প্রতারণাই জেন গ্রামীণ ফোনের কাজ!

0

Grameenphone_logo5বেশ কয়েক মাস ধরে অনিয়মিতভাবে চলছিলো +২৪৩… থেকে আসা কলের ডিজিটাল প্রতারণা। যার ফলে কৌশলে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রতারকরা প্রথমে গ্রাহকের মোবাইলে মিসড কল পাঠায় বা কল করে। পরে গ্রাহক ওই নাম্বারে কল ব্যাক করার সাথে সাথে মোবাইল একাউন্ট থেকে মোটা অঙ্কের ব্যালেন্স কেটে নেওয়া হয়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের পকেট কাটার ঘটনা ঘটছে গ্রামীনফোন গ্রাহকদের সাথে। দেশে তাদের গ্রাহক সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি। গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে এই প্রতারণা নিয়ে বেশ কিছু ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে পরিবর্তন। এর পরই তোলপাড় পড়ে সারাদেশে। এরপর কিছুদিন বন্ধও ছিলো এই প্রতারণা।

সম্প্রতি গ্রামীণ ফোন এ ব্যাপারে গ্রাহকদের সতর্ক থাকার জন্য সংবাদমাধ্যমে বড় বড় বিজ্ঞাপনও দেয়।

বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, অপারেটর কোম্পানিগুলোর কারো সহযোগিতা ছাড়া কোনোভাবেই ব্যালান্স বাইরের দেশে চলে যেতে পারে না। অপারেটরগুলোর মধ্যে গ্রামীণ ফোন হলো সবচেয়ে বড় কোম্পানি। তাদের কেউ অবশ্যই এই মহাপ্রতারণার সাথে জড়িত।

যেভাবে বিদেশি চক্র হাতিয়ে নেয় টাকা : যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতারকদের নম্বরে কল ব্যাক করলে যে টাকা কেটে নেওয়া হয় তা তাদের হাতে যেতে হলে কতকগুলো প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। এ জন্যে দেশীয় ফোন অপারেটের সাথে চুক্তি করতে হয়। সেই চুক্তি মোতাবেকই তারা ওই অর্থের নির্ধারিত একটি অংশ পায়।

বেশিরভাগ ফোন কোম্পানি কিছু প্রিমিয়ার নম্বর রেখে থাকে। এই নম্বর ব্যবহার করে যার কাছে ফোন যায় তাকে একটি সার্ভিস চার্জ দিতে হয় ফোন কোম্পানিকে। কারণ ফোন কোম্পানি এ স্ক্যামিংয়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ খুব সহজেই পেয়ে থাকে। আর চুক্তি মোতাবেক ওই নম্বরের মালিককে অর্থ দিয়ে থাকেন তারা। আর এই ফোনগুলোর চার্জের ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম বা প্রিমিয়ার নম্বরের মালিক যে চার্জ নির্ধারণ করে, ফোন কোম্পানিগুলো সেই চার্জই কাটে মোবাইল ব্যালান্স থেকে।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কম্পিউটার অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স’-এর সহকারী অধ্যাপক রাগিব হাসান প্রতারণাটি কীভাবে ঘটে- তার একটি বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি এর নাম দিয়েছেন ‘ফোন ফ্রড।’

রাগিব হাসান বলেন, ”ফোন ফ্রডের মধ্যে 809 scam বা Wangiri scam বেশ চালু সারা বিশ্বে, সম্প্রতি বাংলাদেশেও এটা ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যাপারটা বোঝার আগে ফোন সিস্টেমের বিলিং চার্জ কীভাবে হয়, তা একটু ব্যাখ্যা করি। অনেক ফোন কোম্পানিই প্রিমিয়াম নাম্বার রাখে, যেখানে ফোন করলে ‘নর্মাল’ চার্জের পাশাপাশি মিনিট প্রতি ‘সার্ভিস’ চার্জ দেয়া লাগে ওই নম্বরের মালিককে। আন্তর্জাতিক কলের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আরো গোলমেলে। ধরুন, আপনি গ্রামীণ ফোন থেকে কল করলেন বিদেশের কোনো নম্বরে। সেখানে ফোন করার জন্য গ্রামীণ আপনাকে যা বিল করবে, তার একটা অংশ পাবে যেই নম্বরে ফোন গেছে, সেই ফোন কোম্পানি। আর যদি ওই নম্বরটা প্রিমিয়াম নম্বর হয়, তাহলে তো কথাই নাই, ফোন নম্বরের মালিক ইচ্ছামত যা চার্জ করে, গ্রামীণ আপনাকেও সেই চার্জ করবে। পুরো ব্যাপারটা আইন মোতাবেকই হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, ”এখন এই সিস্টেমটাকে কাজে লাগিয়ে অনেক প্রতারক নতুন ধান্ধা খুলে বসেছে। অসাধু ফোন কোম্পানির সহায়তায় তারা প্রিমিয়াম নম্বর খুলে বসে। তারপর অটোডায়ালার সফটওয়ার দিয়ে মিস কল দিতে থাকে অন্য দেশের নানা জায়গায়। যেহেতু কল করতে হচ্ছে না, তাদের খরচ নাই আদৌ। আর সফটওয়ার দিয়ে অটো ডায়াল করাতে দিনে হাজার হাজার এমন মিস কল দিতে পারে। এমন হাজারটা মিস কল দিলে কেউ না কেউ আগ্রহ বশত কল রিটার্ন তো করবেই, তাই না? ব্যস। এরা পেয়ে বসলো। আন্তর্জাতিক কলের জন্য আপনাকে তো দিতে হবে রেট অনুযায়ী চার্জ, তার উপরে সেই প্রিমিয়াম নম্বরের ধান্ধাবাজ মালিক যা রেট ধরে রেখেছে, আপনাকে সেটাও দিতে হবে। বলাই বাহুল্য, সেই চার্জটা আকাশ ছোঁয়া।”

আর এক্ষেত্রে স্ক্যামিং গ্রুপগুলো এই সুযোগটিই কাজে লাগায়। বিশেষ করে বিদেশি নম্বর থেকেই এ ধরনের স্ক্যামিং ফাঁদ পাতা হয়।

দেখা গেছে, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্যই কয়েক শত টাকা চার্জ ধরে বসে কোম্পানিটি। সেই চার্জ অনুযায়ী ফোনকারীর ব্যালান্স থেকে টাকা কাটা যায়। এই হাতিয়ে নেয়া টাকাই ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয় দু’পক্ষ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এ ধরনের ফোন স্ক্যামিংয়ের ঘটনা ঘটে আসছে। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে শুরু করে জাপান, ব্রিটেনেও এ ঘটনার শিকার হয়েছেন গ্রাহকরা। ব্রিটেনের পত্রিকা ডেইলি মিরর এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করে গ্রাহকদের সর্তক করা হয়েছে।

গ্রামীনফোনের অবস্থান : সম্প্রতি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহকদের ফোন স্ক্যামিং বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে গ্রামীণ ফোন। একই সাথে তারা এটাও বলেছে যে, এ ধরণের কল রুখতে তাদের কিছু করার নেই।

এই কথার বাইরে কোম্পানিটির কোনো কর্মকর্তা বক্তব্য দিচ্ছেন না।

এর ফলে স্পষ্টতই সন্দেহের তীর যাচ্ছে গ্রামীণ ফোনের দিকেই। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, এ নিয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য করছে না সরকার বা ফোন কোম্পানির নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি-ও। এখন পর্যন্ত জানা যায়নি এতো টাকা কিভাবে পাচার হলো বা এর সাথে কারাই বা সংশ্লিষ্ট।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More