স্বাধীনতার ৫১ বছর পরেও দেশ একাত্তর পূর্বের মতোই রয়ে গেছে: মুফতি রেজাউল

0

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, আজকে দেশের সম্পদ বানের ঢলের মতো বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে। বৈষম্যের বীভৎস দৃশ্যে মানবতা লজ্জা পায়। কেউ কেউ কোটি টাকার গাড়ি কেনে; আর কোটি মানুষ একমুঠো ভাতের জন্য টিসিবির ট্রাকের পেছনে দৌড়ায়। মানুষের ভোটাধিকার শুধু কেড়ে নেওয়া হয়েছে তাই নয়, বরং ভোটের অধিকার চাওয়াকেই অপরাধ মনে হচ্ছে। একের পর এক কালাকানুন করে গোটা দেশকেই জেলখানা বানানো হয়েছে। বিরোধী মতকে দমন করা, গুম করা, রাজনৈতিক সমাবেশে গুলি করে মানুষ মারা ক্ষমতাসীনদের নিত্য দিনের কাজে পরিণত হয়েছে।

স্বাধীনতার ৫১ বছর পরের বাংলাদেশও একাত্তর পূর্বের মতোই রয়ে গেছে। ২০২৩ এসেও দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যায়।

সোমবার (২রা জানুয়ারি) সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জাতীয় সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মুফতি রেজাউল বলেন, সার্বিক বিচারে দেশ যেন সেই ৭১ পূর্ব পরাধীনতার বৃত্তেই আটকে আছে। এতোগুলো বছর পরে এসে এসব দেখে খুব কষ্ট হয়। কোটি মানুষের রক্তকে এভাবে বিফলে যেতে দেখে আফসোস হয়। জীবনের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে এভাবে পরাধীনতার বেড়াজালে আবদ্ধ হতে দেখে আর সহ্য করা যায় না।

দলটির জাতীয় সম্মেলনে ১৯ দফা সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা উপস্থাপন করেন যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান। জাতীয় সম্মেলন পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও দাওয়াহ্ বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম ও মাওলানা মোহাম্মদ নেছার উদ্দিন। সম্মেলনে ১১ সদস্যের প্রেসিডিয়াম, ৭৩ সদস্যের নির্বাহী পরিষদ, ২২ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ ঘোষণা করা হয়। মুফতি রেজাউল করীম আমির ও মাওলানা ইউনুছ আহমাদ মহাসচিব পুনর্নির্বাচিত হন।

সংবিধান সংশোধন-নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাব:

বাংলাদেশকে কল্যাণরাষ্ট্রে রূপান্তর করতে ১৯ দফা সংস্কার প্রস্তাব ঘোষণা করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

ক্ষমতার পালাবদলের সময় দেশে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয় উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনে করে, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন বর্তমান বাস্তবতায় সম্ভব নয়। সেজন্য ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের প্রস্তাব করছে।

আরেক প্রস্তাবে তিনি বলেন, জনমতের ভিত্তিতে শাসনতন্ত্রের সংস্কার, বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র তথা সংবিধানকে যথেচ্ছা সংশোধন করে জন-অধিকার খর্ব করার ঢাল বানানো হয়েছে। বর্তমান সংবিধান নিয়ে দেশের কোনো পক্ষই সন্তুষ্ট নয়। বিরোধীরা এটাকে সংস্কার করতে চাইছে।

তিনি আরও বলেন, সরকার পক্ষও বাহাত্তরের সংবিধানে ফেরত যাওয়ার কথা বলে বর্তমান সংবিধানের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে। ঐতিহাসিক বাস্তবতা ও চলমান গণ-অসন্তোষ বিবেচনায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এ ভূখণ্ডের মানুষের হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য বোধ, বিশ্বাস ও মনস্তত্ত্ব আমলে নিয়ে এবং গণভোটের মাধ্যমে জনগণের সমর্থনের ভিত্তিতে সংবিধানের সামগ্রিক সংশোধনের প্রস্তাব করছে।

দলটির অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে প্রশাসনকে দক্ষতা ও সততার ভিত্তিতে ‘জনতার সেবক দর্শন’-এ খোলাফায়ে রাশেদার আদর্শে গড়ে তোলা। সেপারেশন অব পাওয়ার নীতির প্রয়োগ করে শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন ও ন্যায়পাল বিভাগকে পরস্পর থেকে স্বাধীন ও স্বনির্ভর করে গড়ে তোলা হবে।

অর্থ খাত, অর্থনীতি, শিল্পায়ন, কৃষি ও জ্বালানি খাতে বিদ্যমান সব দুর্নীতি-অনিয়ম দূর করতে, খাতগুলোকে শক্তিশালী ও বহুমাত্রিক করতে এবং স্বনির্ভর এনার্জি সেক্টর নির্মাণে জাতীয় কাউন্সিল গঠন করা, উৎপাদক কৃষক ও ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় বাজার ব্যবস্থাপনা তথা পণ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণসহ পুরো ব্যবস্থাকে একটি সমন্বিত ব্যবস্থার অধীনে এনে নিত্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল করা, আত্ম-মর্যাদাসম্পন্ন ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি গড়ে তোলা হবে।

জাতীয় সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল অব. সৈয়দ মোহাম্মদ সৈয়দ ইবরাহীম বীর প্রতীক, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল আঊয়াল পীর সাহেব খুলনা, আল্লামা আব্দুল হক আজাদ, মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফুল আলী আকন ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।

উৎসঃ   আমার দেশ
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More