সিলেটে হাসিনা পতনের একদফার ডাক

0

সিলেটের বিশাল জনসমুদ্র থেকে হাসিনা পতনের এক দফার ডাক দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, সিলেট থেকেই সরকার পতনের একদফার আওয়াজ উঠেছে। শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ছাড়া নেতা-কর্মীরা ঘরে ফিরে যাবেন না বলেও বক্তারা হুশিয়ারি দিয়েছেন।

বিএনপি’র চলমান বিভাগীয় সমাবেশ কর্মসূচির অংশ হিসাবে শনিবার (১৯ নভেম্বর) সিলেটে বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশ উপলক্ষ্যে ৩ দিন আগে থেকেই সিলেটের সমাবেশস্থলে সমবেত হয়েছেন বিভাগের বিএনপি নেতাকর্মীরা। সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলা থেকে আলহাজ্ব জি কে গউছের নেতৃত্বে হাজারো নেতা-কর্মী বৃহস্পতিবার থেকেই সমাবেশস্থলে তাঁবু টাঙ্গিয়ে অবস্থান নিয়েছিলেন। এছাড়া অন্যান্য জেলা থেকেও নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন বৃহস্পতিবার থেকেই। তবে গউছের নেতৃত্বে হবিগঞ্জের তাঁবু এবং শো-ডাউন ছিল চোখে পড়ার মত।

কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়। বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হয়েছে সিলেট বিভাগীয় সমাবেশ। এই সমাবেশ থেকে বক্তারা শেখ হাসিনা পতনের জন্য একদফার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।

ঐতিহাসিক আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের সমাবেশ ছড়িয়ে পড়েছিল আশে-পাশের বিভিন্ন রাস্তায়। দলে দলে মানুষ রাস্তা-ঘাটে দাড়িয়ে সমাবেশের বক্তব্য শুনতে দেখা গেছে।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শেখ হাসিনার পতনের মাধ্যমে বিজয় ছাড়া নেতাকর্মীরা আর ঘরে ফিরে যাবে না। মানুষ জেগে উঠেছে। এখন থেকে একদফা আন্দোলনের মাধ্যমে বিজয় নিয়ে মানুষ ঘরে ফিরবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, শেখ হাসিনা কেবল সংবিধানের দোহাই দেন। এই সংবিধান তো তিনিই সংশোধন করিয়েছেন। তার আজ্ঞাবহ বিচারপতিরা সংশোধন করেছেন। এই সংবিধান আমরা মানি না। তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। যারা এর বিরোধিতা করবে তারা গণশত্রু হিসেবে চিহ্নিত হবে।

তিনি বলেন, জনগণ আজ জেগে ওঠেছে। তারা রাস্তায় নেমে এসেছে। বিজয় ছাড়া এই জনগণ ঘরে ফিরে যাবে না। আমরা ঘরে ফিরে যাবো না। মির্জা ফখরুল বলেন, একাত্তরে এদেশের মানুষ যুদ্ধ করেছিল অধিকারের জন্য, কথা বলার স্বাধীনতার জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য- বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের সব অধিকার হরণ করেছে। তাই তাদের জনতার আদালতে বিচার হবে।

তিনি বলেন, আমাদের মূল দাবি তিনটি- শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। এই দাবি পূরণে আমরা আন্দোলনে নেমেছি। এতে ভীত হয়ে সরকার মামলা মামলা খেলা শুরু করছে। কোনো কিছুই ঘটে নাই। তবু তারা নাশকতার কথা বলে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। আর যদি একটি মিথ্যে মামলা দেয়া হয়, তবে জনগণ তা প্রতিহত করবে।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, তারা আবার হুমকি দেয়, হেফাজতের মতো অবস্থা হবে। আমি বলতে চাই, হুমকি-ধমকিতে আর কাজ হবে না। জনগণ আজ জেগে ওঠেছে। একদফা আন্দোলনে সরকারের পতন ঘটবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, হযরত শাহজালালের আগমন ও বিজয় হয়েছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। শাহজালালের মাটি থেকেই অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ শুরু করতে হবে। সরকারের তন ঘটিয়ে ঘরে ফিরতে হবে। শেখ হাসিনার পতন ছাড়া ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না।

বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সরকারের তপনই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। এই সরকারের পতনের কোন বিকল্প নাই। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন- সুদের টাকা দেয়ার সামর্থ্য বর্তমান কোষাগারে নেই। আজ গণতন্ত্র গুম হয়ে গেছে ইলিয়াস আলীর মতো। আমরা গণতন্ত্রের সঙ্গে এম ইলিয়াস আলীকে খুঁজছি। আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশী তাকে দেবো- আমরা সেই আন্দোলনই করছি। তিনি বলেন- ১০ই ডিসেম্বর যাক তারপর খেলায় নামবো আমরা। এই সরকার জনগণের নয়। এ কারণে সরকারকে আর ক্ষমতায় রাখা যায় না। সাহস থাকলে পদত্যাগ করে নির্বাচন করুন। দেখবেন কী হয়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের খেলা হবে, বক্তব্যের জবাবে বিএনপি নেতারা বলেন, পুলিশ ছাড়া মাঠে আসুন। তখন লেখা অবশ্যই হবে। বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব কথায় কথায় বলেন, ‘খেলা হবে, খেলা হবে।’ আমরাও বলতে চাই, ‘খেলা হবে।’

ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, আপনারা পুলিশকে রেখে খেলতে আসেন। দুই ঘণ্টাও টিকতে পারবেন না। বিএনপি এখনও খেলা শুরু করেনি। বিএনপি খেলতে শুরু করলে দেশে মুজিব কোট পরা কোনো লোক থাকবে না।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম বলেন, এই সরকারের দিন শেষ। তারা এখন পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে, কিন্তু তাদের পালাতে দেয়া হবে না। এক দফার মাধ্যমে পতন ঘটিয়ে তাদের জনতার আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী বলেন, সিলেট থেকে সরকার পতন আন্দোলন শুরু হলো। ডিসেম্বরে বিজয়ের মাসেই আমরা সরকারের পতন চাই।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী শাম্মী আক্তার বলেন, ১০ ডিসেম্বর আমরা ঢাকা শহরে আসছি। কোনো ধানাইপানাই চলবে না। ক্ষমতা ছাড়েন। না হলে ক্ষমতা থেকে টেনে নামানো হবে।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ শুরু হয়। বেলা ১টার কিছুক্ষণ পর সমাবেশের মঞ্চে আসেন প্রধান অতিথি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।

উৎসঃ আমার দেশ

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More