বাধা এড়িয়ে বড় হওয়া যায় না : হাবিবুল বাশার

0

Habibulক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঘটনগুলোর একটা বলা হয়, ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়াকে বাংলাদেশের হারিয়ে দেওয়া সেই ম্যাচটিকে। ম্যাচে দারুন নেতৃত্ব দিয়ে, ব্যাট হাতে অসাধারণ এক ইনিংস খেলে বাংলাদেশের নাম ক্রিকেট বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন বর্তমান নির্বাচক হাবিবুল বাশার।
আগামীকাল বাংলাদেশ আরেকটি ম্যাচ খেলতে নামবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। তার আগেই সেই কার্ডিফ মহাকাব্য ও বর্তমান দলের কর্তব্য নিয়ে প্রিয়.কমকে দেওয়া সাক্ষাতকে বিস্তারিত বলেছেন হাবিবুল বাশার।
প্রিয়.কম-এর হয়ে সাক্ষাতকার নিয়েছেন দেবব্রত মুখোপাধ্যায়

কার্ডিফের কথা মনে পড়ে?
আহ! আমি বলি, কার্ডিফের ওই ম্যাচ আমার জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা। এটা কিন্তু ‘মিন’ করেই বললাম। আমি একেবারে কম ম্যাচ তো জিতিনি। বিশে^র প্রায় সব বড় দলের বিপক্ষেই অধিনায়ক হিসেবে একটা-দুটো ম্যাচ জিতেছি। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওই জয়টা সেরা অভিজ্ঞতা, সবচেয়ে সুন্দর অভিজ্ঞতা।

ম্যাচের পর আপনি বলেছিলে, নিজেকে পৃথিবীর সুখীতম মানুষ হনে হচ্ছে…
ঠিক, ঠিক। আসলেই তাই না! আমি তো বটেই; আমরা পুরো দলই মনে হয় আকাশে উড়ছিলাম। আসলে এটা তো সূদুরতম কল্পনাতেও কারোর আশার কথা না। দ্যাট অস্ট্রেলিয়া ওয়াস ড্রিম টিম। আমি জানি না, এটা বলা ঠিক হবে কি না, অস্ট্রেলিয়াও কী আর কখনো অতো ভালো দল গড়তে পারবে? কঠিন, কঠিন। ওই দলের বিপক্ষে ইংলিশ কন্ডিশনে ওরকম দাপট দেখিয়ে জেতাটা বাংলাদেশের জন্য তখন সবচেয়ে বড় স্বপ্নেও দেখা কঠিন ছিল।

ম্যাচের আগে নিজেরা সাহস করে ভাবতে পেরেছিলেন?
এতোদিন পর আর বানিয়ে বানিয়ে বলে লাভ কী! পারিনি। কেউ পারে না। হয়তো বলার জন্য অনেক কিছু বলি। বলি যে, আমরা হারানোর কথা ভেবেছিলাম বা এরকম কিছু। আসলে ভাবতে পারিনি। আমরা ভালো একটা লড়াই করতে চেয়েছিলাম। চেয়েছিলাম, এরকম একটা ড্রিম টিমের বিপক্ষে কিছু মনে রাখার মতো পারফরম্যান্স করতে।

ওদের ২৪৯ রানে অলআউট করে দেওয়ার পর মনে হয়নি যে, এই টার্গেট ছোয়া সম্ভব?
মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক না? ওদের বোলিংটা ভাবুন না। ম্যাকগ্রা, গিলেস্পি, ক্যাসপ্রোইচ; অবিশ^াস্য। ইংলিশ কন্ডিশনে ওদের এই তিন পেসারকে খেলাই তো একটা দুঃস্বপ্নের ব্যাপার। আবার ওদের ব্যাটিংটাও দেখুন। ওরকম টিম না হলে কিন্তু দুই শ পার করতে পারতো না।

মানে, অস্ট্রেলিয়ার রান আরও কম হতে পারতো?
পারতো। অন্য অনেক দল হলে তাই হতো। মাশরাফি দারুন শুরু করলো। প্রথম বলেই তো গিলক্রিস্ট আউট। এরপর তাপস দারুন বল করলো। কিন্তু ঠিকই পরে এসে ওরা সামলে নিলো ধ্বসটা।

ঠিক কোন সময়ে বুঝতে পারলেন, ম্যাচ জিতে যাচ্ছেন?
হুম….। ম্যাচ জিতে যাওয়ার পর। হা হা হা…। আসলে আমি আর আশরাফুল যখন ব্যাটিং করছিলাম, তখন জয়টা দেখা যাচ্ছিল। পরপর দু জন আউট হয়ে গেলাম। তারপর কিন্তু আবার একটু ধাক্কা লেগেছিল। আসলেই ম্যাচ বের হয়ে না আসা পর্যন্ত মাথা ঠান্ডা করে কিছু ভাবিনি।

