ঢাকা: ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পরও যাত্রাবাড়িতে হেলে পড়া ভবনের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি কর্তৃপক্ষ। একটি নোটিশ দেয়ালে সেঁটে দিয়েই দায় সেরেছে রাজউক! তাদের ভাষ্যমতে, ভবন মালিককেই ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কেবল কোনো দূর্ঘটনা ঘটার পরই ইমারত আইনে ব্যবস্থা নেবে রাজউক।
এদিকে হেলে পড়া ভবনটির পার্শ্ববর্তী ভবনগুলোর বাসিন্দা এবং এলাকাবাসীরা বেশ আতঙ্কে আছেন। বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অনেকেই।
শুক্রবার সকালে হঠাৎ হেলে পড়ে যাত্রাবাড়ির বিরিবাগিচার ৩৫/৫ নম্বরের সাততলা একটি ভবন। ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও রাজউকের কর্মকর্তারা ছুটে যান ঘটনাস্থলে। নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয় ভবনটিতে বসবাসকারীদের।
শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রাবাড়ি থানার বেশ কয়েকজন পুলিশ ভবনটির নিচে পাহাড়া দিচ্ছেন। তারা ঘটনাস্থল সংলগ্ন রাস্তাগুলো বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে রখেছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন এলাকাবাসী। সেখানে দায়িত্বরত উপপরিদর্শক (এসআই) ছানোয়ার জানান, রাজউকের কয়েকজন কর্মকর্তা এসেছিলেন। তারা একটি নোটিশ ভবনটিতে লাগিয়ে দিয়েছেন।
যাত্রবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অবনি শঙ্কর কর জানান, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ মামলা করেননি। ভবনটির মালিক জনাব আলীকেও আটক করা হয়নি। রাজউক ভবন মালিককে নোটিশ দিয়েছে। এরপর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞদল ঘটনাস্থলে আসবে। শনিবার পর্যন্ত বুযেটের কোনো প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে যায়নি।
রাজউকের অথরাইজড অফিসার (৬/১) ফজলুর রহমান, স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ হেলেপড়া ভবনটিতে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। ভবন মালিক হাজী মো. জনব আলীর উদ্দেশে লেখা সেই নোটিশে বলা হয়েছে, তিনি যেন নিজ উদ্যেগে বুয়েটের পুরকৌশল কিংবা বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা বিধান করে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণপূর্বক
রাজউকসহ সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরসমূহকে অবহিত করেন।
নোটিশে আরো বলা আছে, ওই ভবনসহ আশপাশের ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ইমারতের সব ব্যবহার বন্ধ থাকবে।
রাজউক কর্তৃক অনুমোদিত নকশা, কাঠামোগত নকশা, মৃত্তিকা পরীক্ষার রিপোর্ট, ভবনটি নির্মাণে যেসব প্রকৌশলী বা স্থপতিরা নিয়োজিত ছিলেন তাদের তালিকা রাজউকে জমা দেয়ার নির্দেশও দেয়া হয়েছে নোটিশে।
নোটিশে আরো বলা হয়, এ বিষয়ে কোনো দূর্ঘটনা ঘটলে সম্পূর্নরুপে তিনি ( ভবন মালিক) এবং তার ব্যবস্থাপকরা ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন এবং এজন্য ইমারত নির্মান আইন ১৯৫২ এর সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে ফজলুর রহমানের বক্তব্যের জন্য তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এদিকে হেলে পড়া ভবনের পাশ্ববর্তী ৩৫/৪ নম্বর ভবনের বাসিন্দারাও ভবন ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। ঐ ভবনের বাসিন্দা সালেহা জানান, তাদের ভবনের উপরই ঐ ভবনটি হেলে পড়ায় আতঙ্কিত হয়ে তারা আজই (শনিবার) বাসা ছেড়ে দিচ্ছেন।
লিচু বাগান এলাকার বাসিন্দা জুয়েল জানান, তারা একই সাথে আতঙ্কে এবং ভোগান্তিতে আছেন। কারণ পুলিশ উৎসুক জনতার ভিড় ঠেকাতে এবং নিরাপত্তার স্বার্থে আশপাশের গলিগুলোর রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে তাদেরকে অনেকটা পথ ঘুড়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
ভবনের জায়গাটির পূর্বের মালিক আতিক জানান, ভবনটির মালিক জনাব আলী ২০ থেকে ২৫ বছর পূর্বে তাদের কাছ থেকে জায়গাটি কেনেন। এরপর তিনি এখানে ভবন তৈরির সময় খুবই নিম্নমানের রড ও নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করেন। ওই সময়ই এলাকাবাসী জনাব আলীকে এভাবে ভবনটি তৈরি না করতে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু তিনি কারো কথা না শুনে ভবনটি তৈরি করেন।
এলাকাবাসীর অনেকেই জানান, ভবনটি প্রথমে ৪ তলা ছিল। গত কয়েক বছর আগে তা ৭ তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়তি অংশটুকুর বেশিরভাগই পার্শ্ববর্তী ভবনের উপর হেলে পড়েছে।
হেলেপড়া ভবনটির একজন বাসিন্দা জানান, গতকাল (শুক্রবার) জনাব আলী একবার তার ফোন ধরলে এরপর থেকে তার ফোনটি বন্ধ রয়েছে। এলাকাবাসীও জনাব আলীর কোন খোঁজ জানাতে পারেননি।