নাশকতার সিডি-বই যাচ্ছে দূতাবাসে
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের চলমান অবরোধ-হরতালে সংঘটিত নাশকতার সচিত্র প্রতিবেদন সংবলিত সিডি ও বিভিন্ন প্রকাশনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এমন উদ্যোগের উদ্দেশ্য হলো বিএনপিকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের আদলে বাংলাদেশের জঙ্গি দল হিসেবে প্রমাণ করা। ক্ষমতাসীন দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধ কর্মসূচিতে বিভিন্ন নাশকতার চিত্র সংবলিত তথ্য-প্রমাণ বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তথ্য প্রমাণ সংগ্রহের কাজ এরই মধ্যে শেষ করেছে আওয়ামী লীগ। এখন সেগুলো দূতাবাসগুলোতে পাঠানো শুরু করবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ শনিবার দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ের বিএনপি-জামায়াত নামক সন্ত্রাসী দলের নাশকতা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের প্রামাণ্যচিত্র সিডি ও বই আকারে বিভিন্ন দূতাবাসে পাঠানো হবে। কাজ আজ (শনিবার) শেষ করেছি । আশা করছি, কাল বা পরশুর (রবিবার বা সোমবার) মধ্যে সকল দূতাবাসে পৌঁছে যাবে।’
আওয়ামী লীগের এ উদ্যোগ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী দ্য রিপোর্টকে বলেন, আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) বলেছেন, সহিংসতা চাই না, আন্দোলন অহিংস। তারপরও নাশকতা, সহিংসতা ঘটছে। এ সব নাশকতার পর বিভিন্নজনকে গ্রেফতার করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এদের মধ্যে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্রলীগ এমনকি আওয়ামী লীগের লোকজনও আছে। তাই ম্যাডাম বলেছেন, সত্যিই যারা নাশকতা করে তাদের ধরা হোক।
তিনি বলেন, গোয়েন্দা প্রতিবেদনের তথ্য দিয়ে খবর বেরিয়েছে, বোমা কেনাবেচা ও নাশকতায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়িত। তাহলে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে জঙ্গি বলে কিভাবে।
রুহুল আলম চৌধুরী আরও বলেন, বিএনপি গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলন করছে। এটি একটি গণতান্ত্রিক দল, যে দলটি তিনবার সরকার গঠন করেছে। এ দলটিকে জঙ্গী বানানোর চেষ্টা দেশের জন্য খুবই খারাপ হবে। সরকার তেমন কিছু করলে হিতে বিপরীত হবে। কারণ জনগণ জানে বিএনপি নাশকতায় বিশ্বাস করে না।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা দফতরের তত্ত্বাবধানে ভিডিও সিডি ও বইয়ে ঠাঁই পেয়েছে- রেললাইন উপড়ে ফেলা, পেট্রোলবোমা হামলাকারী আটকদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী, পোড়া বাসের চিত্র, শিশুদের ক্ষত-বিক্ষত দেহের চিত্র, আহত ও নিহতদের তালিকা। দলটি নাশকতার এ সব তথ্য সংবলিত প্রকাশনা দূতাবাসগুলোতে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করবে। পর্যায়ক্রমে সকল দূতাবাসে এ সব পাঠানো হবে।
গত ৫ জানুয়ারি দেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ডাকা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। ৬ জানুয়ারি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট অনির্দিষ্টকালের সড়ক, নৌ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে। এর সঙ্গে মাঝে মধ্যেই পালন করছে বিভিন্ন মেয়াদের হরতাল। টানা অবরোধে পেট্রোলবোমা ও বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কমপক্ষে ৮০ জন নিহত হয়েছেন। পেট্রোলবোমার আগুনে দগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন শতাধিক মানুষ। দেশের চলমান এ সব নাশকতার দায় বিএনপির ওপর চাপিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ। তবে বিএনপি তা বরাবরই অস্বীকার করে উল্টো আওয়ামী লীগকেই দায়ী করছে।
ক্ষমতাসীন দলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ শীর্ষস্থানীয় বহু নেতা বিএনপিকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এখন দলের এই ভাষ্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে প্রমাণসহ পৌঁছানোর উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের দুইজন নেতা এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জানান, বিএনপি যা করছে তা আন্দোলন এটা আমরা জানি। কিন্তু বিএনপি সরকারের কৌশলের কাছে হেরে গেছে। বিএনপি পেট্রোলবোমা মারছে গণমাধ্যমে তা ব্যাপকভাবে প্রচার পাচ্ছে, যা নাশকতা, ধ্বংসাত্মক আন্দোলন। সারাবিশ্ব এখন আইএসের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়ছে। সরকারও বাংলাদেশের সন্ত্রাসী দল বিএনপির বিরুদ্ধে লড়ছে। এই কৌশলী প্রচারই এখন আওয়ামী লীগের কৌশল।
নেতারা জানান, সর্বশেষ বিএনপির এ আন্দোলন এখন সহিংস ও জঙ্গি আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেছে। এ জন্য বিশ্ব নেতৃত্বও বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াবে বলে তারা মনে করছেন। কেননা সরকার জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর- এমন ধারণা ভারতসহ অন্যান্য বিদেশী দূতাবাসগুলোও জানে।
নেতারা আরও জানান, সারাবিশ্বের কাছে বাংলাদেশে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যার সংবাদ এরই মধ্যে পৌঁছে গেছে। আর এ সব করছে বিএনপি। বিএনপি-জামায়াত যতই পেট্রোলবোমা মারুক আর নাশকতা করুক সরকার আরও কঠোর হবে। এটাকে আন্দোলন হিসেবে সরকার আর স্বীকৃতি দেবে না। বরং প্রশাসনিক ও রাজনৈতিকভাবে আরও কঠোর হাতে এ দুই দলের নেতাকর্মীদের দমন করবে। এ জন্য ১৪ দলকেও সক্রিয় করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ১৪ দলের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব লায়ন এমএ আউয়াল এমপি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয় না। যুক্তরাষ্ট্র কি আইএসের সঙ্গে আলোচনা করবে? তাহলে আমরা কেন আলোচনা করব? আমরা তো আগেই বলেছিলাম, নাশকতা ছাড়লে সংলাপের বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে। কিন্তু বিএনপি তো জামায়াতের কারণে আমাদের কথা শুনল না। এখন সরকার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবেই এই জঙ্গিদের দমন করবে। সারাবিশ্ব যেভাবে তাদের দমন করছে সেভাবেই দমন করা হবে।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বাংলাদেশে তো কোনো সঙ্কট নেই। মানুষজন রাস্তায় বের হচ্ছে। বিএনপির হরতালের মধ্যেও তো রাস্তায় ভীষণ জ্যাম। যারা আলোচনার কথা বলছে আসলে সঙ্কট তাদের মধ্যে।’
সূত্রঃ দিরিপোর্ট২৪ (সাগর আনোয়ার)