রোজা ঘিরে দ্রব্যমূল্যের যাঁতাকলে সাধারণ মানুষ, সরকারের হুঁশিয়ারিতেও অনড় সিন্ডিকেট
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৩ বা ২৪ মার্চ শুরু হবে সংযমের মাস পবিত্র রমজান। রোজায় কিছু পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মাসের খরচেও বড় একটা চাপ পড়ে। এর মধ্যে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাড়ায় নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি। সরকার রমজান মাসের বাজার নিয়ন্ত্রণে হুঁশিয়ারি দিলেও বাস্তবে এর এক মাস আগেই মূল্যস্ফীতির যাঁতাকলে পড়ে হাঁসফাঁস করছে সাধারণ মানুষ। রমজান সামনে রেখে ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে আবারও বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। সরকারের হুঁশিয়াতেও অটল বাজার সিন্ডিকেট- এমনটাই মনে করছেন সাধারণ মানুষ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশে দাড়িয়েছে, যা জানুয়ারিতে ছিল ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ।
‘সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। আর আমাদের দেশে যে পণ্যের কদর বেশি সেই পণ্যের মূল্য ধুম করে বাড়ে। আর যেই পণ্যের দাম একবার বাড়ে সেটির দাম আর কমে না। আর বাজার সিন্ডিকেটকে সরকার কিছুই করতে পারে না।’- দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে এভাবেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান বেসরকারি চাকরিজীবী তাইজুল ইসলাম।
রাজধানীর মগবাজারে দিলু রোডে মুদি দোকানগুলোর সামনে তার সঙ্গে ঢাকা টাইমসের আলাপ হয়।
আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে ছোলা, বুট, আদা, সাদা চিনি, রসুন, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। তবে আটা-ময়দার দাম কমেছে।
শনিবার দুপরে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরজমিনে দেখা গেছে, গত রমজানে ছোলার মূল্য প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা ছিল, যা কয়েকদিন আগেও ২০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। রমজানের আর মাত্র পাঁচদিন বাকি আছে, রমজানকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে ছোলার দাম আরও ৩০ টাকা বেড়ে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বুটের ডাল(অ্যাংকর) ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কয়েক মাস আগেও ৯০ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
অন্যদিকে ইন্ডিয়ান আদা ২৬০ টাকা থেকে ২০ টাকা বেড়ে ২৮০ টাকা, ১৪০ টাকা কেজির দেশি আদা ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, চায়না রশুন ১৭০ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ১৮০ টাকা, দেশি রসুন ১২০ থেকে ১০/২০ টাকা বেড়ে ১৩০/১৪০ টাকা, ৪০ টাকা কেজির ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৫ টাকা বেড়ে ৪৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা থেকে ৫ টাকা বেড়ে ৪০ টাকা, চিনির কেজি ১১৫ টাকা থেকে ৫ টাকা বেড়ে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কেজিপ্রতি ২০ টাকায় বিক্রি হওয়া পুরাতন আলু এক মাসের ব্যবধানে ৫ টাকা বেড়ে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে ২ কেজি ওজনের আটার প্যাকেট ১৫০ থেকে ১৫ টাকা কমে ১৩৫ টাকা, এক কেজি ওজনের আটা ৭৫ টাকা থেকে ৭ টাকা কমে ৬৮ টাকা, ২ কেজি ওজনের ময়দা ১৭১ টাকা থেকে ১৫ টাকা কমে ১৫৬ টাকা, ১ কেজি ওজনের ময়দা ৮৫ টাকা থেকে ৭ টাকা কমে ৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মগবাজার এলাকার বাসিন্দা কাওছার আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের মুলা বুঝ দিয়ে যাচ্ছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। দেশে অনেক পণ্য মজুত রয়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক, এমনকি রমজান মাসে নাকি কোনো পণ্যের ঘাটতিও থাকবে না। রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে কেউ যেন বাজার পরিস্থিতি অশান্তি সৃষ্টি না করতে পারে সেই পদেক্ষেপ নেওয়া হবে বলা হয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি হলে সংশ্লিষ্ট বাজার কমিটিকে নজরদারিতে রাখবে সরকার। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। তারপরও প্রতিনিয়ত প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।’
কাওছার বলেন, ‘বাজার সিন্ডিকেট রমজানের আগেই প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। রমজানে আর কী বাড়াবে। আমি মনে করি জনগণের ওপর অত্যাচার শুরু হয়েছে।’
গত শুক্রবার শরীয়তপুরের ডামুড্যায় এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী সিন্ডিকেটের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘দেশে রমজানে কে সামনে রেখে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এবছর রমজানে দেশে যথেষ্ট পরিমাণের মজুদ রয়েছে। দাম বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই। তার পরও যদি কোনো অসাধু ব্যবসায়ী রমজানে দাম বাড়ায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘রমজানে যারা দাম বাড়াবে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। মানুষের জন্য বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।’
(ঢাকাটাইমস