প্রাণের ম্যাংগো জুস ফ্রুটোয় উচ্চমাত্রায় ফরমালিন ও ভেজালের কারণে ২০১২ সালের ১৩ অক্টোবর ৩১ কোম্পানির বিভিন্ন সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম) লাইসেন্স বাতিল করে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই)।
কোম্পানিগুলোর মধ্যে ছিল—প্রমি এগ্রো ফুডস লিমিটেডের ফ্রুট ড্রিংকস (লিচি, অরেঞ্জ), এগ্রিকালচার মার্কেটিং কোম্পানি লিমিটেডের উৎপাদিত প্রাণ ফ্রুটো ড্রিংকস (ম্যাংগো, অরেঞ্জ, লেমন, স্ট্রবেরি, লিচি, আপেল, পাইনঅ্যাপেল, ফ্রুটককটেল), মডার্ন ফুড প্রডাক্টস লিমিটেডের মডার্ন ফ্রুট ড্রিংকস, সাফা কনজিউমার প্রডাক্টস লিমিটেডের ফ্রুটড্রিংকস (রকস্টার, মিক্সড ফ্রুট), নিউট্রি এগ্রো ফুডসেরনিউট্রি ফ্রুট ড্রিংকস (অরেঞ্জ), আরা ফুডস লিমিটেডের ফ্রুট ড্রিংকস, আরএমপি ম্যানুফ্যাকচারিং প্রাইভেট লিমিটেডের আরএমপি ফ্রুট ড্রিংকস।
২০১৩ সালে জুসের সংজ্ঞাই পরিবর্তন করে বিএসটিআই। নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী জুস এখন ফ্রুট ড্রিংকস নামে বিক্রি হচ্ছে। এবার জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় দেখা গেছে, এসব ফ্রুট ড্রিংকসও জনস্বাস্থ্যের জন্য একেবারেই নিরাপদ নয়।
২০১২ সালে উৎপাদিত (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) দেশের বিভিন্ন কোম্পানির ৭২টি ফ্রুট ড্রিংকস ও জুসের নমুনা পরীক্ষা করে। শতভাগ নমুনাতেই মাত্রাতিরিক্ত এসিটিক এসিড পাওয়া গেছে। এসব ভেজাল ড্রিংকস পান করায় মানুষ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
ফ্রুট ড্রিংকস ও জুসে এসিটিক এসিডের পরিমাণ ১ শতাংশের নিচে থাকার কথা। কিন্তু পরীক্ষায় ৭২টি ড্রিংকসেই এসিটিক এসিড মিলেছে চার থেকে পাঁচ শতাংশ।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে। মন্ত্রণালয় শিগগিরই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান শুরু করবে বলে সচিব জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) খাদ্যবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট ২০১০ সালে বিভিন্ন কোম্পানির ৯ ধরনের জুস পরীক্ষা করে। এতে দেখা যায়, জুসে ৯ থেকে১৩.৫ শতাংশ দ্রবণীয় কঠিন বস্তু রয়েছে। এর গ্রহণযোগ্য মাত্রা ২-৫ শতাংশ।
শিশুদের কাছে প্রিয় এসব ‘জুসে’ ক্ষতিকর মাত্রায় সালফার ডাইঅক্সাইড বা সোডিয়াম বেনজয়েটেও পাওয়া যায়।
২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ বাজার থেকে ৭ ধরনের জুস ও ফ্রুট ড্রিংকস সংগ্রহ করে। পরীক্ষায় পর তারা দেখতে পায়, এতে সালফার ডাইঅক্সাইড বা সোডিয়াম বেনজয়েট রয়েছে ৪০-৫০ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন)। যার গ্রহণযোগ্য মাত্রা সর্বোচ্চ ১০ পিপিএম।
বিশেষজ্ঞরা জানান, এসিডের মাত্রা বেশি থাকলে বদহজম হয়। এছাড়া খাবারে অরুচি দেখা দেয়। এর সাথে গ্যাস্ট্রিক বেড়ে যায়। আর জুসের কৃত্রিম রঙ ও ফ্লেভার কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত করে।