বিচারককে ভাত খেতে দেব না, চাকরি করতে দেব না: আ’লীগ এমপি

0

একজন শিক্ষককে জেলে যেতে হলে বিচারককে ‘ভাত খেতে দেবেন না’ ও ‘চাকরি করতে দেবেন না’ বলে হুমকি দিয়েছেন কক্সবাজার সদর আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) সাইমুম সরওয়ার কমল।

শনিবার কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির রামু উপজেলা শাখা আয়োজিত শিক্ষক মিলনমেলা, নবীনবরণ, বিদায় ও কৃতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ হুমকি দেন।

এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, ‘রামুর একজন শিক্ষক। নাম জসিমউদ্দিন। তার বিরুদ্ধে দ্রুতবিচার আইনে মামলা হয়েছে। আমি জজ সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছি। দ্রুত বিচার, ঘটনা মিথ্যা, কোনো ঘটনা নেই। জমি নিয়ে গণ্ডগোল। সেখানে কোনো মারামারি হয়নি। কোনো ভিডিও ফুটেজ নেই। কোনো সাক্ষী নেই। কিন্তু একজন পেশকার একজন জজকে ম্যানেজ করে একটা দ্রুতবিচার আইনে মামলা দিয়েছে।’

‘ইনশাআল্লাহ আমি বেঁচে থাকতে তাকে জেলে যেতে দেব না। তাকে যদি জেলে যেতে হয়, তা হলে আমি বেঁচে থাকতে যে জজ সাহেব মিথ্যা মামলা করেছে, তাকে আমি জীবনে ভাত খেতে দেব না। তাকে আমি চাকরি করতে আর দেব না। এই আমার কথা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা সবাই থাকবেন, শিক্ষকের বিপদে শিক্ষককে আসতে হবে। একজন শিক্ষকের বিপদে সব শিক্ষককে একসঙ্গে জানাতে হবে। কোনো শিক্ষক যদি কোথাও অসম্মানিত হয়, তা হলে আমার আসনের প্রত্যেকটি স্কুল একসঙ্গে বন্ধ করে দিতে হবে।’

‘শিক্ষক সমিতি, প্রতি মাসে আপনারা মিটিং করবেন। আপনাদের সম্মান রক্ষার্থে, জীবন রক্ষার্থে, সম্পদ রক্ষার্থে এই সমিতি কার্যকর ভূমিকা যাতে পালন করে।’ যোগ করেন এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল।

এদিকে শিক্ষকদের নিয়ে এত দরদ দেখানো এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের বিরুদ্ধে নিজেরই এক প্রবীণ শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ আছে। লাঞ্ছনার শিকার শিক্ষক সুনীল কুমার শর্মা সংসদ সদস্য কমলকে শিশুকালে পড়িয়েছেন।

২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি দুপুরে রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালায় নির্মিতব্য বিকেএসপি মাঠ এলাকায় জনসম্মুখে এ ঘটনা ঘটেছিল। শিক্ষক সুনীল কুমার শর্মা রামুর চৌমুহনী এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা।

শিক্ষক সুনীল কুমার শর্মা সে সময় গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘প্রতিদিনের মতো রোববার দুপুর দেড়টার দিকে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। এ সময় জোয়ারিয়ানালা বাজারে দক্ষিণ পাশে বিকেএসপির নির্মিতব্য মাঠে মাটি ভরাট কাজ উদ্বোধন উপলক্ষ্যে স্থানীয় এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলসহ অন্যদের দেখে গাড়ি থেকে নামেন তিনি। সবার সঙ্গে কাজ উদ্বোধনী মোনাজাতে অংশ নেন।’

মোনাজাত শেষ করে এমপি কমল তার দিকে এগিয়ে এসে স্যার সম্বোধন করে কুশল বিনিময় করেন। স্কুল থেকে ফিরছি শুনে হঠাৎ বলেন, ‘তোর ছেলে সুজন ঢাকায় আমার বিরুদ্ধাচরণ করছে। আমার মতের বাইরে যাওয়া আমি একদম পছন্দ করি না। তাকে সাবধান করে দিস। নইলে গায়েব করে ফেলব।’

শিক্ষক সুনীল কুমার শর্মা বলেন, আমি হতভম্ব হয়ে ‘তুই-তোকারি’ করে কথা বলার কারণ জানতে চাইলে তিনি আরও কাছে এসে গলায় হাত দিয়ে ধাক্কা মারেন। এর পর পাঞ্জাবি টেনে ধরে বলেন, ‘তোর ছেলেকে সাবধান করবি। নইলে খবর আছে।’ উপস্থিত সবাই আশ্চর্য হয়ে বিষয়টি চেয়ে চেয়ে দেখেছে। কেউ এমপি কমলের অপকর্মের প্রতিবাদ করেনি।

সুনীল কুমার শর্মা বলেন, প্রবীণ শিক্ষক হিসেবে এলাকার সবাই আমাকে সম্মান করে। আমি কোনো রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত নই। আমার ছেলে সুজন শর্মা ঢাকায় রামু সমিতির সাধারণ সম্পাদক। সমিতির অভিষেকে অতিথি দাওয়াত নিয়ে সুজনের সঙ্গে কমলের বিরোধ হয়েছে। ছেলের সঙ্গে বিরোধের জন্য প্রকাশ্যে আমারই ছাত্র এমপি কমল আমাকে লাঞ্ছিত করে।

তিনি আরও বলেন, এটি বড়ই লজ্জার। ভাবতেও আমার গা শিউরে ওঠে। আমি রামু শহরের মণ্ডলপাড়ার বাড়িতে গিয়ে কমলকে পড়িয়েছি। এখন কমল সংসদ সদস্য। এটা নিয়ে গর্ব হয়। তাই আসার পথে উন্নয়নকাজের উদ্বোধন করছে দেখে আনন্দিত হয়ে গাড়ি থেকে নেমেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে, নিজেই নিজের লাঞ্ছনা হাতে ধরে এনেছি। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করে।

উৎসঃ   যুগান্তর
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More