জিনিয়া সওদাগর জ্যোতি ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে সর্বপ্রথম জেনেছিলেন তার মায়ের কাছ থেকে। মা বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কিত লেখা সংগ্রহ করে তাকে পড়াতেন। সেসব পড়ে তিনি বেশ অনুপ্রাণিত হতেন। ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কিত সেমিনারগুলোতে অংশগ্রহণের জন্য তার বাবাও তাকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন। এভাবেই মায়ের উৎসাহ এবং বাবার সহযোগিতায় মার্কেটপ্লেসগুলো সম্পর্কে প্রাথমিক পর্যায়েই স্পষ্ট ধারণা অর্জন করেছিলেন। মারজান আহমেদের একটি ইন্টারভিউ এর তিনটি শব্দ ‘JUST START IT’ তাকে অনেকাংশে উৎসাহিত করেছিল বলে জানান তিনি। ইন্টারভিউটি পড়েই ওডেস্কে প্রোফাইল তৈরি করে গুরুত্বসহকারে কাজ শুরু করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো কাজ না শিখেই অ্যাকাউন্ট খুললেও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলস্বরূপ ১৫ দিনের মধ্যেই প্রথম কাজ পেয়ে যান তিনি। নিজের সৌভাগ্য হিসেবে উল্লেখ করে তিনি জানিয়েছেন, যিনি তাকে প্রথম কাজ দিয়েছিলেন তিনিই শিখিয়েছেন যে কাজটি কীভাবে করতে হবে। এরপর প্রায় দু’বছর কেটে গেছে জ্যোতির ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে পথচলার।
ওয়েব রিসার্চ এবং আর্টিকেল রাইটিং দিয়ে জ্যোতি তার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন এবং এখন বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট ডেভেলপের কাজও স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি তিনি ব্লগিং করারও পরিকল্পনা করছেন, পাশাপাশি এসইও এবং অনলাইন মার্কেটিং নিয়েও কাজ করতে শুরু করেছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে কাজ পাওয়ার জন্য কীভাবে যোগাযোগ ও পরিচিতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জানতে চাইলে জ্যোতি বললেন, কাজ পাওয়ার জন্য ওডেস্কে অ্যাকাউন্ট তৈরি করার পর বিভিন্ন স্কিল টেস্ট দিয়ে সেগুলোতে পাস করে ৫ স্টার পেয়েছিলেন। এই ৫ স্টার, কাজে একাগ্রতা, নিষ্ঠা এবং স্কিল টেস্টগুলো পাস করে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়াটাই পরবর্তীকালে ফ্রিল্যান্সিং জগতে তার পরিচিতি প্রতিষ্ঠার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এখন তিনি দিনে ৫-৬ ঘন্টারও বেশি সময় ফ্রিল্যান্সিংয়ের পেছনে ব্যয় করছেন।
ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় সম্পর্কে জানতে চাইলে জ্যোতি জানান, লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজগুলো করছেন তাই মাসিক আয়ে ভিন্নতা আসে। তিনি প্রতি মাসে গড়ে ২৫-৩০০০০ টাকা আয় করেন। এই কাজে ব্যয় বলতে শুধু ইন্টারনেট বিল এবং মাসিক উইথড্রয়াল ফি বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। ফ্রিল্যান্সিং করতে কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাগে কি না, বিশেষ করে ইংরেজির প্রয়োজনীয়তা জানতে চাইলে তিনি জানান, অনলাইনে যেকোনো কাজেই ইংরেজি জানা অত্যাবশ্যক। ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার জানাও অত্যন্ত জরুরি। তবে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে জানে না তাদের ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে আসার পূর্বে অবশ্যই ভালো মানের কোনো আইটি প্রতিষ্ঠানের শরণাপন্ন হতে পরামর্শ দেন তিনি।
ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে জ্যোতি ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউট কর্তৃক Best Woman Freelancer হিসেবে স্বীকৃত। ফ্রিল্যান্সিংয়ে সাফল্যের পেছনে কার অবদান রয়েছে জিজ্ঞেস করলে তিনি তার বাবা-মাকেই এই কৃতিত্ব দেন। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে কারও কাছ থেকে কাজ না শিখতে পারলেও পরবর্তীকালে ফুফা, আলী আরাফী রিমান এবং ক্রিয়েটিভ আইটি তার দক্ষতা বৃদ্ধিতে অনেকাংশে সহায়তা করেছে। এ জন্য তাদের সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন জ্যোতি।
তিনি বলেন, একজন ফ্রিল্যান্সারের অবশ্যই ভালো মানের প্রসেসরযুক্ত হাই কনফিগারেশান কমপিউটার হার্ডওয়্যার এবং লেটেস্ট আপডেটের সফটওয়্যার সাপোর্ট থাকা দরকার। কেননা লো কনফিগারেশনের কমপিউটার হার্ডওয়্যার এবং ব্যাকডেটেড সফটওয়্যার কাজের এবং ইন্টারনেটের গতিকে অনেক কমিয়ে দেয়।
নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য জ্যোতির পরামর্শ হচ্ছে, কাজে দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি অবশ্যই ইংরেজি ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার শিখতে হবে। আর কাজের ক্ষেত্রে অবশ্যই ধৈর্যশীল হতে হবে। অধিকাংশ মানুষেরই ধৈর্য অনেক কম। তারা ট্রেনিং সেন্টারে যায় হঠাৎ বড়লোক হওয়ার জন্য, জ্ঞান অর্জনের জন্য নয়। দেশীয় চাকরিতে যেমন অ্যাপ্লাই করলেই কাজ পাওয়া যায় না, চাকরি পেতে ১ দিন নাকি ১ বছর লাগবে তা যেমন কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারবেন না, অনলাইনে কাজের ক্ষেত্রেও ঠিক একই রকম। তাই জিনিয়া সওদাগর জ্যোতি ফ্রিল্যান্সিংয়ে আগ্রহীদের কঠোর পরিশ্রমের পরামর্শ দিয়ে জানিয়েছেন, কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়েই তারা কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারবেন।