ঢাকা: রোবট সাধারণত একটি ইলেক্ট্রো-যান্ত্রিক ব্যবস্থা। যার কাজকর্ম, অবয়ব ও চলাফেরা দেখে মনে হয় এটি স্বেচ্ছায় কাজ করছে। তবে কিছু ইলেক্ট্রিক ডিভাইসের মাধ্যমে একে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। উন্নত বিশ্বে রোবটকে অনেকভাবেই কাজে লাগানো হচ্ছে। বাংলাদেশের তরুণরাও রোবটের ব্যাপারে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠছে। আমাদের তরুণ বিজ্ঞানীরা আবিষ্কারও করেছে বেশ কয়েকটি রোবট।
ড্রোন রোবট
ঢাকায় যানজট নিত্যদিনের সঙ্গী। অনেক ক্ষেত্রে যানজটের কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ সময়মতো করা যায় না। আর সেই যন্ত্রণা থেকেই আপনাকে মুক্তি দেবে ড্রোন রোবট। যেটি অনেকটাই হেলিকপ্টারের মতোই। তবে চালক থাকবে না এই কপ্টারে। প্রয়োজনীয় কোনো ফাইলপত্র বা কম ওজনের কোনো দ্রব্য সামগ্রী গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া যাবে এ ড্রোন দিয়ে। যা আবিষ্কার করেছেন মো. সাইফুল্লাহ ও তানিয়া রহমান দম্পতি। দু’জনই পড়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস কৌশল বিভাগে।
মানব আকৃতির রোবট
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী মানব আকৃতির রোবট উদ্ভাবন করেছেন। এটিকে দূর থেকে বাংলা ভাষার মাধ্যমে তারবিহীনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। রোবটটি উদ্ভাবন করেন চুয়েটের তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মো. শামসুল আলম (সম্রাট) ও রাকেশ ঘোষ।
মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে মূলত তার শরীরের নিচের দিকের অঙ্গগুলো কাজে লাগায়। বিশেষ করে কোমর থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত। মানুষের চলার বিভিন্ন দিককে বিবেচনা করে তৈরি করা হয়েছে দুই পা বিশিষ্ট (বাইপেডাল) রোবটটি। ইংরেজি ভাষা জানেন না এমন ব্যক্তিরা যাতে ব্যবহার করতে পারেন সেজন্য রাখা হয়েছে বাংলা ভাষার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা।
মানুষের জন্য নিরাপদ নয় এমন স্থানের খবর জানার জন্য রয়েছে মুঠোফোনে বাংলা ভাষার মাধ্যমে দূর থেকে তারবিহীনভাবে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও।
অগ্নিনির্বাপন রোবট
অগ্নি বিপর্যয় বর্তমান বিশ্বের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা। এই সমস্যা আমাদের দেশেও কম নয়। বরং গত কয়েক বছরে প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর প্রধান সমস্যা হিসেবে গবেষকগণ অপরিকল্পিত অগ্নিনির্বাপন ব্যাবস্থা ও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতির অভাবকেই দায়ি করেন। তবে এ সমস্যা সমাধানের জন্য আর বিদেশী প্রযুক্তির দারস্থ হতে হবে না।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) তিন ক্ষুদে বিজ্ঞানী উদ্ভাবন করেছেন অভাবনীয় অগ্নিনির্বাপন রোবট। যা রিমোটের মাধ্যমে আগুন নেভাতে সক্ষম হবে। তিন ক্ষুদে বিজ্ঞানী হলেন- যন্ত্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভ সরকার, মুস্তাফা মুহিবুল্লাহ শোভন ও তড়িৎকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. শরীফ আহমেদ।
টেলিপ্রেজেন্স রোবট
টেলিপ্রেজেন্স রোবটের মাধ্যমে অফিসের বাইরে থেকেও অফিসে কে কী করছেন তা দেখতে পারেন বস। এছাড়া চিকিৎসকরা অন্য স্থানে থেকেও রোগীকে পরামর্শ দিতে পারবেন এর সাহায্যে। টেলিপ্রেজেন্স রোবটকে এমন আরো অনেক কাজে লাগানো যেতে পারে। যার আবিষ্কারক প্ল্যানেটার বাংলাদেশের রিনি ঈশান।
উঁচু ভবন পেইন্ট করা
ঢাকা শহরে এখন অনেক উঁচু ভবন তৈরি হচ্ছে। এসব ভবনের বাইরের অংশ রাঙাতে গিয়ে অনেক শ্রমিক নিহতের ঘটনা নতুন নয়। তবে বাংলাদেশের তরুণ বিজ্ঞানীরা এমন রোবট আবিষ্কার করেছেন যা মানুষ ছাড়াই দেয়াল রাঙাবে। যার নাম ‘অটোমেটিক পেইন্ট রোবট’। দেয়ালে রঙ করার কাজে মানুষের বিকল্প হিসেবেই এটি তৈরি করা হয়েছে।
গোয়েন্দাকাজে রোবট
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তির বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের দুই ছাত্র রুবেল আহাম্মেদ ও মো. রাকিবুল ইসলাম অত্যাধুনিক গোয়েন্দা রোবট উদ্ভাবন করেছেন। প্রতিপক্ষের হামলা যেখানে অবশ্যম্ভাবী, সেই অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে শত্রুর ওপর হামলা করতে সক্ষম নতুন উদ্ভাবিত এই রোবটটি। শুধু তাই নয়, যুদ্ধক্ষেত্রের পারিপার্শ্বিক ছবি ও ভিডিওচিত্র রোবট নিয়ন্ত্রণকারীকে সরবরাহ করে প্রতিপক্ষের অবস্থান জেনে হামলা করতে সাহায্য করবে এটি।
জীবন বাঁচাতে রোবট
কোয়াডকপ্টার ব্যবহার করে ডুবন্ত কারও কাছে লাইফ জ্যাকেট ও ভেস্ট পাঠিয়ে তাকে বাঁচানো যেতে পারে। আর যেটি আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানী শিবলী ইশতিয়াক। বর্তমানে কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল তাদের অনুষ্ঠান নির্মাণকাজে কিংবা সরাসরি কোনো অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতেও বাংলাদেশে তৈরি কোয়াডকপ্টার ব্যবহার করছে।
চালকবিহীন কপ্টার
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার তরুণ আবিষ্কার করলেন চালকবিহীন হেলিকপ্টার। তবে সেটি রূপ নেবে ড্রোনে। গবেষক দলের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। গবেষক দলের সদস্যরা হলেন- টিম লিডার সৈয়দ রেজওয়ানুল হক নাবিল, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রবি কর্মকার, মারুফ হোসেন ও সৈয়দ ওমর ফারুক। এই ড্রোন আমাদের অভ্যন্তরীণ ও সামরিক নিরাপত্তাসহ নানান কাজে লাগবে।