বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বী ও ডিএসসিসি পরিদর্শক বিকাশ চন্দ্র দাসের পর এবার ছাত্রী হয়রানি ও অনৈতিক প্রস্তাব দেয়ার অভিযোগে রাজধানীর আদাবর থানার এসআই রতন কুমারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সোমবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে তেজগাঁও পুলিশ। এদিকে ছাত্রী হয়রানি ও শ্লীলতাহানীর অভিযোগে সোমবার এসআই রতনের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য আদালতে ওই ছাত্রী অভিযোগ করেন। শুনানী শেষে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। এছাড়া এ ঘটনায় মহানগর পুলিশও তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওই তরুণীর স্বামী আদাবর থানা যুবদলের একজন নেতা। গত বছর বিস্ফোরক আইনের এক মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিল। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন।
তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ঘটনা রোববার বিকেলে হলেও রাতে শোনার পরপরেই এসআই রতনকে প্রত্যাহার করার আদেশ দেই। তবে আজ বিষয়টি আরো গুরুতর জানতে পেরে সাসপেন্ড করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা ও তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত এসআই কর্মে যোগদান করতে পারবেন না বলেও জানান তিনি। ডিসি আরো বলেন, ব্যক্তির দায় বাহিনী নেবে না। অপরাধ করলে তার রেহাই নেই। প্রয়োজনে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ওই তরুণীর অভিযোগ, গত রোববার বিকেলে ক্লাস শেষ করে রিকশায় মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদের দিকে যাওয়ার পথে এসআই রতন তার পথ আটকায়। এরপর তল্লাশির কথা বলে ওই পুলিশ সদস্য তাকে জাপান গার্ডেন সিটি ইলেক্ট্রনিকস নামে একটি দোকানের ভিতরে নিয়ে যান এবং দোকানের সবাইকে বের করে দিয়ে শাটার টেনে দেন। তখন এসআই তার শরীর থেকে জোর করে জ্যাকেট খুলে সেই জ্যাকেট হাতে নিয়ে ভ্যানিটি ব্যাগ তল্লাশি করেন। বারবার জানতে চান, তার স্বামী কোথায়। না বললে ইয়াবা দিয়ে গ্রেফতারের ভয় দেখানো হয়। তিনি বারবার মহিলা পুলিশ বা আশপাশের কোনো মহিলার সামনে অথবা থানায় নিয়ে তল্লাশি করার অনুরোধ জানালেও তিনি তা করেনি। এ সময় অশ্লীল কথাবার্তা বলা ছাড়াও উনি তরুণীকে হোটেলের পতিতা ও ইয়াবা ব্যবসায়ী বানানোর চেষ্টা করেন এবং এসআই রতন তাকে অনৈতিক প্রস্তাবও দেন। তিনি আরো জানান, ঘটনার পরপরই থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে সোমবার আদালতে মামলা করেন তিনি।
অভিযুক্ত এসআই রতন কুমারের দাবি, ওই মহিলার স্বামী যুবদল নেতা বিস্ফোরক মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি হওয়ায় তিনি আগে একবার থানায় গিয়েছিলেন। তখনই তাদের পরিচয় হয়। রোববার হঠাৎ দেখা হওয়ায় রিকশা থামিয়ে তার স্বামীর খোঁজ জানতে চেয়েছি, এর চেয়ে বেশি কিছু না। তার স্বামী সাভারে আছে জানিয়ে তিনি চলে গেছেন। আমার বিরুদ্ধে হয়রানির যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ:
শ্লীলতাহানির অভিযোগে সোমবার সকালে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক সালেহ উদ্দিন আহমেদের আদালতে মামলা করেন ওই ছাত্রী। আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ শেষে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।
পুলিশের তদন্ত কমিটি গঠিত:
এদিকে ওই তরুণীকে হয়রানি ও শ্লীলতাহানীর অভিযোগ তদন্তে সোমবার তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মারুফ হোসেন সরদার। ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (প্রোটেকশন) জামিল আহমেদকে প্রধান করে গঠিত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) সাজ্জাদুর রহমান। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।