সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ২০১৬ সালকে পরিচ্ছন্ন বছর ঘোষণা করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন। আর এ ঘোষণা বাস্তবায়নে তিনি নগরীর ২৯টি সংস্থার সঙ্গে সভাও করেছেন। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশও নিচ্ছেন। কিন্তু মেয়রের দায়িত্ব নেয়ার পর আট মাস অতিবাহিত হলেও নিজ কার্যালয় এখনো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে পারেননি তিনি।
সরেজমিন দেখা যায়, ডিএসসিসির নগর ভবনের প্রায় প্রতিটি কক্ষই অগোছালো ও শ্রীহীন। এমনকি প্রতিটি ফ্লোরের টয়লেটগুলো অপরিষ্কার। টয়লেটের বেশিরভাগ দরজাই ভাঙাচোরা। অনেকগুলোতে পানির কলও নেই।
এ নগর ভবনে বিভিন্ন কাজে আসা অনেকেই অভিযোগ করেছেন, সিটি কর্পোরেশন তো নিজের আঙিনাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে পারছে না। টয়লেটগুলোতে গন্ধে যাওয়া যায় না। আর কিছু কিছু দফতরে কর্মকর্তাদের-কর্মচারীরা এমনই অগোছালোভাবে অফিস করেন দেখে মনে হয় বস্তির টং দোকান। প্রশ্ন তুলে তারা বলেন, খোদ নগর ভবনেরই যদি এ অবস্থা হয় তবে নগরীকে আর কি করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন মেয়র।
এদিকে রাজধানীর নান্দনিক ও আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর এক চমৎকার নিদর্শন ডিএসসিসির এই নগর ভবন। এক সময় পুরো রাজধানীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ সৌন্দর্য রক্ষার কাজটি হতো অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের এই প্রধান কার্যালয় থেকে। কিন্তু অযত্নে অবহেলায় নিজের সৌন্দর্যই ম্লান হয়ে পড়েছে রাজধানীর অন্যতম দর্শনীয় স্থাপনা এই নগর ভবনের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগর ভবনের বাইরের দেয়ালে কালো আস্তর জমেছে। ভবনজুড়ে কালো কালো দাগ। যেন ভবনের দেয়াল ঘেঁষে রান্নাঘর, তার ধোঁয়ায় ঢাকা পড়ছে মর্মর-প্রাচীরের জৌলুস। দূর থেকেও দেখা যায় কালো ছোপ ছোপ দাগে ভরা এই ঐতিহ্যের স্মারক। নগর ভবনের এই কালচে রূপ নিয়ে উদ্বিগ্ন স্থপতি ও স্থাপনা-বিশেষজ্ঞরা। তারা অনন্য স্থাপত্যশৈলীর এ ভবনের সৌন্দর্য রক্ষায় অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন।
স্থাপনা-বিশেষজ্ঞ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, কংক্রিটের তৈরি এই নগর ভবনের বয়স ২১ বছর। কিন্তু নির্মাণের পর এর বহিরাঙ্গন রক্ষণাবেক্ষণে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ধুলা-ধোঁয়ায় ভবনটি কালো হয়ে গেছে। বেসমেন্ট থেকে টপ লেভেল পর্যন্ত পরতে পরতে ময়লা। ধুলা আর কালো দাগ ভবনের সারা গায়ে। এসব পরিষ্কারে নগর ভবন কর্তৃপক্ষের অবহেলা আছে।
অবহেলায় দৃষ্টিনন্দন ভবনটি তার সৌন্দর্য হারাবে, তা মেনে নেয়া যায় না উল্লেখ করে নগর ভবন পরিচ্ছন্ন করার বিষয়ে ইকবাল হাবিব বলেন, কংক্রিটের তৈরি বলে এটি সাধারণ চুন বা রং দিয়ে মেরামত করা যাবে না। সেটি পরিষ্কার করার জন্য বিশেষ কেমিক্যাল আছে। সেটি কিন্তু সহজলভ্য। আছে উন্নত প্রযুক্তি, উন্নত রং যা ব্যবহার করে ভবনটিকে আগের রূপে ফিরিয়ে নেয়া কঠিন নয়।
স্থপতি ইকবাল হাবিবের সঙ্গে একমত নগর ভবন কর্তৃপক্ষও। তারা বলছে, নগর ভবন পরিষ্কার করার জন্য সাধারণ কোনো রং বা পদার্থ ব্যবহার করা যাবে না। বিশেষ এক ধরনের কেমিক্যাল দিয়ে ভবনটি ওয়াশ করতে হবে, যেটা বিদেশ থেকে আনতে হয়। এটি আনার প্রক্রিয়া চলছে।
এ ব্যাপারে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহমেদ বলেন, নগর ভবন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য আলাদা দফতর আছে। তারাই এর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে। ভবন ওয়াশের জন্য যে কেমিক্যাল দরকার, তা বিদেশ থেকে আনার প্রক্রিয়া চলছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালে গুলিস্তানের পশ্চিমে ও ওসমানী উদ্যানের দক্ষিণ দিকে নির্মিত হয় নগর ভবন। ১৫ তলাবিশিষ্ট এই ভবনের নকশা করেন স্থপতি এ ইমামুদ্দিন ও লাইলুন নাহার একরাম।
Prev Post
Next Post