শুধু শহর নয় প্রত্যন্ত গ্রামেও অবাধে চলছে মাদক ব্যবসা। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে সব ধরনের মাদক। মাদকদ্রব্যের ব্যাবহার বৃদ্ধির সঙ্গে বেড়েছে প্রসারও। দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবাধে আসছে মাদকদ্রব্য।
বাংলাদেশের মাদক পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে প্রায় ৬৮ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত। এদের মধ্যে ৮৪ ভাগ পুরুষ, ১৬ ভাগ নারী। সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি থেকে শুরু করে নারী ও শিশু-কিশোররাও মাদক সেবন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশজুড়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ নানাভাবে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, দেশে মাকাসক্তের সংখ্যা ৪৭ লাখ। অধিদফতর আসক্তদের শতকরা ৯০ ভাগকে কিশোর-তরুণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আসক্তদের শতকরা ৪৫ ভাগ বেকার এবং ৬৫ ভাগ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট। আর উচ্চশিক্ষিতের সংখ্যা ১৫ শতাংশ।
ফ্যামিলি হেলথ ইন্টারন্যাশনালের তথ্য বলছে, শুধু ভারত থেকেই প্রতিমাসে আসে সাড়ে ৩ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসে ফেনসিডিল। অন্য একটি সূত্র জানায়, দেশের প্রায় ৫১২টি পয়েন্টে প্রতিদিন হেরোইন, আফিম, প্যাথেডিন, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক বিক্রি হয়। এছাড়া ভারত থেকে প্রতিদিন বাংলাদেশে আসছে ১০ লাখ বোতল ফেনসিডিলসহ অন্য মাদকদ্রব্য। সংঘবদ্ধ চোরাচালানি চক্র বেপরোয়াভাবে ফেনসিডিল আনছে। পরে সেগুলো ছড়িয়ে পড়ছে ঢাকাসহ সারা দেশে।
মাদক পাচারের অভিনব উপায় সীমান্তরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কখনও মশলা, শস্যবীজ, চায়ের প্যাকেট আবার কখনও বালিশ, তোষক কিংবা বাঁশের মধ্যে সীমান্ত পার হয়ে আসছে ফেনসিডিলসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য। সিএনজি, অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেটকার, দুধের গাড়ি, কাভার্ডভ্যান এমনকি ট্রাকেও ফেনসিডিল পাচার করছে তারা। পাচার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নারী, শিশু ও স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের।
দরিদ্রতার সুযোগে মোটা অংকের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফেনসিডিল, গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবা বেঁধে পাচার করা হচ্ছে। শস্যবীজের প্যাকেট, কুমড়া, তরমুজের ভেতরে মাদক পরিবহনের পরে এবার কৌশল পাল্টেছে মাদক ব্যবসায়ীরা। তারা মুরগির খাবারের পাত্রের ভেতরে চালান নিয়ে আসছে বাংলাদেশে। সরকারি গাড়ির স্টিকার ব্যবহার করেও মাদক পরিবহনের কাজ করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। সীমান্তের কাছে বসবাসকারীরা কোনোভাবেই মুখ খুলতে চায় না মাদক চোরাচালানের বিষয়ে। তবে মাদক পাচারকারীরা খুব সুকৌশলে কাজটি করলেও মাঝে মধ্যেই মাদকের অনেক বড় বড় চালান ধরা পড়ে আইন-শৃংখলা বাহিনীর হাতে।
ফেনসিডিলসহ অন্যান্য মাদক ছড়িয়ে পড়া রুট
দিনাজপুর রুট দিনাজপুরের ১২০ কিলোমিটার সীমান্তে বছরে ১ কোটি ৮২ লাখ টাকার মাদকদ্রব্য পাচার হচ্ছে। ফেনসিডিল দেশে ঢোকার পর পাঁচবিবি, বিরামপুর, পার্বতীপুর, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা রুটসহ বিভিন্ন পয়েন্টে চলে যায়।
জয়পুরহাট রুট জয়পুরহাট-হিলি সীমান্তে সংঘবদ্ধ চোরাচালানি চক্রের অপতৎপরতা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি নিষিদ্ধ ভারতীয় বিভিন্ন পণ্যের সঙ্গে এখন আসছে ফেনসিডিল, মদ, গাঁজা, বিয়ার, হেরোইন, ইয়াবা, নেশায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ইনজেকশন ও ট্যাবলেটসহ নানা মাদকদ্রব্য।
