ঢাকা: গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করেন চালক। কিন্তু শ’খানেক যাত্রী নিয়ে যে মাতাল বা অসুস্থ বা অসতর্ক চালক দূরের কোনো গন্তব্যে যাচ্ছে তাকে নিয়ন্ত্রণ করবে কে? এই ধরনের পরিস্থিতি শনাক্ত ও চালককে সতর্ক করে দেয়ার জন্যই একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশেরই একদল উদীয়মান বিজ্ঞানী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের তত্ত্বাবধানে ওই বিভাগের চার শিক্ষার্থী ডিভাইসটি উদ্ভাবন করেছেন। পরামর্শক হিসেবে ছিলেন ফলিত পদার্থবিজ্ঞান, তড়িৎ ও যোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগের লেকচারার মো. এনামুল হক চৌধুরী।
গাড়ি চালানোর সময় চালক মোবাইলে কথা বললে, এসএমএস করায় ব্যস্ত হলে কিংবা চা, কফি পান করলে তাকে সতর্ক করে দেবে ‘ড্রাইভার ডিসট্র্যাকশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামের ডিভাইসটি। এছাড়া চালক সামনের রাস্তার দিকে না তাকিয়ে পাশের বিলবোর্ডের দিকে নজর দিচ্ছে কি না সেটাও খেয়াল রাখবে এই ডিভাইস।
চালক মদ্যপ অবস্থায় আছে কি না, তার ঘুম ঘুম ভাব হচ্ছে কি না, শরীরে তাপমাত্রা, হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ ঠিক আছে কি না, অর্থাৎ চালক সুস্থ আছে কি না, সে বিষয়গুলোও খুব সহজেই খেয়াল রাখা যাবে এই ডিভাইসের মাধ্যমে।
ড্রাইভার ডিসট্র্যাকশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ডিভাইসটিতে চালকের প্রতিটি বিষয় খেয়াল রাখার জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা সেন্সর। চালকের আসনের আশেপাশে এসব সেন্সর বসানো হবে। অর্থাৎ চালকের শরীরের সঙ্গে কোনোকিছু লাগাতে হবে না। তবে তাপমাত্রা ও রক্তচাপ মাপার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রটা চালকের হাতেই লাগাতে হবে। এটাকে ড. রাজ্জাক ডিভাইসটির একটা সীমাবদ্ধতা বলে মানছেন। তবে এর বিকল্প উপায়ও খোঁজার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া, সব কাজ যেন একটা মাত্র ডিভাইস দিয়ে করা যায় সে চেষ্টাও করা হচ্ছে বলে জানালেন ড. রাজ্জাক।
বর্তমানে পরিপূর্ণ ডিভাইসটি ব্যবহার করতে চাইলে খরচ পড়বে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মতো। তবে আরও গবেষণার মাধ্যমে এর মূল্যটা কমানো সম্ভব বলে জানান ড. রাজ্জাক।
ড. রাজ্জাক আরো জানান, ইতিমধ্যে সরকার, বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন পরিবহন মালিকদের সামনে ডিভাইসটি তুলে ধরা হয়েছে। আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সচিব এটার প্রতি আগ্রহী হয়ে একে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন। এছাড়া বেসরকারি সোহাগ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডিভাইসটি বাস্তবে কতটা কার্যকর হচ্ছে তা পরীক্ষা করে দেখতে এবং পরীক্ষামূলকভাবে এটা চালু করার জন্য যে আর্থিক সহায়তা লাগবে সেটা দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
পরিকল্পনার শুরু প্রসঙ্গে ড. রাজ্জাক বলেন, ‘তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীর, ক্রিকেটার মানজার রানার মতো ব্যক্তিত্বদের সড়ক দুর্ঘটনায় হারানোর বিষয়টি আমাকে ভাবিয়ে তুলেছিল। নিজের কাজের ক্ষেত্র থেকে এ ব্যাপারে কিছু করা যায় কি না তা নিয়ে ভাবতে গিয়েই মাথায় এই ডিভাইসের পরিকল্পনা আসে।’
এই ডিভাইস তৈরির প্রকল্প এগিয়ে নিতে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক ‘ইনফরমেশন সোসাইটি ইনোভেশন ফান’ এর কাছ থেকে ৩০ হাজার অস্ট্রেলীয় ডলার পেয়েছিলেন ড. রাজ্জাক ও তার দল।