বার্ন ইউনিটে শুটিং!

0

image_116504_0ঢাকা: গ্রামের মেয়েদের ঢঙে পুরোনো একটি চেক সুতি শাড়ি পরেছেন তিনি। পায়ে সামান্য উঁচু হিলের জুতো। চেহারা সুরত আর শাড়িতে তাকে মেলানো যাচ্ছিল না। এ জন্যই নজর কাড়লেন তিনি। তার পাশেই একজন চেঁচালেন, ‘অ্যাই গ্লিসারিন কই? তাড়াতাড়ি গ্লিসারিন লাগান। ’

সেই নারী চোখে গ্লিসারিন লাগানোর পর চালু হলো ক্যামেরা। শুরু হলো দৃশ্য ধারণ। আশপাশে কিছু লোকও জমে গেল। এভাবে খানিকক্ষণ চলল শুটিং। তারপর তারা বের হয়ে গেলেন।

এটি একটি গানের দৃশ্য। তবে লোকেশন নয়নাভিরাম দৃশ্যে ভরা আহামরি কোনো জায়গা নয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিট।বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানে অবজারভেশন ওয়ার্ডে এই গানের দৃশ্য ধারণ করা হয়। গ্রামীণ নারীর বেশধারী পেট্রলবোমায় দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন একজনের মাথায় হাত রেখে শট দেন। এই রোগী গতকাল বুধবার গাজীপুরে বাসে পেট্রলবোমায় দগ্ধ হয়েছেন। সেই রোগী বা তার আত্মীয়স্বজন কিছু বুঝে ওঠার আগেই শুটিং শেষ হয়। এ সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমের ক্যামেরা এবং সাংবাদিকেরাও ব্যস্ত ছিলেন পেট্রলবোমায় দগ্ধ লোকজনকে নিয়ে। তাই বিষয়টি অনেকেরই তেমনভাবে চোখে পড়েনি।

শুটিং যিনি পরিচালনা করছিলেন তিনি নিজেকে রফিকুল ইসলাম বুলবুল বলে পরিচয় দেন। তার পরিচয় জানতে চাইলে প্রথমে তিনি নিজেকে সাংবাদিক দাবি করেন। কোন পত্রিকা? জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) জন্য কাজ করছেন বলে দাবি করেন। তাকে বলা হলো, বিটিভির তো নিজস্ব লোকবল থাকে, এভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাজ করছেন কেন? তখন তিনি বলেন, ‘অই তো হলো। আমি পারসোনালি কাজ করছি, তারপর বিটিভিকে দেব। ’

রফিকুল ইসলামের দেওয়া ভিজিটিং কার্ডে ইংরেজিতে প্রেস লেখা। রাজধানীর ২৬ মণিপুরীপাড়া ঠিকানায় পত্রিকার নাম হিসেবে দৈনিক এই বাংলা (সারা বাংলার মানুষের কথা), সাপ্তাহিক দুর্নীতি রিপোর্ট এবং ইংরেজিতে উইকলি ফ্রাইডে রিভিউ লেখা কার্ডে। সাপ্তাহিকের নামটাও (দুর্নীতি) ভুল বানানে লেখা। আর রফিকুল ইসলামের পদবি লেখা রয়েছে সিনিয়র এডিটর/অথর অ্যান্ড ফিল্ম ডিরেক্টর। তিনি যখন শুটিং নিয়ে ব্যস্ত, তখন অন্য এক রোগীর এক স্বজন এসে জানতে চান, তিনি সরকারের কোনো মন্ত্রী কি না?

বিটিভির নাম ভাঙিয়ে শুটিং হলেও বিটিভি কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে অবগত নয়। এ ব্যাপারে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে বিটিভির উপমহাপরিচালক (অনুষ্ঠান) বাহার উদ্দিন বলেন, ‘বিটিভি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে হরতাল অবরোধের শিকার রোগীদের নিয়ে ব্যবসা করার জন্য কেউ এ কাজটি করছে। এই ব্যক্তি বা তার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিটিভির কোনো সম্পর্ক নেই। বিটিভির প্যাকেজ নীতির আওতায় কেউ কিছু দিতে চাইলে তাদেরকে বিভিন্ন প্রক্রিয়া বা ধাপ পার হতে হয়। হুট করে কেউ বিটিভিকে কিছু দিতে পারে না। ’

জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের অবৈতনিক উপদেষ্টা সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘এ ধরনের শুটিংয়ের জন্য আমার কাছ থেকে কোনো অনুমতি নিতে কেউ আসেনি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্ন ইউনিটের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বার্ন ইউনিটে রোগীদের নিয়ে শুটিং করার অনুমতি দেওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।– সূত্র: প্রথম আলো

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More