ছাত্রলীগ নেতাকে নিয়োগ না দেওয়ায় চবির ভিসি অফিসে ভাঙচুর, শাটল ট্রেন আটকা

0

ছাত্রলীগের এক নেতাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) নিয়োগ না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উপাচার্যের দপ্তরে ভাঙচুর করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ‘একাকার’ গ্রুপের নেতাকর্মীরা আজ সোমবার বিকেল ৫টার পর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটান। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনও আটকে রেখেছেন তারা।

সোমবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়সহ চলমান সমস্যা নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে চলছিল সিন্ডিকেট সভা। দিনভর এই সভা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ও উপাচার্যের দপ্তরের সামনে দেখা যায় ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের নেতাকর্মীদের অবস্থান ও চাপা উত্তেজনা।

বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং ‘একাকার’ গ্রুপের নেতা মাঈনুল ইসলামের নেতৃত্বে উপাচার্যের দপ্তরে ভাঙচুর চালায় ওই গ্রুপের নেতাকর্মীরা। উপাচার্যের দপ্তরের সামনে রাখা কয়েকটি ফুলের টব এবং দপ্তরের ভেতরে রাখা বেশ কয়েকটি প্লেট ও চায়ের কাপ ভেঙে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। পরে সেখানে ছাত্রলীগের কয়েকটি গ্রুপের নেতাকর্মীরা সেখানে আসেন।



ভাঙচুরের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান যাতায়াত মাধ্যম শাটল ট্রেন আটকে রাখে ছাত্রলীগের একাকার গ্রুপের নেতাকর্মীরা। ছবি- সমকাল।

একাকার গ্রুপের নেতা মাঈনুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রলীগের সাবেক নেতা রায়হান আহমেদকে নিয়োগ না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে আমরা ভাঙচুর করেছি। সরকারবিরোধী, কোটাবিরোধী আন্দোলনের নেতারা এবং শিবিরের কর্মীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে নিয়োগের সুযোগ পায়। অথচ ছাত্রলীগের মেধাবী ছাত্ররা সুযোগ পায় না। আমরা সিন্ডিকেট সভা চলাকালীন সময়ে উপাচার্যের কক্ষে কিছুটা ভাঙচুর করেছি।’

নিয়োগের আগেই কেন এমন ভাঙচুর- এই বিষয়ে মাঈনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েছি এই বিষয়ে। তাই ক্ষুব্ধ হয়েছে ছাত্রলীগ। কোটাবিরোধী আন্দোলনের কয়েকজন নেতা ও ফেসবুকে সরকারবিরোধী পোস্ট দিয়েছে এমন প্রার্থীরাও নিয়োগ পরীক্ষার ভাইবা দিতে এসেছিল। আমরা তাদের আটকানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু প্রশাসন তাদের নিরাপদের বের করে দিয়েছে। ভাইবার আগেই আমরা উপাচার্যকে কয়েকবার বলেছি আমাদের প্রার্থীর বিষয়ে। কিন্তু সরকারবিরোধী প্রার্থীরা যখন ভাইবা দিতে আসে এরপর তো আর কথা বলার থাকে না।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অরুপ বড়ুয়া বলেন, ‘উপাচার্যের দপ্তরে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে কয়েকটি। কারা এসব ভাঙচুর করেছে তা সহজেই চিহ্নিত করা যাবে। ঘটনার সমাধানে এবং পরিস্থিতি শান্ত করতে এখন প্রক্টররা কাজ করছেন। পরবর্তীতে তদন্ত করা হবে কারা জড়িত ছিল।’

চবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, ‘আমি জেনেছি ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী ভাঙচুর করেছে এবং শাটল ট্রেন আটকে রেখেছে। কেন করেছে এটি আমি খোঁজ নিয়ে সাংগঠনিকভাবে বিবেচনা করব।’

এছাড়া চবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও ভার্সিটি এক্সপ্রেস গ্রুপের নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় জানান, এ বিষয়ে সরাসরি জড়িত না থাকলেও তার মৌন সম্মতি আছে।

আরেক সহসভাপতি ও বাংলার মুখ গ্রুপের নেতা রাকিবুল ইসলাম দিনার জানান, ছাত্রলীগের মেধাবী ছাত্রকে নিয়োগ না দেওয়ায় একাকার গ্রুপের এই কার্যক্রম যথাযথ বলে তিনি মনে করেন।

শাটল ট্রেন আটকা

ভাঙচুরের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান যাতায়াত মাধ্যম শাটল ট্রেন আটকে রাখে ছাত্রলীগের একাকার গ্রুপের নেতাকর্মীরা। বিকেল সাড়ে পাঁচটার শাটল ছাড়ার কিছুক্ষণ আগে চাবি ছিনতাই করে তারা। নয়টি বগীতে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শহরগামী এই শাটল আটকে দেওয়ায় বিপাকে পড়ে শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল আটকে থাকার বিষয়ে বটতলী স্টেশনের স্টেশনমাস্টার বলেন, ‘আমাদের চালককে ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণ আগে ভয় দেখিয়ে চাবি নিয়ে যায়। তাই সাড়ে পাঁচটার ট্রেনটা আটকে আছে। পরবর্তী ট্রেন চলবে কি না সেটি নিশ্চিত নয়।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ থেকে আমরা জেনেছি শাটলের চালক থেকে ছাত্রলীগের পরিচয় দিয়ে চাবি ছিনিয়ে নিয়েছে কিছু ছেলে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শাটলের চাবি ছিনতাইয়ের বিষয়ে মাঈনুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারবিরোধীদের নিয়োগ দিয়ে ছাত্রলীগের মেধাবী প্রার্থীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। ছাত্রলীগের নেতাকে নিয়োগ না দিলে আমরা আন্দোলন করে যাব।’

উৎসঃ   সমকাল
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More