চট্টলাবাসীর নতুন নগরপিতা আ জ ম নাছির

0

AJM Naserচট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পঞ্চম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দীন। বেসরকারি ফলাফলে প্রায় ২ লাখ ভোটের ব্যাবধানে সাবেক মেয়র বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম মনজুর আলমকে হারিয়ে হাতি প্রতীকে তিনি মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।

এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে স্থাপিত অস্থায়ী ১৪টি কেন্দ্র থেকে চূড়ান্তভাবে ঘোষিত ফলাফলে মোট ৭১৯টি কেন্দ্রের সবকটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আ জ ম নাছির উদ্দীন পেয়েছেন ৪,৭৫,৩৬১ ভোট এবং তার নিকতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত মনজুর আলম কমলালেবু প্রতীকে পেয়েছেন ৩,০৪,৮৩৭ ভোট। মঙ্গলবার রাত ৩টা ২০ মিনিটে নাছির উদ্দীনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন চট্টগ্রামের রিটার্নিং অফিসার আব্দুল বাতেন।

আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে আব্দুল বাতেন বলেন, ‘এ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল প্রার্থী, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সহযোগিতাকারী সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী, সাংবাদিকসহ সবাইকে ধন্যবাদ। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। এতে বিশৃঙ্খলা কিংবা রক্তপাতের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

নতুন মেয়র সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘নগরবাসী তাদের প্রত্যাশা পূরণে যোগ্য নগরপিতা নির্বাচিত করেছেন। আমরা আশা করি তিনি নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করবেন। সেই সঙ্গে চট্টগ্রাম মেগাসিটিকে বাংলাদেশ তথা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরবেন।’

তিনি জানান, চট্টগ্রাম সিটিতে মোট ভোটার ছিল ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৪৯। এর মধ্যে ৪১টি ওয়ার্ডে ভোট পড়েছে ৮ লাখ ৬৮ হাজার ৬৬৩টি। যেখানে বৈধ ভোট পড়েছে ৮ লাখ ২১ হাজার ৩৭১টি, আর ত্রুটিপূর্ণ ভোট ছিল ৪৭ হাজার ২৯২টি। ভোটগ্রহণের হার ছিল ৪৭ দশমিক ৯০।

এদিকে আ জ ম নাছিরকে বরণ করতে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও পাড়া থেকে সমর্থকরা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে তার আন্দরকিল্লা বাসায় আনন্দ মিছিল নিয়ে যায়। সেখানেই অবস্থান করছেন চট্টগ্রামের নতুন মেয়র।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে নির্বাচনী ইশতেহারে যা বলেছি তা জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করবো। দলমত নির্বিশেষে নগরবাসীর উন্নয়নে কাজ করে যাবো। প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সব সমস্যা সমাধান করে স্বপ্নের মেগাসিটি তৈরি করবো ইনশাল্লাহ।’

মনজুর আলমের নির্বাচন বয়কটের ব্যাপারে নাছির বলেন, ‘বিএনপির প্রার্থী মনজুর পরাজয় বুঝতে পেরে নির্বাচন বর্জন করেছেন ও জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।’

এর আগে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, ভোট কারচুপি, নানা অনিয়ম ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনজুর আলমসহ বেশ কয়েক মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীর নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ চলে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার মেয়র পদে লড়েন ১২ প্রার্থী। তবে কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বয়কট করেন বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মনজুর আলম, ইসলামিক ফ্রন্ট সমর্থিত প্রার্থী এম এ মতিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ওয়ায়েজ হোসেন ভূইয়া।

এর মধ্যে সরকার দলীয় প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে সকাল থেকে বারবার কেন্দ্র দখল ও ভোট চুরির অভিযোগ এনে প্রতিকার না পেয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দেন সাবেক মেয়র মনজুর আলম। একই সঙ্গে রাজনীতি থেকেও অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা।

বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর দেওয়ানহাটে চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মনজুর এ ঘোষণা দেন।

দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালনকারী মনজুর ২০১০ সালের নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে মহিউদ্দীন চৌধুরীকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর থেকে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে মনজুর আলম বলেন, ‘চট্টগ্রামের ৮০ শতাংশ কেন্দ্র আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা দখল করে নিয়েছে। এখানে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। ভোট কেন্দ্রে আমাদের কোনো এজেন্টকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। আমাদের কর্মী সমর্থকদের ওপর হামলা করা হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে এই নির্বাচন বর্জন করছি।’

আওয়ামী লীগ পরিবার থেকে উঠে আসা শিল্পপতি মনজুর হঠাৎ করেই রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘আমি আর রাজনীতি করবো না। তবে সমাজ সেবা চালিয়ে যাবো। যারা এতোদিন আমার পাশে ছিলেন তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা।’

এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অন্য প্রার্থীদের মধ্যে জাতীয় পার্টি সমর্থিত মো. সোলায়মান আলম শেঠ ডিশ এন্টিনা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৬ হাজার ১৩১ ভোট, এম. এ. মতিন চরকা প্রতীকে ১১ হাজার ৬৫৫ ভোট, আরিফ মইনুদ্দীন বাস প্রতীকে ১ হাজার ৭৭৪ ভোট, মোহা. শফিউল আলম ইলিশ মাছ প্রতীকে ৬৮০ ভোট, মো. আবুল কালাম আজাদ দিয়াশলাই ১ হাজার ৩৮৫ ভোট, মো. আলাউদ্দিন চৌধুরী টেলিস্কোপে ২ হাজার ১৫৯, মো. ওয়ায়েজ হোসেন ভুইয়া টেবিল ঘড়ি নিয়ে ৯ হাজার ৬৬৮, সাইফুদ্দিন আহমেদ (রবি) ফ্লাক্স প্রতীকে ২ হাজার ৬৬১, সৈয়দ সাজ্জাদ জোহা ৮৪৫ ভোট পেয়েছেন ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে, হোসাইন মুহাম্মদ মুজিবুল হক ময়ূর প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪ হাজার ২১৫ ভোট।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More