রাজু রহমান ‘মা’ ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে রান্নাঘরে যান রুটি বানাতে। নাস্তা তৈরি করেই ছোট ছেলেটিকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে স্কুল ড্রেস পরিয়ে রেডি করে নাস্তা খাইয়ে স্কুল ভ্যানে তুলে দিয়ে এসেই বাবাকে অফিসে যাওয়ার জন্য সাহায্য করেন। বাবাকে অফিসে পাঠানোর পর বড় ছেলেকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে তাকেও খাইয়ে-দাইয়ে রেডি করেন ইউনিভার্সিটির জন্য।
সকালের প্লেট-বাসন পরিষ্কার করে, দুপুরের রান্না বসিয়ে দেন। ছোট্ট রান্নাঘরে গ্যাসের আগুনের তাপে ঘামতে ঘামতে তৈরি করে ফেলেন দুপুরের খাবার। কাপড়-চোপড় ধোয়া, ঘর-দোর পরিষ্কার করা, বিছানা গোছানো এরই মধ্যেই সেরে ফেলেন ‘মা’। গোসল করে উঠতেই ছোট ছেলে স্কুল থেকে চলে আসে। তাকে গোসল করিয়ে, ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে দিয়ে ‘মা’ বসেন জায়নামাজে।
খাওয়া শেষে ছোট ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে দেন ‘মা’। এদিকে সারাদিনের পরিশ্রমে, ক্লান্তিতে ‘মা’র মাথা ঘুরতে থাকে, প্রেসারে ঘাড় প্রচণ্ড ব্যথা করতে থাকে ও মাথা গরম হয়ে যায়, ইচ্ছে করে একটু বিছানায় মাথা গুজে শুতে। কিন্তু ‘মা’ বিছানায় একটু শুতে না শুতেই বড় ছেলে এসে পড়ে ইউনিভার্সিটি থেকে। বড় ছেলেকে টেবিলে ভাত বেড়ে দেন ‘মা’। সেই ফাঁকে ‘মা’ একটু খেয়ে নেন।
এদিকে মাগরিবের আযান বেজে উঠে মসজিদে। শুরু হয়ে যায় সন্ধ্যার নাস্তা তৈরি করার পালা। হরেক রকমের নাস্তা তৈরি করেন ‘মা’ শুধুমাত্র তার আদরের সন্তানদের জন্য, তাদের একটুখানি হাসির জন্য, তাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য। নাস্তা খাইয়ে ছেলেগুলো যখন পড়ার টেবিলে বসে তখন ‘মা’ একটু জিরনোর জন্য বিছানায় মাথা ঠেকান।
সাথেসাথে ক্রিং ক্রিং করে কলিং বেলটা বেজে উঠে। ঠিক সেই মুহূর্তে ঐ আওয়াজ টা যেন বাজ পাখির মত কর্কশ ধন্বীতে কানে বাজতে থাকে ‘মা’র। ‘মা’ সমস্ত ক্লান্তি ভুলে গিয়ে দরজা খুলে হাসিমুখে বলে ‘তুমি এসেছ?’ বাবার হাত থেকে অফিসের ব্যাগটা নিয়ে রুমের মধ্যে ঢুকেন ‘মা’।
রাতে টেবিলে খাবার বেড়ে সবাইকে খাইয়ে, প্লেট বাসন গুছিয়ে, ছোট ছেলের পাশে বসে থেকে তসবী পাঠ করতে থাকেন ‘মা’। ছোট ছেলের পাশে বসে না থাকলে যে তার পড়া হয় না। যতক্ষণ ছেলেটা পড়তে থাকে ‘মা’ প্রদীপের আলোর মত করে ঝিমুতে ঝিমুতে ততক্ষণ অপেক্ষা করতে থাকেন। ছেলের পড়া শেষে মশারি টানিয়ে ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে, বড় ছেলের মশারি টানিয়ে, বাবার মশারি টানিয়ে অবশেষে বিছানায় শুয়ে ‘মা’ চোখ বুজেন।