সামনে অনেক পথই খোলা ছিল অ্যালেক্স হেলসের। দাদা ডেনিস ছিলেন টেনিস খেলোয়াড়। উইম্বলডনে একবার রড লেভারকে তো তিনি পঞ্চম সেট পর্যন্ত নিয়ে যেতে বাধ্য করেছিলেন। দাদার কাছে সেসব গল্প শুনতে শুনতে টেনিসের প্রতি ভালোবাসা জম্মানো তো ছিল স্বাভাবিক। সে দিকে যাননি হেলস। বাবা গ্যারি ব্রোক ছিলেন ক্রিকেটার। মারদাঙ্গা ব্যাটিংটা দারুণ পছন্দ ছিল ব্রোকের। বাবার পথ ধরে হেলসের ক্রিকেটে হাতেখড়ি। ক্রিকেটে মনে টানলেও ব্যাটিংটা কেন জানি পছন্দ হতো না তাঁর। বরং পেস বোলিং পছন্দ ছিল হেলসের। গড়নটা ছিল তেমন। ছোটবেলা থেকে দ্রুতগতিতে বেড়ে ওঠা এবং ছেলের পছন্দের প্রতি সম্মান জানাতেই বাবা নিয়ে গিয়েছিলেন ট্রায়ালে। কিন্তু হলো না। প্রচণ্ড গতিতে বল করলেন ১৪ বছরের হেলস। গতি থাকলে কী হবে, ভালো বোলার হওয়ার জন্য লাইন ও লেন্থ ঠিক থাকা চাই। কিন্তু এটি ছিল না হেলসের। তাই তো ট্রায়াল থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল আর যাই হোক হেলসকে দিয়ে ফাস্ট বোলিং হবে না।
তাই বলে হাল ছাড়ার পাত্র ছিলেন না হেলস। টেনিস যখন পছন্দ নয়, তখন তো ক্রিকেটার হতেই হবে। পেস বোলার হওয়া যাবে না, তাতে কী ব্যাটসম্যান হতে তো বাধা নেই। কয়েক দিন পর ঠিকই বুঝিয়ে দিলেন শরীরের শক্তিটা ব্যাট হাতেও কাজে লাগানো যায়। লর্ডসের নার্সারি মাঠে ব্যাট হাতে নেমে অসাধারণ এক কীর্তি গড়ে ফেললেন। এক ওভারে অবিশ্বাস্যভাবে ৫৫ রান জড়ো করলেন স্কোরবোর্ডে। মোটেও ভুল না। এক ওভারে ৫৫ রান। এতে অবশ্য বোলারের অবদান কম ছিল না। তিনটি নো বল ছিল। এই ওভারের মুখোমুখি হওয়া নয় বলের আটটিতে মেরেছিলেন ওভার বাউন্ডারি, একটি ছিল বাউন্ডারি। আট ওভার বাউন্ডারিতে ৪৮, এক বাউন্ডারিতে পাওয়া চার রানে মোট ৫২। সে সঙ্গে তিন নো বলের তিন রান মোট ৫৫। তাঁর এই ইনিংসের ওপর ভর করে জিতেছিল দল। অথচ হেলস এই ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন বোলার হিসেবে। সে যাই হোক, এরপর আর হেলসকে ভাবতে হয়নি। বোলার থেকে ব্যাটসম্যান হওয়া হেলসকে আর পেছনে ফিরে তাকাতেও হয়নি। এই ব্যাটিং তাণ্ডবই তাঁকে মাইনর কাউন্টিতে খেলার সুযোগ এনে দেয়। বাকিংহামশায়ারের হয়ে এক মৌসুম খেলার পর নটিংহামশায়ারের ট্রায়ালে ডাক পান তিনি। ১৮ বছরের হেলস কর্মকর্তাদের নজর কাড়তে মোটেও দেরি করেননি। নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই বোলারদের দারুণভাবে শাসন করে নামের পাশে ডাবল সেঞ্চুরি লিখিয়ে নেন। এমন প্রতিভাকে হাতছাড়া করতে চায়নি নটিংহামশায়ার, তাইতো শুরুতেই হেলসের সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি করে নেয় ক্লাবটি। নটিংহামশায়ারের হয়ে সময়টা দারুণ কেটেছে। ব্যাট হাতে তিন ফরম্যাটেই সমান আলো ছড়ানোয় নির্বাচকদের দৃষ্টি কাড়েন তিনি। আর তাই খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি