আবার আদর্শ পলিমাটির আস্তরণ। এই পলিমাটিই নতুন করে বাঁচতে শেখাচ্ছে জেলেদের। পলিমাটিতে ফলিয়েছেন সোনার ফসল। কোথাও ধান আবার কোথাও চৈতালি ফসলের সোনালী ঝিলিক। গোদাগাড়ী উপজেলার বিজয়নগর পদ্মাপাড় থেকে রেলগেট পদ্মাপাড় পর্যন্ত যতদুর চোখ যাবে চোখে পড়বে কৃষকের সোনার ফসল।

http://www.timenewsbd.com/contents/public/201403/1394121495.jpg

কৃষকদের বেশিরভাগই পূর্বে পদ্মা নদীর জেলে কিংবা মাঝি ছিলেন। কিন্তু এখন কৃষক। জীবিকার তাগিদেই পেশা পরিবর্তন করেছেন তারা। গড়ে তুলেছেন কয়েক’শ ‘কৃষক সমবায়’। এই ‘কৃষক সমাবয়ের’ মাধ্যমে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়েছেন কৃষক ও জেলেরা। পদ্মার হাজার হাজার হেক্টর গো-চারণভূমিকে চাষের আওতায় এনেছেন তারা।

http://www.timenewsbd.com/contents/public/201403/1394120870.jpg

সম্প্রতি গোদাগাড়ীর পিরিজপুর এলাকায় পদ্মাচরের একটি ফসলি মাঠে দেখা হয় কয়েকজন কৃষকের সাথে। ১০৭ জন কৃষকের সমন্বয়ে এই মাঠটি কৃষক সমবায়ের মাধ্যমেই গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে প্রায় ৩শ বিঘা জমিতে এবার চৈতালি ফসলের চাষাবাদ হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে, মসুর ডাল, খেসারি ডাল, সরিষা ইত্যাদি।

http://www.timenewsbd.com/contents/public/201403/1394121745.jpg

এরপাশেই প্রায় শতাধিক বিঘা জমিতে বোরো আবাদ শুরু করা হয়েছে। বোরো ধানে সেচ দিতে জমির মাঝেই গভীর নলকুপ বসিয়ে ৭টি শ্যালো মেশিন চালু করা হয়েছে। শ্যালো মেশিনচালক মাইনুল ইসলাম (৪২) একটি মেশিন দেখা শোনা করেন। বাড়ি চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের পূর্ব কানাপাড়া গ্রামে। তিনি জানান, আগে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকার মাঝি ছিলেন। কিন্তু পদ্মায় এখন নৌকা চলেনা। তাই কৃষকদের পরামর্শে তার শ্যালো ইঞ্জিনটি দিয়ে গভীর নলকুপ বসিয়েছেন। বিনিময়ে অবশিষ্ঠ ১০৬ জন কৃষকের মতো তিনিও পাবেন ফসলের সমান ভাগ। তবে শ্যালো ইঞ্জিনের তৈলের খরচ বহন করবেন সবাই।

http://www.timenewsbd.com/contents/public/201403/1394121784.jpg

এদিকে সেখেরপাড়া গ্রামের জেলে সখিচরণ (৪৫) জানান, তিনি আগে পদ্মায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু পদ্মাতো এখন ধু ধু বালুচর! মাছ ধরার পেশা বন্ধ। তাই অন্যান্য জেলের মতো তিনিও পদ্মায় চাষাবাদে মন দিয়েছেন। চাষাবাদ করেই কোনমতে তার সংসার চলে যাচ্ছে। এখন অপেক্ষা আগামী ভরা মৌসুমের। পদ্মায় পানি আসলে আবারও মাছ ধরায় মন দেবেন সখিচরণ।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. এম সাইফুল আলম বলেন, প্রতিবছর ভরা মৌসুমে পদ্মার মাটির পরিবর্তন হয়। কোন কোন স্থানে পলি ও দো’আঁশ মাটির আস্তরণ পড়ে। এতে কোন সারের ব্যবহার ছাড়াই যে কোন ফসলই খুব ভাল উৎপাদন হয়ে থাকে। ফলে কৃষকরা ব্যপকভাবে লাভবান হন।

-মোরশেদ বিন মান্নান

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More