নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর বাংলাদেশের প্রাচীন শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। পড়াশুনা,ব্যবসা বানিজ্যের জন্য এই শহরটি অনেক আগে থেকেই প্রসিদ্ধ। এছাড়া বৃহৎ রেলওয়ে কারখানার এবং বিমানবন্দরের জন্যও শহরটির ব্যাপক খ্যাতি রয়েছে।
এই শহরের অতি প্রাচীন এবং দুর্লভ একটি স্হাপত্য হচ্ছে সৈয়দপুরের চীনা বা চিনি মসজিদ। চিনি মসজিদের রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস।
১৮৬৩ সালে হাজী বাকের আলী ও হাজী মুকু ইসলামবাগ ছন ও বাঁশ দিয়ে একটি মসজিদ নির্মান করেন। পরবর্তীকালে ১৯২০ সালে ইমাম হাজি হাফিজ আবদুল করিমের উদ্যোগে মসজিদের ৩৯ বাই ৪০ ফুট আয়তনের পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়। এর নকশা তৈরি করেন হাজি করিম নিজেই। ১৯৬৫ সালে এর দ্বিতীয় অংশটিরও নির্মাণ শেষ হয়। এ সময় কলকাতা থেকে শংকর মর্মর পাথর এনে মসজিদে লাগানো হয়।
মসজিদের সম্পূর্ণ অংশ চিনামাটির টুকরা দিয়ে আবৃত করতে বগুড়ার একটি গ্লাস ফ্যাক্টরি মসজিদে ২৫ মেট্রিক টন চিনামাটির পাথর দান করেন। এ পাথরেই মোড়ানো হয় মসজিদের ৩২টি মিনারসহ ৩টি বড় গম্বুজ। নির্মাণ করা হয় উত্তর ও দক্ষিণে দুটি ফটক। মসজিদের গোটা বহিরাঙ্গন ঢেলে সাজানো হয় রঙিন চকচকে পাথরে। মসজিদের বারান্দা বাঁধানো হয় সাদা মোজাইকে। দেয়ালজুড়ে চিনামাটির পাথরেই আঁকা হয় নানা সুদৃশ্য নকশা। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে মসজিদটি আরও বর্ধিত করা হয়েছে। জনশ্রুতি আছে, মসজিদের পুরো অংশ চিনাপাথরে তৈরি বলেই নাম ‘চিনি মসজিদ’। মসজিদকে ঘিরে আছে নানা কাহিনি। বিভিন্ন কারণে এটি আকৃষ্ট করেছে শিল্প পুজারীদের।
মসজিদের অনন্য কারুকার্যে সত্যিই মুগ্ধ হতে হয়। ফুলদানি, ফুলের ঝাড়, গোলাপফুল, একটি বৃন্তে একটি ফুল, চাঁদ তারা মসজিদের গাত্রে খঁচিত রয়েছে। এছাড়াও মুগ্ধ হতে হয় তত্কালিন আরবীয় ক্যালিপ্ট্রা দেখে। এ মসজিদ তৈরিতে প্রচুর মার্বেল পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদে ২৪৩টি শংকর মর্মর পাথর রয়েছে। মসজিদে একসঙ্গে প্রায় পাঁচ শতাধিক লোক নামাজ আদায় করতে পারেন।
এই মসজিদে রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণে দু’টি ফটক। পুরো মসজিদটি রঙিন চকচকে পাথরে মোড়ানো। আর বারান্দা বাঁধানো সাদা মোজাইকে।
মসজিদটি নিছক উপসনালয়ই নয়, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছেও সমান আকর্ষণীয়। ঐতিহাসিক মসজিদটির দ্বিতীয় তলায় পর্যটকদের থাকার বিশেষ ব্যবস্থা আছে। ফলে প্রতিবছরই দেশ-বিদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক, প্রথিতযশা ব্যক্তি পরিদর্শন করতে আসেন এ মসজিদ। ফলে ‘চিনি মসজিদ’ এ অঞ্চলের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করতে রেখেছে অনন্য ভূমকা।
যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনে সরাসরি সৈয়দপুরে চলে আসতে পারবেন। ট্রেনের ভাড়াও খুবই অল্প। এছাড়াও গাবতলী, কলেজগেট, মহাখালি থেকে সৈয়দপুর সরাসরি অনেকগুলো বাস সার্ভিস চালু আছে। এছাড়াও বিমানযোগে সরাসরি সৈয়দপুরে চলে আসতে পারেন। সৈয়দপুরে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ও বেঙ্গল এয়ারওয়েজ এর বেসরকারি বিমান সপ্তাহে দু’দিন চালু আছে।
লিখেছেনঃ মাজেদুল হক তানভীর