তাঁকে, চমৎকার ব্যাটিংয়ের পুরস্কার হিসেবে ডাক পান জাতীয় দলে। ২০১১ সালে আগস্টে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে অভিষেক হওয়ার প্রায় তিন বছর পর দেখা পেলেন সেঞ্চুরির। এবারের বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতে সুপার টেন পর্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ১১৬ রান করেন তিনি। ৬৪ বলে ১১ বাউন্ডারি ও ছয় ওভার বাউন্ডারিতে এই রান করে দলকে জয় এনে দিয়েছিলেন। তাঁর এই সেঞ্চুরিকে অসাধারণ বলতেই হয়। ১৯০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমেই হারিয়েছিলেন দুই সঙ্গীকে। স্কোরবোর্ডে কোনো রান যোগ না হতেই ফিরে গিয়েছিলেন তাঁরা। সেই বিপর্যস্ত অবস্থা থেকেই এমন ঝকমকে ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন তিনি। শেষ দিকে বোলারদের ওপর রীতিমত তাণ্ডব চালিয়েছেন। ১৮ বলে যখন ৩৪ রান দরকার তখন ৪ বল বাকি থাকতেই দলকে পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে। নিজের তো বটেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের কোনো ইংলিশ ক্রিকেটারের এটা প্রথম সেঞ্চুরি। হঠাৎ করেই যে সেঞ্চুরি পেয়েছেন তা কিন্তু নয়, বরং বলা যায় দুই বছর আগের অপূর্ণতাকে পূর্ণতা দিলেন। ২০১২ সালে নটিংহামশায়ারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৯৯ রানে ফিরে যেতে হয়েছিল তাঁকে। রবি রামপলের বলে বোল্ড হয়েছিলেন। গত বছরও সম্ভাবনা জাগিয়ে ব্যর্থতায় পুড়তে হয়েছিল তাঁকে। চেস্টার লি স্ট্রিটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৯০ রানে আউট হয়েছিলেন। গত বছর আরো একবার ব্যর্থতায় পুড়তে হয়েছিলে তাঁকে। বছরের শুরুতে ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেননি প্রতিপক্ষের সংগ্রহটা আরো বেশি না হওয়ায়। ৮০ রানে অপরাজিত থেকে ক্রিজ ছেড়েছিলেন এ ইনিংসে। এরপর হতাশায় পুড়তে হয়নি, অপরাজিত থাকলেও সেঞ্চুরি এবং ম্যাচ জিতিয়েই ফিরেছেন।
হেলসের সেঞ্চুরি ছিল টি-টোয়েন্টিতে একাদশ। এর দুই দিন পর দ্বাদশ সেঞ্চুরিটি করেন পাকিস্তানের আহমেদ শেহজাদ। বাংলাদেশের বিপক্ষে এই পাকিস্তানের তিন অঙ্কের রানটি ছিল অপরাজিত ১১১। নিজের তো বটেই টি-টোয়েন্টিতে কোনো পাকিস্তানির এটা প্রথম সেঞ্চুরি। ৬২ বলে ১০ বাউন্ডারি এবং ৫ ওভার বাউন্ডারিতে এই রান করেন শেহজাদ। টি-টোয়েন্টিতে কোনো পাকিস্তানির সবচেয়ে বেশি রানের ইনিংসটিও ছিল শেহজাদের। গত বছর হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৯৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ফিরতে হয়েছিল তাঁকে। ইনিংসের শেষ বলে বাউন্ডারি মারতে পারলে তখনই সেঞ্চুরির স্বাদ পেতেন তিনি; কিন্তু ওভারের প্রথম বলে ওভার বাউন্ডারি মারলেও এই বলে এক রানের বেশি নিতে পারেননি।