একটা মজার ব্যাপার। আপনি যখন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছেন, তখন অস্ট্রেলিয়া এক নম্বর। যখন দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছেন, তখন তারা এক নম্বর। এটা কী টার্গে করতেন যে, এক নম্বরকে হারাবো!
নাহ, নাহ। প্রশ্নই আসে না। এটা কাকতালীয় ব্যাপার। একটা ব্যাপার ছিল যে, আমরা বড় দলগুলোর বিপক্ষে একটু বেশী উজ্জীবিত থাকতাম; এখনও মনে হয় তাই হয়। বাংলাদেশ দেখবে, বড় দলের বিপক্ষে সবসময় বড় পারফরম্যান্স করে। আবার কানাডা, কেনিয়া, হংকংয়ের কাছে হেরে যায়।

একটু বর্তমানে আসি। এতো কথা কার্ডিফ নিয়ে কেন হচ্ছে, বুঝতে তো পারছেন…
হা হা হা…। হ্যা, আগামীকালকের ম্যাচের আগে চিয়ার আপ করতে চাইছেন। সেটা ভালো।

আগামীকাল কার্ডিফ ফেরার চান্স আছে?
আছে। এখন তো আর অতো অবিশ্বাস্য না ব্যাপারটা। এই অস্ট্রেলিয়ার প্রতি আমার শ্রদ্ধার অভাব নেই। আমি জানি, এরা দিনকে দিন দারুন শক্তিশালী হয়ে উঠছে এবং এখন তারা নিজেদের মাঠে খেলছে। তারপরও ওই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে তুলনা করলে ক্লার্কের দল একটু পিছিয়েই থাকবে, নাকি? আর বাংলাদেশও তো এখন অনেক পরিণত দল। দলে সুপার কিছু পারফরমার আছে। ফলে এখন এটা বেশ সম্ভব।

এই চিন্তা ফলে কী আবার বাংলাদেশ একটু চাপে থাকবে না? আপনার সময়ে আপনাদের ওপর কোনো প্রত্যাশা ছিল না। ফলে মনের আনন্দে নির্ভার ক্রিকেট খেলতে পেরেছেন। কিন্তু এখন তো মাশরাফিদের কাছে চাওয়া আছে। এটা কী চাপ না?
নাহ। আমি এটাকে বলি, শ্রদ্ধা অর্জন। এক ধরণের চাপ এটা হয়তো। এই চাপ ভালো করার জন্য জরুরী। এই চাপটা হল, এক ধরণের স্বীকৃতি। প্রতিপক্ষ এবং সমালোচকরা এখন আপনার জয় চাচ্ছে, মানে আপনাকে রিকগনাইজ করছে। আমার ক্যারিয়ারের বড়টা সময় আমি এই কল্পনা করেছি যে, কবে এই স্বীকৃতিটা পাবো।

আপনি তো সেই স্বীকৃতি পেয়েছিলেন…
হ্যা, ২০০৭ সালে সম্ভবত। লোকেরা বলতে শুরু করলো, বাংলাদেশ আর ছোট দল নয়। আমাদের নিয়ে প্রত্যাশা তৈরী হলো। ওই প্রত্যাশাটা আমাকে গর্বিত করতো। আমি কখনো অনুভব করিনি যে, এটা সমস্যা হতে পারে।

শেষ প্রশ্ন। আগামীকাল ব্রিসবেনে প্রবল ঝড়ের সম্ভাবনা আছে। অনেক সমর্থক এতে আশাবাদী। তারা এক পয়েন্ট পাওয়ার সম্ভাবনায় আনন্দিত। আপনি হলে কী চাইতেন; এক পয়েন্ট, নাকি খেলা!
অবশ্যই খেলা। এক পয়েন্ট তো নেতিবাচক চাওয়া। এই চাওয়ার পর্যায় বাংলাদেশ অনেক আগে পার করে এসেছে। দেখুন, বাংলাদেশ দল বড় দল হতে চায়। এখন বড় দল কী আপনি অন্য বড় দলদের কাছ থেকে পালিয়ে পালিয়ে হবেন? কখনো বাধা এড়িয়ে গিয়ে আপনি বড় হতে পারবেন না। বাধা সামলাতে হবে; হারবেন, লড়বেন; কিন্তু মোকাবেলা করতে হবে। এখানে তো খেলোয়াড়দের চাওয়ার ওপর কিছু নির্ভর করছে না। ঝড় হওয়ার হলে সে হবেই। তবে চাওয়াটা অবশ্যই খেলার পক্ষে থাকতে হবে।

প্রিয়.কম

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More