ঢাকা: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকনের পাশে নেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারকারী মেয়র প্রার্থী হাজী সেলিম।
গত ৩ এপ্রিল মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকনের পক্ষে হাজী মো. সেলিম একসঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দিয়ে ৪ এপ্রিল তিনি ওমরা হজ পালনে সৌদি আরব গেছেন। যখন ঢাকা শহরজুড়ে চলছে নির্বাচনী আমেজ, তোড়জোড় চলছে নির্বাচনী প্রচারণার সেই মুহূর্তে হাজী মো. সেলিম ওমরা পালন করতে যান। ফলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকনের পক্ষে থাকা না থাকা নিয়ে।
গত ২৪ মার্চ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. সেলিম। একই দিনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ঢাকার নির্বাচিত প্রথম মেয়র মোহম্মদ হানিফের ছেলে ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খোকন। তবে ২৯ মার্চ সাঈদ খোকন মনোয়নপত্র জমা দিলেও দেননি হাজী মো. সেলিম।
পরে ১ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন সাঈদ খোকনের মনোয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে। এর ২ দিন পর ৩ এপ্রিল শুক্রবার চকবাজার জামে মসজিদে একসঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করেন হাজী মো. সেলিম এবং সাঈদ খোকন। এ সময় হাজী মো. সেলিম সাঈদ খোকনের পক্ষে একসঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণা করবেন বলে ঘোষণা দেন।
এরপরের দিন ৪ এপ্রিল তিনি ওমরা পালন করতে চলে যান। ফলে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকনের কোনো পথসভা, মতবিনিময়সভা ও কর্মীসভায় হাজী মো. সেলিমের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি।
একই সঙ্গে কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে নগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত মতবিনিময় সভা ছাড়া আর কোনো প্রচারণায় দেখা যায়নি অপর নগর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেনকেও।
উল্লেখ্য, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি গণভবনে ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তর ও দক্ষিণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হক ও সাঈদ খোকনকে সমর্থন দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। কিন্তু এ সমর্থন মেনে নিতে চায়নি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ ছাড়া অন্য আর কোনো নেতারা।
মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াও সাঈদ খোকনকে মেনে নিতে পারেনি।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার অনুরোধে সাঈদ খোকনের পক্ষে মহানগরের নেতারা পাশে থাকার ঘোষণা দিলেও পেছনে বিরোধিতা করছেন অনেকেই। এরমধ্যে মহানগরের ডাকসাইটের দুই নেতা মন্ত্রী থাকায় তারা প্রচার-প্রচারণায় নির্বাচন বিধি অনুযায়ী অংশগ্রহণ করা যাবে না ধুয়া তুলে পেছনে বিরোধিতা করছেন সাঈদ খোকনের।
নগরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নগর নেতা বলেন, ‘নগরের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম মন্ত্রীর দোহাই প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে না পারায় পেছন থেকে সাঈদ খোকনের বিরোধিতা করছেন। কারণ ওনারা দু’জনই আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হিসেবে চেয়েছিলেন হাজী মো. সেলিমকে।
অন্যদিকে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হক ও সাঈদ খোকনকে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সমর্থন দিলেও গত ২৪ মার্চ এক সভায় নগরের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘ডিসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি। তবে ২৯ মার্চে মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার পর নেত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। নেত্রী যাকে সমর্থন দেবেন, তার পক্ষেই ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামবে। এর বাইরে কেউ নির্বাচন করলে নগর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক থাকবে না। তা তিনি নিজ দায়িত্বে করবেন।’
উল্লেখ্য, ১/১১ সময় ঢাকা মহানগর সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খোকন সংস্কারপন্থি হয়ে যান। এ সময় তিনি কিংস পার্টিতে যোগ দেন। ফলে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা সাঈদ খোকনকে সমর্থন দিলে বিভক্তি দেখা দেয় নগরে। তবে সাঈদ খোকনের পেছনে নেতৃত্বে দেন নগর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ।
অন্যদিকে হাজী মো. সেলিমের পক্ষে ছিলেন নগরের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি ফয়েজ উদ্দিন মিয়া, মুকুল চৌধুরী, বজলুর রহমানসহ নেতারা।
এ বিষয়ে জানতে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে ফোনে চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এ ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা যেহেতু সাঈদ খোকনকে সমর্থন দিয়েছেন এর বাইরে যাবার কোনো সুযোগ নেই। আমরা যেহেতু মন্ত্রী তাই প্রচার-প্রচারণায় অংশ গ্রহণ করতে পারবো না।’
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা সাঈদ খোকনের পক্ষে আছি। অবশ্যই সাঈদ খোকন, হাজী মো. সেলিম ও আমাকে এক সঙ্গে কাজ করছি। আমি সাঈদ খোকনের গণসংযোগে আছি। যেখানে নেত্রীর সিদ্ধান্ত এরপর আর কিছু নেই।’
হাজী মো. সেলিমকে দেখা যাচ্ছে না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি শুনছি উনি ওমরা পালন করতে গেছেন। তাছাড়া গত ৩ এপ্রিল একসঙ্গে নামাজ পড়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। উনি প্রথম থেকেই আছেন।’