রাজশাহী রুট রাজশাহীর চারঘাটের ইউসুফপুর, টাঙন, বাঘার মীরগঞ্জ, আলাইপুর, উদয়নগর, রাজশাহী নগরীর বুলনপুর, তালাইমারি, কেশবপুর, গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ, কোলাডাঙা ও চরখিদিরপুর সীমান্তঘাট ছাড়াও পবার হরিপুর-সোনাইকান্দি সীমান্ত দিয়ে নৌপথে দিনে-রাতে অবাধে আসছে হাজার হাজার বোতল ফেনসিডিল।
যশোর রুট পার্শ্ববর্তী ভারত সীমান্তে গড়ে ওঠা প্রায় ৩৬টি কারখানায় চিনি, নেশার ট্যাবলেট, স্পিরিট ও কাশির সিরাপ মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ফেনসিডিল। ভারতের তৈরিকৃত এই মাদক দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তের স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে ফেনসিডিলের সদর দরজা যশোর জেলায় প্রথমে প্রবেশ করে। এরপর সেগুলো বিভিন্ন কৌশলে সড়কপথে রাজধানী ঢাকা ও বরিশালসহ বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যাচ্ছে।
কুমিল্লা রুট : বেশ কটি সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে ভারত থেকে সহজেই কুমিল্লায় মাদকদ্রব্য আসছে। ১৬টি উপজেলা নিয়ে গঠিত জেলার পাঁচটি উপজেলার ৭৪ কিলোমিটার জুড়ে সীমান্ত।ঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুট এখানে প্রচুর পরিমাণে আসছে নিষিদ্ধ ভারতীয় ফেনসিডিল। জেলার কসবা, আখাউড়া ও সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ সীমান্ত এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে মাদকের নিরাপদ সড়ক। অভিযোগ আছে, লাইনম্যানদের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট টোকেনের বিনিময়ে সীমান্ত এলাকায় নিয়ে আসা হচ্ছে ফেনসিডিলের বস্তা। জেলার ৮০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রবেশ করা ফেনসিডিলগুলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে রেলপথ, সড়কপথ ও জলপথে রাজধানী ঢাকায় পাচার করা হচ্ছে।
নওগাঁ রুট জেলার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে আসছে ভারতীয় ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মাদক। জেলার সাপাহার সীমান্তের কাঁড়িয়াপাড়া, আদাতলা, বামনপাড়া, সোনাডাঙ্গা, পোরশা, দুয়ারপাল, পত্নীতলার হাটশাওলী, রাধানগর, শীলমাঠ ও অন্যান্য স্থান থেকে আনা হচ্ছে ফেনসিডিল।
ফেনী রুট ফেনীর নদীপথে অবাধে প্রতিদিন ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে বা প্রশাসনের যোগসাজশে মাদক আসছে। সিন্ডিকেট ব্যবসার মাধ্যমে আসছে হাজার হাজার বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল, মদ, হেরোইন, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট ইয়াবা, সিনেগ্রা, ইডেগ্রা ও ভারতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ওষুধ। জেলার প্রায় ১৫০টি স্পটে চলছে হাতবদল।
কক্সবাজার রুট কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার সীমান্ত দিয়ে ফেনসিডিলের চেয়ে বেশি পরিমাণ ইয়াবা আসে। দেশের ইয়াবা নেটওয়ার্কের উৎপত্তি এখান থেকেই। মিয়ানমার থেকে মাদক চোরাচালান রুটে সক্রিয় হয়ে এখানে অনেকেই আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে। তারপরও থামেনি মাদক চোরাচালানে অপতৎপরতা।
ঝিনাইদহ রুট এখানে প্রতিদিন আনুমানিক দেড় কোটি টাকার ফেনসিডিল কেনাবেচা হয়। নতুন নতুন এজেন্ট নিয়োগ হয় নিরাপদে বর্ডার ক্রস করার জন্য।
ঠাকুরগাঁও রুট জেলার হরিপুর উপজেলার গেদুরা ও ভাতুরিয়া, রানীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ও জগদ্দল এবং বালিয়াডাঙ্গি উপজেলার রতনাই, বেউরঝারি, মণ্ডুমালা, ধনতলাসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলার বোধগাঁও, বর্ষালুপাড়া দিয়ে ক্ষতিকারক মাদকদ্রব্য ভারত থেকে দেদার আসছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুট অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চোখের সামনে
