ঢাকা: এবার আইনের জালে আটকা পড়বে সাইবার সন্ত্রাসীরা। জাতীয় নিরাপত্তায় ঘোষিত ‘অত্যাবশ্যকীয় তথ্য পরিকাঠামো’র বিরুদ্ধে গেলেই পেতে হবে কঠোর শাস্তি। পররাষ্ট্র নীতির ক্ষয়ক্ষতি ও কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্টের চেষ্টাকারীও রক্ষা পাবে না। দেশে বা দেশের বাইরে থাকুক আর জাতীয়তা বা নাগরিকত্ব যাই হোক- অপরাধীকে বিচারের আওতায় আসতেই হবে। বিচারের আওতায় আসতে হবে সহায়তাকারীকেও।
প্রস্তাবিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০১৫’ খসড়ায় এমন বিধান রাখা হয়েছে। আগামী আগস্টেই খসড়া আইনটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর আইন হিসেবে পাসের জন্য উত্থাপন করা হবে জাতীয় সংসদে।
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ফেসবুক, টুইটার ও ব্লগসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উস্কানি ও সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেওয়া এবং ব্লগার হত্যাসহ নানা ঘটনার পর এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিভাগ আইনের খসড়াটি প্রস্তুত করে।
প্রস্তাবিত এ সাইবার আইনে অভিযোগ অনুসন্ধান, তদন্ত ও তল্লাশিতে থাকছে ভিন্নতা। অপরাধ বিচারে গঠিত হবে আলাদা ট্রাইব্যুনাল। পুলিশ মামলা না নিলেও সরাসরি আদালতে অভিযোগ করা যাবে। আর গুরুতর অভিযোগ হলে এ আইনে জামিনও মিলবে না মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত।
সাইবার সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে প্রস্তাবিত এ আইন অনুযায়ী, ষড়যন্ত্র, জালিয়াতি, প্রতারণা, ছদ্মবেশ, জনগোষ্ঠীর মধ্যে আতঙ্ক বা ভীতি সৃষ্টিসহ মিথ্যা তথ্য দিলে কেউ রক্ষা পাবে না। ছাড় দেওয়া হবে না পর্নো অপরাধী থেকে শুরু করে বিনা অনুমতিতে ব্যক্তিগত আলোকচিত্র ধারণকারী কোনো ব্যক্তিকেও। শিশু পর্নো অপরাধ জগতে বিচরণের দায়েও পেতে হবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
প্রস্তাবিত সাইবার আইন নিয়ে সাম্প্রতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, অফলাইন ও অনলাইন অপরাধের মাত্রা এবং এর প্রভাব দিনদিন বাড়ছে। বিভিন্ন দেশে অস্ত্রের যুদ্ধের চেয়ে এখন সাইবার যুদ্ধ বেশি হচ্ছে। কোনো দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাইলে আর বোমা ফেলার প্রয়োজন নেই। সাইবার আক্রমণেই অনেক দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করা যায়। ভেঙে ফেলা যায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তাই সাইবার জগতকে নিরাপদ রাখার জন্যই আইনটি করা হচ্ছে।
খসড়া এ আইন অনুযায়ী, সাইবার অপরাধের মামলার বিচার করবে সাইবার ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগ দেওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ হবে। ওই সময়ে তদন্ত শেষ না হলে আরও ১৫ দিন সময় পাবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। আর মামলা নিষ্পত্তি হবে ছয় মাসে।
এ আইন অনুসারে, সাইবার জগতে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ উঠলে জামিন পাওয়া যাবে না। কম গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগেও এ আইনে জামিন আদালতের ওপর নির্ভর করবে। পুলিশ মামলা না নিলে অভিযোগকারী সরাসরি সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারবেন।
আইনে সাইবার সন্ত্রাসের অপরাধে সর্বোচ্চ শস্তি রাখা হয়েছে ২০ বছর কারাদণ্ড। কোনো সত্ত্বা বা প্রতিষ্ঠান যদি কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে, তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী ২০ বছর ও অনূন্য চার বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
খসড়া আইন অনুসারে, দেশের অখণ্ডতা, সংহতি ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করা বা করার চেষ্টা করা, জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা, কোনো ব্যক্তিকে তার কাজে বিরত রাখা বা কোনো কাজে বাধ্য করা, কোনো জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভীতি প্রদর্শন করা, কূটনৈতিক সম্পর্ক বিনষ্ট করার চেষ্টা করা বা নষ্ট করা, পররাষ্ট্র নীতির ক্ষতি সাধন করা সাইবার সন্ত্রাসী কার্যক্রম বলে চিহ্নিত হবে।
কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ষড়যন্ত্র ও ষড়যন্ত্রে সহায়তা ও চেষ্টার অভিযেগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড (অনুর্ধ্ব ১৪ বছর) এবং ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড করার বিধান রাখা হয়েছে আইনে।
তথ্য পরিকাঠামোর বিরুদ্ধে অপরাধ করলে সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দিতে হবে। সাইবার ট্রাইব্যুনাল উভয় দণ্ডও দিতে পারবেন অপরাধীকে।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’