বিস্ময়কর হলেও ঘটনা সত্য। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টেলিটক এখন অবৈধ ভিওআইপির কারবারি। বিটিআরসির এক অভিযানে এর দালিলিক প্রমাণ মিলেছে। অবৈধ ভিওআইপির বিরুদ্ধে গত সোম এবং বৃহস্পতিবার অভিযান পরিচালনা করে বিটিআরসি। অভিযানে দেখা যায়, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় ব্যবহৃত হয় টেলিটকের এমন সিমের সংখ্যা সাড়ে চার লাখ। যার ফলে দৈনিক তিন কোটি মিনিট অবৈধভাবে ভিওআইপি করা হচ্ছে। এ অনিয়ম দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান বিটিআরসির কর্মকর্তারা। তারা এ ব্যাপারে টেলিটকের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদও করেন। তবে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
অবস্থাদৃষ্টে দেখা যায়, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা বন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ বাস্তবায়নে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে টেলিটক। স্বয়ং টেলিটক অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ার কারণে নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও এ অবৈধ বাণিজ্য বন্ধ করা যাচ্ছে না। সব প্রচেষ্টাই আটকে দিচ্ছেন টেলিটকের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। টেলিটকের সিম ব্যবহার করেই তারা দিনের পর দিন এ অনিয়ম করে যাচ্ছেন। এতে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। বৈধ ব্যবসায়ীরা হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। তারা ব্যবসা হারাচ্ছেন। নানা রকম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। আশ্চর্যজনক হচ্ছে, চোরদের না ধরে সরকার ২ সেন্টকে আবার ১.৫ সেন্টে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছে। এতে বৈধ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
গড় হিসেবে দেখা যায়, প্রতিদিন টেলিটক ব্যবহার করে অবৈধ ভিওআইপি কলের জন্য রাষ্ট্রের ক্ষতি হচ্ছে এক কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এ হিসেবে মাসে ক্ষতি হচ্ছে ৫৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা। বছরে ক্ষতি হচ্ছে ৬৯৫ কোটি টাকা। এক হিসাবে দেখা গেছে, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা বন্ধ করা হলে সরকার প্রতি বছর এক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে পারতো। বৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসা চললে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। উল্লেখ্য, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব টেলিটকেরও চেয়ারম্যান। কিন্তু টেলিটকের দুর্নীতিবাজ কর্মচারীরা তাঁরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এতে বুঝা যায় তারা কতটা প্রভাবশালী।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভিওআইপি খাতের দুর্নীতি বন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইওএফ পদ্ধতি চালু করেছেন। এ পদ্ধতি চালুর ফলে বৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। ব্যবসাতেও গতি আসতে শুরু করে। কিন্তু টেলিটকের এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর এ শুভ উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। তারা যে কোন মূল্যে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত রয়েছেন। তাদের বাধার কারণে এ পদ্ধতি পুরোপুরি কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না।
অথচ এ পদ্ধতি কার্যকর করা সম্ভব হলে প্রতি মিনিটে ৩.৪৫ সেন্ট আয় করা সম্ভব। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতি মিনিটে ৩. ৪৫ সেন্ট রাজস্ব আদায় হলে প্রতি বছর বৈদেশিক মুদ্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টেলিটকের একটি প্রি-পেইড সিমের ক্ষেত্রে যদি দিন পাঁচ শ’ টাকার বেশি খরচ না করার বিধান করা হয় তবে অনিয়ম বহুলাংশে হ্রাস করা সম্ভব। বর্তমানে দিনে ২০ হাজার টাকা খরচ করার একটি অলিখিত নিয়ম চালু রয়েছে।
মানবজমিন