জেলার শতাধিক পয়েন্টে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে কয়েক হাজার বোতল ফেনসিডিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আলাতুলী ইউনিয়নের পোলাডাঙ্গা, ডিএমসি, শাহজাহানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর, বাগডাঙ্গা ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা ও বাখেরআলী সীমান্ত এলাকা হেরোইন চোরাচালানিদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।
ভারত সীমান্তে ২৪ কারখানা বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ২৪টি ফেনসিডিল কারখানা রয়েছে। বিভিন্ন সময় দুদেশের পররাষ্ট্র সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব ও বিজিবি-বিএসএফের শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে ফেনসিডিল কারখানার তালিকা তুলে দেয়া হয়। তারপরও বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন ভারতের ভূখণ্ডে ফেনসিডিল উৎপাদন এবং চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে পাচার বন্ধ হয়নি।
যেসব এলাকায় ফেনসিডিল কারখানা রয়েছে সেগুলো হচ্ছে- মিজোরাম ছোট হরিণা বর্ডার এরিয়ার বাইনাচরি, বাস্টি, দেমাগ্রি লংলাই এলাকায়; মেঘালয়ের জনতাপুর বর্ডার এরিয়ার এমদো, দেওকি এলাকায়; খয়াই, চুনারুঘাট বর্ডার এরিয়ার ওয়েস্ট ত্রিপুরা এলাকায় এবং মানতলা বর্ডার এরিয়ার মোহনপুর, সেদাই ওয়েস্ট ত্রিপুরা এলাকায়।
বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ২ কিলোমিটারের মধ্যে আখাউড়া সীমান্ত এলাকার আগরতলার বাগদিরমাথ এলাকায় ১ টি ফেনসিডিল কারখানা রয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ৩ কিলোমিটারের মধ্যে আখাউড়া বর্ডার এরিয়ার ভারতের বামুতিয়া, নসিংঘর, আগরতলা এলাকাতেও রয়েছে ফেনসিডিল কারখানা।
বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ৫ কিলোমিটারের মধ্যে ভোমরা বর্ডার এরিয়ার বসিরহাট, নর্থ ২৪ পরগনা এলাকা এবং বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ৬ কিলোমিটারের মধ্যে ফেনসিডিল কারখানা রয়েছে।
বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ৭ কিলোমিটারের মধ্যে ভারতে একটি ফেনসিডিল কারখানা রয়েছে। সেটি হচ্ছে- বাইকারি এবং ঘনা বর্ডার এরিয়ার পাথরগঞ্জ শতরূপনগর, নর্থ ২৪ পরগনা এলাকায়।
মাদক সংক্রান্ত মামলা ও আসামি: মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশে দিন দিন মাদক সংক্রান্ত মামলা ও আসামি গ্রেফতারের সংখ্যা বাড়ছে। ১৯৯১ সালে মাদক সংক্রান্ত মামলা হয়েছে ২ হাজার ১০০টি। ২০১১ সালে ৭ হাজার ৯১৬টি। আবার ১৯৯১ সালে মাদক সংক্রান্ত ঘটনায় আসামি গ্রেফতার হয়েছিল ১ হাজার ৮৪২ জন। ২০১১ সালে আসামি গ্রেফতার হয়েছে ৮ হাজার ৪৪৬ জন। বর্তমানে গ্রেফতার ও মামলার সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণ।
মাদক মামলার হালচাল বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে প্রতিবছর এক-চতুর্থাংশ মাদক মামলার বিচার কার্যক্রম অনিষ্পন্ন থেকে যায়। ২০০৯ সালে মাদক সংক্রান্ত ঘটনায় বিচার নিষ্পন্ন মামলায় ৪৪ শতাংশ আসামি খালাস পেয়েছে। সাজা হয়েছে ৫৬ শতাংশ মামলায়। ২০১০ সালে খালাস পেয়েছে ৩৯ শতাংশ আসামি, সাজা হয়েছে ৬১ শতাংশের। ২০১১ সালে সাজা হয়েছে ৩৮ শতাংশ, খালাস পেয়েছে ৬২ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম চারমাসে খালাস পেয়েছে ৪৮ শতাংশ, সাজা হয়েছে ৫২ শতাংশ আসামির। বর্তমানে ৪৫ হাজার ৫৫৯টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
সাজা না হওয়ার কারণ জানা গেছে, মাদক মামলায় আসামিদের সাজা না হওয়ার অন্যতম কারণ মামলা চলাকালে সাক্ষী হাজির করতে ব্যর্থ হওয়া। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো ইউনিট মাদক উদ্ধারের পর ঘটনাস্থল ও আশপাশের লোকজনকে মামলার সাক্ষী করে। এরপর মামলা পরিচালনার সময় অনেক ক্ষেত্রে সাক্ষীকে খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার কিছু ক্ষেত্রে মাদক ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় সাক্ষীরা ভয় পান। কোনো কোনো ঘটনায় সাক্ষীকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা হয়। এসব বিষয় আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অজানা নয়। তাই সাক্ষীদের হাজির করা সম্ভব হয় না।
