রাজশাহীর সাহেব বাজারের হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনাল নামে এক আবাসিক হোটেল থেকে তরুণ-তরুণীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। লাশ দুটি একই রুমে ছিল। পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, এটি হত্যা। প্রেমঘটিত বিষয়ও একটি কারণ হতে পারে বলে পুলিশ ধারণা করছে। শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে খবর পেয়ে হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনাল থেকে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ মরদেহ দু’টি উদ্ধার করে। নিহতরা হলেন- মিজানুর রহমান (২৩) ও সোমাইয়া ইয়াসমিন (২০)। এদিকে এ ঘটনায় বোয়ালিয়া থানা পুলিশ ওই হোটেলের ৪ বয়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।
নিহত মিজানুর রহমান সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার দবিরগঞ্জের পাঠানপাড়া এলাকার অসেদ আলীর ছেলে। সে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের ইসলামি ইতিহাসের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। সুমাইয়ার পরিবার বগুড়ার উপশহর এলাকায় থাকে। তারা পিতা আব্দুল করিম গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক। সুমাইয়া পাবনার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের প্রথম সিমেস্টারের ছাত্রী। হোটেল রেজিস্ট্যারে দেয়া মোবাইল নম্বর থেকে পুলিশ তাদের ঠিকানা উদ্ধার করে।
হোটেল রেজিস্ট্যার অনুযায়ি তাদের উভয়ের ঠিকানা দেয়া আছে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার দবিরগঞ্জের পাঠানপাড়া এলাকায়। মোবাইল ফোন নম্বর দেয়া আছে, ০১৯৪৫৮১৪৬৯৯ ও ০১৭৩৯৯৭২৯০১।
তবে রেজিস্ট্যারে পৃথকভাবে তাদের ঠিকানা দেয়া হয়েছে তা থেকে পাওয়া যায়, মিজানুর রহমান সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার দবিরগঞ্জের পাঠানপাড়ার অসেদ আলীর ছেলে ও সুমাইয়া ইয়াসমিন পাবনার রাধানগর এলাকার আব্দুল করিমের মেয়ে।
হোটেলের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ জানান, বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মিজানুর রহমান ও সোমাইয়া স্বামী-স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে হোটেলের ৩০৩ নম্বর রুমে উঠেন। ওই সময় তারা জানায় চাকরি সংক্রান্ত বিষয়ে তারা রাজশাহীতে এসেছেন।
ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ আরো জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই দুই জন হোটেলের কাউন্টারে আসেন ও বিল মিটিয়ে দিয়ে বলে শুক্রবার সকালে তারা হোটেল ত্যাগ করবেন। শুক্রবার দুপুরে প্রতিটা রুম রুটিন চেকআপ করার সময় ৩০৩ নম্বর রুমটি ভেতর থেকে বন্ধ পাওয়া যায়। পরে দরজার ফাঁক দিয়ে দেখা যায় যে, কেউ এক জন ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে। পরে তারা রুম খুলে দুই জনকে মৃত অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশকে সংবাদ দেন।
বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদৎ হোসেন খান জানান, তারা ঘটনাস্থলে এসে রুমের দরজা খোলা দেখতে পান। রুমের ভেতরে মিজানুর রহমান সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলানো অবস্থায় ছিলো ও সুমাইয়া বিছানায় পড়ে ছিল। সুমাইয়ার মুখে বালিশ চাপা দেয়া ছিল। বালিশটা ছিলো রক্ত মাখা। সুমাইয়াকে বালিশ চাপা দিয়ে মারা হয়েছে বলে পুলিশ ধারণা করছে।
ওসি আরো জানান, নিহত দুইজনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। দেখে মনে হচ্ছে হত্যা। তবে ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।
এদিকে পুলিশ ঘটনার তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই হোটেলের চার বয়কে আটক করেছে। তারা হলেন বখতিয়ার, নয়ন, ফয়সাল ও রবিউল ইসলাম।
বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাত হোসেন জানান, ৪ হোটেল বয়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আটক করেছে।
এদিকে চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে সিআইডির টিম হোটেলে উপস্থিত হয়। সিআইডি’র ফরেনসিক টিমের সদস্যরা রুমের বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে। সন্ধ্যায় লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পাঠায়। আজ (শনিবার) ময়নাতদন্ত করা হবে।