ফয়জুল জানান, ৩৮ বছরের চাকরিজীবনে তিনি প্রতি মাসের শুরুতেই স্ত্রীর কাছে তুলে দিতেন উপার্জনের সবটুকু অর্থ। যেহেতু কোনো সন্তান নেই, তাই সারা জীবনের রোজগারের অনেকটুকুই সঞ্চয় করেছিলেন তাজমুলি। সেই টাকার সঙ্গে মৃতা স্ত্রীর সোনা ও রুপার গয়না বেচে অর্থ জোগাড় করেন তিনি। সব মিলিয়ে ১১ লাখ রুপির মধ্যে নির্মিত হয়েছে তাজমহলের মূল দুটি ভবন। তবে এখনো কাজ বাকি অনেক। এই ভবনে মার্বেল পাথর লাগানো এবং চারপাশে সবুজ বাগান তৈরি করা হবে। তবে এই নির্মাণের জন্যও সঞ্চয় আছে অশীতিপর ফয়জুলের কাছে। তিনি জানান, বুলন্দ শহরে তাঁর ছোট্ট একটু জমি আছে, সেটুকু বিক্রি করে বাকি নির্মাণকাজ শেষ করবেন। ফয়জুলের এই নির্মাণকাজে নজর রাখছে উত্তরপ্রদেশ সরকারও। ইউপির পর্যটন কর্মকর্তা সুরেশ রাজে জানান, এই ব্যাপারে সরকার ফয়জুলকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে চেয়েছিল, কিন্তু তিনি কোনো সাহায্য নিতে রাজি নন। রাজের দাবি, ভবিষ্যতে এটি যে রাজ্যের অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রেমের পরীক্ষায় মোগল সম্রাট শাহজাহানকে চ্যালেঞ্জ জানালেন ভারতের উত্তরপ্রদেশের (ইউপি) এক অবসরপ্রাপ্ত পোস্টমাস্টার। শাহজাহানের নির্মিত আগ্রার তাজমহলের মতোই ইউপির বুলন্দ শহরের বাসিন্দা ৮০ বছরের বৃদ্ধ ফয়জুল হাসান কাদরি স্ত্রীর স্মৃতিকে ধরে রাখতে তৈরি করছেন এক ‘নতুন তাজমহল’। এরই মধ্যে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, বুলন্দ শহরের কসেরকলা গ্রামের বাসিন্দা ফয়জুল কাদরি পেশায় ছিলেন পোস্টমাস্টার।
স্ত্রী তাজমুলি বেগমকে বড্ড ভালোবাসতেন নিঃসন্তান ফয়জুল। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে রোগেভুগে মৃত্যু হয় তাঁর স্ত্রীর। মৃত্যুর সময় স্ত্রীকে কথা দেন, তাঁর স্মৃতিতে তিনি বানাবেন ছোট একটি তাজমহল। সেই কথা রাখতেই ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ফয়জুল শুরু করেছেন ‘নতুন তাজমহলের’ নির্মাণ। ভবনটি নির্মাণ করছেন আসগর নামে স্থানীয় এক মিস্ত্রি। স্মৃতিসৌধ তৈরির আগে এই কারিগরকে ফয়জুল আগ্রার আসল তাজমহলে নিয়ে যান। সেখানে তারা খুঁটিয়ে দেখেন বিপুল এই স্থাপত্যকর্মটির নকশা। এরপর নির্মাণকাজে হাত দেন তাঁরা।
প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজ বেগমের স্মৃতিকে ধরে রাখতে মোগল সম্রাট শাহজাহান আগ্রায় তৈরি করেছিলেন দুনিয়ার ভালোবাসার অন্যতম সেরা নিদর্শন তাজমহল। আর মা দিলরাস বানু বেগমের স্মৃতিতে দিল্লির কাছাকাছি ঔরঙ্গাবাদে ‘বিবি কা মকবরা’ নামে একটি স্মৃতিসৌধ তৈরি করেছিলেন আরেক মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব। এই দুটি স্থাপনা বিশ্ববাসীর কাছে ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার অন্যতম নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। সম্রাটদের তৈরি তাজমহল কিংবা বিবি কা মকবরার সঙ্গে অবশ্য তাজমুলির জন্য নির্মিত ‘নতুন তাজমহলকে’ এক সারিতে বসাতে চান না অবসরপ্রাপ্ত এই পোস্টমাস্টার। তবে হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফয়জুল হাসান কাদরির দাবি, সামর্থ্যে কমতি আছে সত্যি। তবে যদি ভালোবাসার প্রতিযোগিতায় হয়, সেখানে তিনি অনায়াসেই পাল্লা দিতেই পারেন মোগল সম্রাটদের সঙ্গে।