হোটেলে রুম না পেয়ে বিপাকে হাজারো পর্যটক

0

টানা তিনদের ছুটিতে পর্যটকের ঢল নেমেছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। শুক্রবার সকাল ও বিকালে সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়- সৈকতের চার কিলোমিটার জুড়ে যেদিকে চোখ যায় মানুষ আর মানুষ। ইতোমধ্যে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারের ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও কটেজ অগ্রিম শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছে, শুক্রবার কক্সবাজারে ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ পর্যটক অবস্থান করছেন। এতে করে হোটেল বুকিং না করে শুক্রবার কক্সবাজারে এসে বিপাকে পড়েছেন হাজারো পর্যটক। হোটেল না পাওয়া পর্যটকদের ফুটপাত, সৈকতের বালিয়াড়িসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাগ হাতে এদিক ওইদিক ছুটতে দেখা গেছে।

তবে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন বলছে, হোটেল না পাওয়া পর্যটকরদের রাত যাপনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।

সমুদ্রসৈকত ছাড়াও সেন্টমার্টিন, মেরিন ড্রাইভ ধরে ইনানি, হিমছড়ি ও দরিয়ানগর সৈকতকে ছুটে যাচ্ছেন পর্যটকরা। এছাড়া রামু বৌদ্ধ বিহার, চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক ও নিভৃতে নিসর্গ পার্ক এবং শৈলদ্বীপ মহেশখালীতেও পর্যটকদের সমাগম ঘটেছে।

এদিকে বিপুল পরিমাণ পর্যটকদের আগমনে তাদের নিরাপত্তায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা জানিয়েছে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ।

পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, টানা তিন দিনের ছুটি ও শিশুদের পরীক্ষা শেষ হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং সামনে নতুন বছরকে (হ্যাপি নিউইয়ার) সামনে রেখে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারের ৫ শতাধিক আবাসিক হোটেল-মোটেল ও কটেজ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। হোটেলের কোনো কক্ষ খালি না থাকায় শুক্রবারও অনেক পর্যটক রাস্তায় ফুটপাতে বসে সময় কাটাচ্ছে।

সিলেট থেকে কক্সবাজারে আসা মো. আবুল্লাহ হাসনা হেনা দম্পতি বলেন, হোটেল বুকিং না করে শুক্রবার সকালে কক্সবাজারে ভ্রমণে এসে বিপদে পড়েছেন তারা। কক্সবাজার শহরে কোনো ধরনের হোটেলের রুম না পেয়ে মেরিন ড্রাইভের হিমছড়ি ও ইনানিতে যান। সেখানেও হোটেল না পাওয়ায় শুক্রবার রাতে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান তারা।

হোটেল বুকিং না করে কক্সবাজারে এসে বিপাকে পড়েছেন ঢাকা মিরপুর থেকে আসা গার্মেন্টস ব্যবসায়ী নজিবুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, পরিবারে ১৪ জন সদস্যকে নিয়ে আমি শুক্রবার ভোরে কক্সাবাজারে এসে পৌঁছেছি। শুক্রবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত শত চেষ্টা করেও হোটেল পাইনি। তিনগুণ বেশি দামেও রুম ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো লাভ হয়নি।

তিনি বলেন, বিষয়টি জেলা প্রশাসনের কাছে জানিয়েছি এখন প্রশাসন যদি ব্যবস্থা করে দেন তাহলে কক্সবাজারে থাকবো, না হয় রাতেই ঢাকায় ফিরে যাব।

তবে হোটেল বুকিং নিয়ে যারা এসেছেন, তাদের ঝামেলা না থাকায় সৈকত ও কক্সবাজারে দর্শনীয় বিভিন্ন স্থানে আনন্দ করে সময় কাটাচ্ছেন। তবে অনেক পর্যটকই হোটেলের ভাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে  তিন থেকে চারগুণ পর্যন্ত বেশি নেওয়ার অভিযোগও করেছেন।

বৃহত্তর বিচ ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান জানান, বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমনের কারণে হোটেল সব বুকিং হয়ে গেছে। এর বাইরে অতিরিক্ত কিছু পর্যটক এসেছেন। যাদের কক্ষ পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। একই সঙ্গে কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী হোটেল কক্ষের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কৌশলে নেমেছে। প্রতিবারই পর্যটক আসলে এসব ব্যবসায়ী এমন কৌশল নেন। যার কারণে কক্সবাজারে সুনাম নষ্ট হয়।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার যুগান্তরকে বলেন, কক্সবাজারের বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব ধরনের আবাসিক হোটেল-মোটেল ও কটেজগুলো অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। এ কারণে শুক্রবার কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের অনেকে হোটেল না পেয়ে ব্যাগ হাতে এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে। কক্সবাজারে শহরে ২ লক্ষাধিক এবং টেকনাফ-সেন্টমার্টিন মহেশখালীসহ সব মিলিয়ে জেলায় বর্তমান চার লক্ষাধিক পর্যটক অবস্থান করছে বলে জানান তিনি।

এদিকে ২৩ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারে ১০ লাখ পর্যটকের আগমন হলে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা হিসেবে আবাসিক হোটেল, খাবার রেস্তোরা,শুটকি খ্যাত, ঝিনুক শামুক ও পরিবহণসহ সংশ্লিষ্ট সেক্টরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যের আশা প্রকাশ করেছেন।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার শেহরিন আলম যুগান্তরকে বলেন, শুক্রবার কক্সবাজারে ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ পর্যটক অবস্থান করছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যটকের ঢল থাকবে।

তিনি বলেন, বিপুল পরিমাণ পর্যটক আগমন মাথায় রেখে সৈকতের সুগন্ধা, লাবনী ও কলাতলীসহ ৬ পয়েন্টে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নজরদারির জন্য সৈকতে একাধিক ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। মোবাইল টিমের পাশাপাশি সাদা পোশাকে ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যরা মাঠে রয়েছে। পর্যটকদের হয়রানি কোনোভাবে বরদাস্ত করা হবে না।

এখনো পর্যন্ত কোনো পর্যটক অভিযোগ করেনি উল্লেখ করে ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার শেহরিন আলম বলেন, পর্যটক হয়রানির অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কক্সবাজারের নবাগত জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুহম্মদ শাহীন ইমরান যুগান্তরকে বলেন, কক্সবাজারের বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। এসব পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে প্রশাসন।

হোটেল না পাওয়া পর্যটকদের বিষয় তিনি বলেন, যেসব পর্যটকরা হোটেলের রুম পাননি তাদের বিশেষ ব্যবস্থায় রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। আশা করি আলোচনা করে একটা ব্যবস্থা করতে পারব।

jugantor

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More