ঢাকাসহ ঢাকার প্রবেশের মুখে যানজট কমানোর নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বাজেটের ওপর চাপ কমাতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এমনকি, ব্যক্তিখাতকে উন্নয়নে সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় হাতিরঝিল-রামপুরা সেতু-বনশ্রী-শেখেরজায়গা-আমুলিয়া-ডেমরা মহাসড়ক সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে উন্নীতকরণ প্রকল্প গ্রহণের নীতিগত অনুমোদন নিতে যাচ্ছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। অন্যদিকে ঢাকার ওপর চাপ কমাতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেল লাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ রেল লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এসব প্রস্তাব আজ অর্থনৈতিক ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, উন্নত, নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ মহাসড়ক নেটওয়ার্ক দেশের শিল্পায়ন ও ব্যবসা বাণিজ্যে ভূমিকা পালন করে থাকে। একই সঙ্গে অর্থনীতি বিকাশের ক্ষেত্রে সহায়ক। যে কারণে ঢাকা ও ঢাকা প্রবেশের মুখে যানজট কমানোর বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে সরকারি ব্যয়ের চেয়ে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। যে কারণে পিপিপির আওতায় ১৩টি প্রকল্প ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, যাত্রাবাড়ী-ডেমরা-সুলাতানা কামাল সেতু-তারাব মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীত করার জন্য নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা পিপিপির ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত এ নিয়ে বেশ তর্ক-বিতর্ক সৃষ্টি হয়। পরবর্তী সময়ে তা যাচাই-বাছাই করার পর বাতিল করা হয়। তবে বাতিল করার যুক্তিতে বলা হয়, এ মহাসড়কে কাক্সিক্ষত ট্রাফিক পাওয়া যাবে না। সিলেট থেকে আসা যানবাহন যাত্রাবাড়ী-ডেমরা সুলতানা কামাল সেতু-তারাব মহাসড়কে টোল দেয়ার পর খুব কাছাকাছি এসে আবার হানিফ ফ্লাইওভারের টোল দিয়ে ঢাকা শহরে প্রবেশ করতে হবে। পর পর ২টি অবকাঠামো ব্যবহারের জন্য যানবাহনগুলো টোল দিতে খুব একটা উৎসাহিত হবে না।
এদিকে ঢাকা মহানগরীতে নির্বিঘেœ প্রবেশ ও ঢাকা মহানগর থেকে নির্বিঘেœ বাইরে যাওয়ার জন্য রামপুরা-শেখেরজায়গা-আমুলিয়া-ডেমরা জেলা মহাসড়কটি কার্যকর ভূমিকা রাখছে। বরং ২ লেন বিশিষ্ট এই মহাসড়কটি ৪ চার লেনে উন্নীত করা হলে ঢাকা মহানগরীতে প্রবেশ ও বাইরে যানজটমুক্ত হবে। একই সঙ্গে চলাচালও নির্বিঘœ হবে। এরই প্রেক্ষিতে এ সড়কটির উন্নয়নে প্রস্তাব রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক। তিনি আরো জানান, ইতিমধ্যে প্রস্তাবিত রুটে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য পিপিপি কর্তৃপক্ষ সম্মতি দিয়েছে।
জানা গেছে, মোট ১৩ দশমিক ৫০ কিমি মহাসড়ক উন্নয়ন করা হবে। মহাসড়কটি হাতিরঝিল সংলগ্ন রামপুরা সেতুর কাছ থেকে শুরু হয়েছে বনশ্রী-মেরাদিয়া-শেখেরজায়গা-আমুলিয়া-ডেমরা পর্যন্ত যাবে। সড়কটির একটি অংশ ডেমরা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের চিটাগাং রোডে শেষ হবে। আরেকটি অংশ সুলতানা কামাল সেতু হয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের তারাবকে যুক্ত করবে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের যে তিনটি অংশ: এ প্রকল্পের তিনটি অংশ রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে রামপুরা ব্রিজ থেকে ডেমরা সার্কেল। দ্বিতীয়টি হচ্ছে ডেমরা সার্কেল থেকে চিটাগাং রোড। আর তৃতীয়টি হচ্ছে ডেমরা থেকে তারাব মোড়। প্রথম অংশটি ৯ দশমিক ৫০ কিমি। সড়কটি রামপুরা থেকে বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল পর্যন্ত ১ মিটার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত। বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল থেকে মেরাদিয়া পর্যন্ত ১ দশমিক ২৫ কিমি সড়ক ও জনপথের আওতাভুক্ত। রামপুরা ব্রিজ থেকে মেরাদিয়া পর্যন্ত বর্তমানে সড়কের পাশে লেক রয়েছে। লেক ও বিদ্যমান সড়কের মাঝের অব্যবহƒত সড়ক ঢালে পিয়ারের মাধ্যমে এলিভেটেড সড়ক নির্মাণ করা হবে। সড়কের বিদ্যমান রাইট অব ওয়ে বিবেচনায় নিয়ে মেরাদিয়া থেকে মোস্তফা মাঝি মোড় অর্থাৎ শেখের জায়গা পর্যন্ত প্রায় ৩ দশমিক ৫০ কিমি ভূমিতে ও শেখের জায়গা থেকে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত কিছু অংশ এলিভেটেড সড়ক ও বাকি অংশ অ্যাডগ্রেড সড়ক নির্মাণ করা হবে। ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার মোড় থেকে ডেমরা সার্কেল পর্যন্ত একটি অংশে আরেকটি দ্বিস্তরবিশিষ্ট ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে।
দ্বিতীয় অংশটি ডেমরা সার্কেল থেকে চিটাগাং রোড। এই অংশটি মহাসড়ক হিসেবে উন্নীত করা হবে। এ অংশটি ব্যবহার করার জন্য যানবাহনগুলোকে কোনো শুল্ক দিতে হবে না। এই মোড়ে একাধিক স্তর বিশিষ্ট ফ্লাইওভার নির্মাণের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ ও চিটাগাংয়ের ট্রাফিকগুলো নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ নিশ্চিত করা হবে। তৃতীয় অংশটি হচ্ছে ডেমরা থেকে তারাব মোড়। এই অংশটি সেতু ছাড়া প্রকল্পের আওতায় উন্নীত করা হবে। এ অংশটিও শুল্কমুক্ত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
জানা গেছে, হাতিরঝিল-রামপুরা সেতু-বনশ্রী-শেখেরজায়গা-আমুলিয়া-ডেমরা মহাসড়কটি রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, সিলেট, নারায়ণগঞ্জসহ অন্যান্য জেলাকে সংযোগ করবে। প্রস্তাবিত রুটটি গুলশান, বাড্ডা, ফার্মগেট, তেজগাঁও, বনানী, রামপুরা ও উত্তরার যানবাহনকে আকৃষ্ট করবে। এছাড়াও মহাসড়কটি দুটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। প্রকল্পটির নির্মাণকাজ আগামী ২০১৭ সালের আগেই শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এ সড়কটিতে প্রতিদিন ১১ হাজার যানবাহন চলাচল করবে বলে আপাতত প্রাক্কলন করা হয়েছে। আপাতত এটার জন্য সমীক্ষার প্রয়োজন হবে। আর সমীক্ষার জন্য ৫ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ ও ৭৫ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৩৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
এদিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে এর জন্য ইতিমধ্যে এডিপিতে ৪১০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে এ রেললাইন নির্মাণের জন্য পরামর্শক নিয়োগ করা হবে। আজ সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ বিষয়টি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে।
Next Post