চিকিৎসকের বক্তব্য মাদকের হিংস্র থাবায় দেশের যুবসমাজ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মাদকাসক্তরা মাদক ক্রয়ের অর্থ সংগ্রহ করতে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও খুনসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। অভিজাত পরিবারের ছেলেমেয়েরা ফেনসিডিল কেনার টাকা সংগ্রহে পারিবারিকভাবে বাবা-মার ওপর চাপ প্রয়োগসহ বিভিন্ন অসামাজিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে। এর ফলে বহু পরিবারের স্বপ্ন ধ্বংসের পথে।
শেরেবাংলা নগরের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম জানান, ফেনসিডিল বা ইয়াবায় উত্তেজক এম সিটামিন এবং ক্যাফেইন রয়েছে। তাই ইয়াবা আসক্তরা শেষ পর্যন্ত মানসিক বিকারগ্রস্ত হতে পারেন। মাদক সেবনের ফলে সাধারণত যৌনক্ষমতা হ্রাস, মস্তিষ্ক ও কিডনির ক্ষতি এবং স্বাভাবিক কর্মক্ষমতাও নষ্ট হয়ে যায়।
তিনি বলেন, মাদকের সহজলভ্যতা রোধ করতে হবে। সামাজিক-পারিবারিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি মাদক চোরাচালান বন্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া সময়ের দাবি।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য : বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে সীমান্তে সব সময় কড়া পাহারা থাকে। তবে মাদকের বিরুদ্ধে প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। বিজিবি সীমান্তের বাসিন্দাদের নিয়ে সব সময় মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। এই ব্যবসায় যারা দেশের সীমান্ত কাজে লাগায় তারা অবশ্যই বিজিবির হাতে ধরা পড়ে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষায় সচেষ্ট।
পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, মাদক একটি সামাজিক সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে শুধু পুলিশ নয়, সমাজের সকল মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে একটি বিশেষ সংস্থাও রয়েছে। এছাড়া বিজিবিও কাজ করছে।
মাদকের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, সব তদন্ত কর্মকর্তার প্রধান টার্গেট থাকে কোনো মামলায় যথাযথ সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করে আসামির শাস্তি নিশ্চিত করা। পুলিশই যথাসাধ্য চেষ্টা করে মাদকসহ অন্যান্য অপরাধের ঘটনায় যথাযথ সাক্ষ্য-প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করতে। আসামির শাস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা অনেকটাই আদালতের ব্যাপার।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক আতোয়ার রহমান বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। দেশে কত শিশু মাদকাসক্ত, এর পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই। তবে পথশিশুদের মাদকাসক্তি থেকে ফিরিয়ে আনতে অধিদফতরে শিশুদের আলাদা একটি ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। সেখানে তাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার কাজ চলছে। এর পাশাপাশি সব মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর হবার জন্য কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের চিন্তাও করা হচ্ছে। শিশুরা যাতে নেশায় জড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য একটি আইন করার প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠান হয়েছে। আইন প্রণয়নের পরে যারা এগুলো মাদক হিসেবে ব্যবহার করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া সিসাকে মাদকদ্রব্য হিসেবে গণ্য করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সুত্রঃ পরিবর্তন