ক্ষুধার জ্বালায় আড়াই বছরের মেয়ে অনবরত কান্না করছিল। পকেটে যা টাকা ছিল তা দিয়ে বিস্কুট, চকোলেট কিনে এনে দেন রাহুল। কিন্তু তাতে খিদে না মেটায় তারপরেও কাঁদছিল মেয়ে। শেষমেশ বুকের মধ্যে জোরে চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে মেয়েকে হত্যা করেন। এরপর নিজেও আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন। পুলিশকে এসব বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন রাহুল পারামার। এই ঘটনা ভারতের।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বেঙ্গালুরুর কোলার থানার পুলিশ মেয়েকে খুনের অভিযোগে রাহুলকে গ্রেপ্তার করেছে। ৪৫ বছর বয়সী রাহুল গুজরাটের বাসিন্দা। কিন্তু কর্মসূত্রে থাকেন বেঙ্গালুরুতে।
পুলিশের কাছে তিনি দাবি করেছেন, একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করতেন। কিন্তু সেই কাজ চলে যায়। বিটকয়েনে বিনিয়োগও করেছিলেন। কিন্তু তাতেও বিপুল ক্ষতি হয়েছিল। এতে প্রচুর ধারদেনা করতে হয় তাকে।
পালিশ সূত্রে খবর, রাহুল আরও দাবি করেছেন, দেনার পরিমাণ এতটাই ছিল সোনার গয়নাও বিক্রি করতে হয়েছিল রাহুলকে। নিত্যদিন পাওনাদাররা বাড়িতে হানা দিতেন। ফলে সব মিলিয়ে দিশাহারা হয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।
রিপোর্ট, ১৫ নভেম্বর মেয়ে জিয়াকে স্কুলে দিতে যাওয়ার নাম করে তাকে নিয়ে গাড়িতে করে বাড়ি থেকে বেরোন রাহুল। কিন্তু সারাদিন কেটে যাওয়ার পরেও স্বামী-সন্তান না ফেরায় রাহুলের স্ত্রী ভব্য বাগালুর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। কিন্তু তার পর দিনই বেঙ্গালুরু-কোলার হাইওয়ের ধারে একটি হ্রদে জিয়ার দেহ উদ্ধার হয়।
জেরায় পুলিশকে রাহুল জানিয়েছেন, ১৫ নভেম্বর সকালে বেঙ্গালুরুর আশপাশে মেয়েকে গাড়িতে নিয়ে ঘোরেন। কীভাবে আত্মহত্যা করবেন স্থির করতে পারছিলেন না। বিশেষ করে মেয়ের সামনে আত্মহত্যা করবেন, এই সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলে না। অন্য দিকে, সময়ও পেরিয়ে যাচ্ছিল। ফলে আরও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছিলেন রাহুল।
তিনি বলেন, বেশ কিছুক্ষণ এদিক-ওদিক গাড়ি চালিয়ে ঘোরার পর শেষমেশ বাড়িতে ফেরার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু পাওনাদারদের অশ্রাব্য গালিগালাজ, হেনস্থা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। তার পরই হ্রদের ধারে সন্ধ্যাবেলায় গাড়ি থামিয়েছিলাম।
পুলিশকে তিনি আরও জানান, হ্রদের কাছে গাড়ি পার্ক করে সামনেরই একটি দোকান থেকে মেয়ের জন্য বিস্কুট এবং চকোলেট কিনে এনেছিলেন। পকেটে আর টাকা ছিল না তার। মেয়েকে নিয়ে গাড়িতে কিছুক্ষণ খেলেনও। কিন্তু মেয়ে আবার খিদের জ্বালায় কেঁদে ওঠে। সেই জ্বালা সহ্য করতে না পেরে মেয়েকে বুকের মধ্যে জোরে চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে খুন করেন বলে দাবি রাহুলের। এরপরই মেয়েকে নিয়ে হ্রদের পানিতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কিন্তু পানি কম থাকায় বেঁচে যান।
রাহুলের কথায়, হ্রদের পানিতে ঝাঁপ দিয়েও যখন কিছু হয়নি, মেয়েকে ওখানে ফেলে রেখে রাস্তায় উঠি। এক ব্যক্তিকে বলি, আমাকে বাঙ্গেরপেট স্টেশনে ছেড়ে দিতে। ভেবেছিলাম ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করব। কিন্তু তাও সাহসে কুলায়নি। শেষে তামিলনাড়ুগামী ট্রেনে উঠে পড়ি। রাহুলের দাবি কতটা সত্য, তা খতিয়ে দেখছে দেশটির পুলিশ।
উৎসঃ আমাদের সময়